You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.28 | গোপালাশ্রম-চিথোলিয়া গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা) - সংগ্রামের নোটবুক

গোপালাশ্রম-চিথোলিয়া গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা)

গোপালাশ্রম-চিথোলিয়া গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা) সংঘটিত হয় ২৮শে এপ্রিল। কেন্দুয়া থানা সদর থেকে প্রায় ৪ কিমি দূরবর্তী ১১নং চিরাং ইউনিয়নে গোপালাশ্রম ও চিথোলিয়া দুটি হিন্দু অধ্যুষিত প্ৰসিদ্ধ গ্রাম। কেন্দুয়া থেকে চিরাং বাজার-কিশোরগঞ্জ-তাড়াইল রাস্তা থেকে পূর্বদিকে গ্রামদুটির অবস্থান। ঐদিন গোপালাশ্রম ও চিথোলিয়া গ্রামের মোট ১৪ জন নিরীহ মানুষ গণহত্যার শিকার হন।
ঘটনার দিন দুপুরে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় কেন্দুয়া সদর থেকে এসে একদল পাকসেনা -রাজাকার-দের নিয়ে গোপালাশ্রম ও চিথোলিয়া গ্রামে হানা দেয়। প্রথমেই তারা গোপালাশ্রম গ্রামে ঢুকে চিরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাক্তার ধীরেন্দ্র সরকারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ-সময় গ্রামের হিন্দু-মুসলমান নারী- পুরুষ সবাই প্রাণভয়ে পালাতে থাকে। অনেকে নৌকা নিয়ে গ্রামের পূর্বদিকের জালিয়ার হাওরের দিকে পালাতে থাকে। হানাদাররা এ পলায়নপর মানুষদের ওপর গুলিবর্ষণ করে।
সেদিন পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে গোপালাশ্রম গ্রামের নিহত ব্যক্তিরা হলেন- দীনেশ চন্দ্র দে (পিতা রজনী দে), বৌলজান (স্বামী মামুদ আলী, গোপালাশ্রম), মিছির আলী (পিতা শান্তু মিয়া), মনা মিয়া (পিতা আলী হোসেন), রাশিদা আক্তার (পিতা ছবুর হোসেন), রাহেলা আক্তার (পিতা ছবুর হোসেন), শহর বানু (পিতা ফজু মিয়া), গোলজান (পিতা দিল মাসুদ) এবং রূপবানু (স্বামী আব্দুর রশিদ)। এখানে পাড়া চক্রকান্দি গ্রামের আব্দুর রাশিদ (পিতা জবান হোসেন) নিহত হন। এদিন পাকবাহিনীর গুলিতে গোপালাশ্রম গ্রামের দফাদার কালীদাসের বৃদ্ধা মা, চক্রকান্দি পাড়ার রাশিদা খাতুন (স্বামী আরফত আলী), পারভীন আক্তার ও এখতের বানু গুলিবিদ্ধ হন।
গোপালাশ্রম গ্রামের হত্যাকাণ্ডের পর পাকহানাদার বাহিনী রাজাকারদের নিয়ে চিথোলিয়া গ্রামের প্রসিদ্ধ পাল চৌধুরী বাড়ির প্রাচীন মন্দির ও অনেক ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এরপর তারা বাড়িতে লুণ্ঠন চালায়। ঢাকায় চাকরিরত এ বাড়ির আশুতোষ পাল চৌধুরী (পিতা পূর্ণ চন্দ্র পাল চৌধুরী; ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুলের স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক)-কে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায়। তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। তারা এ পরিবারের ধীরেন্দ্র পাল চৌধুরী (পিতা গিরিশ পাল চৌধুরী), বিনোদ পাল চৌধুরী (পিতা ধীরেন্দ্র পাল চৌধুরী), রাধাকান্ত পাল চৌধুরী (পিতা ধীরেন্দ্র পাল চৌধুরী) ও সঞ্জীব পাল চৌধুরী (পিতা আশুতোষ পাল চৌধুরী)-কে হত্যা করে। গোপালাশ্রম ও চিথোলিয়া হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন কেন্দুয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি লোমহর্ষক ঘটনা। [সন্তোষ সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড