You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোবিন্দপুর গণহত্যা (খানসামা, দিনাজপুর)

গোবিন্দপুর গণহত্যা (খানসামা, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ১৩ই ডিসেম্বর। এতে ৮ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। গোবিন্দপুরের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করত বলে পাকসেনারা প্রতিশোধ নিতে এ গ্রামে আক্রমণ করে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণহত্যা চালায়।গোবিন্দপুর আলোকঝারি ইউনিয়নের একটি বড় মৌজা, যা পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত। পশ্চিম গোবিন্দপুরের সূচনা আত্রাই নদীর বর্তমান জিয়া সেতু সংলগ্ন পশ্চিম তীর থেকে এবং পূর্ব গোবিন্দপুরের শুরু এ সেতুর পূর্ব তীর থেকে। পশ্চিম গোবিন্দপুরের পুরো অংশটি ‘গোবিন্দপুর’ নামে পরিচিত। পক্ষান্তরে পূর্ব গোবিন্দপুরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন পাড়ার নামে পরিচিত। গোবিন্দপুরের যেখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়, সে স্থানের অবস্থান জিয়া সেতুর পশ্চিম দিকের পশ্চিম প্রান্তে আত্রাই নদীর তীরে। পশ্চিম গোবিন্দপুরের উত্তরে ওস্তাপাড়া, জালিয়াপাড়া, বীরগঞ্জের করিমপুর, দক্ষিণে মোহনপুর, পূর্বে আত্রাই নদী, পশ্চিমে তুলশীপুর গ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় এসব গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন সময়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। এ গ্রামগুলোর বেশির ভাগ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়।
গোবিন্দপুরের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬-দফার পক্ষে আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং যুদ্ধ শুরুর পর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। মুক্তিবাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে এসে তারা নদীর তীরে বাংকার খুঁড়ে দেয়। পাকিস্তানি হানাদাররা মুক্তিবাহিনীর পক্ষে গোবিন্দপুরের মানুষের কার্যক্রমের কথা জানতে পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এ গ্রামে হানা দেয়। তারা ১৩ই ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে গ্রাম ঘেরাও করে ৮ জন ব্যক্তিকে আটক করে। কাজ করার কথা বলে তাদের নদীতীরবর্তী বাংকারের কাছে নিয়ে যায়। এসব বাংকার গোবিন্দপুরের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছিল। সেখানে তাদের একটি বাংকারের কাছে লাইন ধরে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর পেছন দিক থেকে তাদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে সবাই বাংকারের ভেতরে পড়েন এবং তাৎক্ষণিকভাবে ৭ জন নিহত হন। একজন গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত অবস্থায় সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হলেও কয়েক দিনের মধ্যে সে মারা যায়। গোবিন্দপুর গণহত্যায় নিহতদের মধ্যে ৪ জন সহোদর ভাই ছিলেন। আব্দুল করিম প্রামাণিকের এ চার পুত্র হলেন- আব্দুল জলিল প্রামাণিক, আব্দুল হাকিম প্রামাণিক, হযরত আলী প্রামাণিক ও মো. নাসিরউদ্দিন প্রামাণিক ওরফে নওশের। এখানে নিহত অন্য ৪ জন হলেন- সন্দেশ আলী (পিতা আব্দুর রহমান মোল্লা), মো. ছকিউদ্দিন (পিতা দরিপদ আলী), মখদুম মোল্লা (পিতা বাবর আলী মোল্লা) ও আমিনুল ইসলাম প্রধান (পিতা নজিমউদ্দিন প্রধান)। গোবিন্দপুরে নিহত পরিবারগুলোকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর সমবেদনা পত্র ও দুহাজার টাকার চেক পাঠিয়েছিলেন। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!