You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.06 | গোমতী নদীতে স্পিডবোট অপারেশন (দাউদকান্দি, কুমিল্লা) - সংগ্রামের নোটবুক

গোমতী নদীতে স্পিডবোট অপারেশন (দাউদকান্দি, কুমিল্লা)

গোমতী নদীতে স্পিডবোট অপারেশন (দাউদকান্দি, কুমিল্লা) পরিচালিত হয় ২ বার – প্রথমে ৬ই জুলাই এবং পরে ১৩ই জুলাই। অপারেশন দুটিতে পাকিস্তানি বাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয় এবং তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানা এলাকা ২নং সেক্টরের অধীনে ছিল। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের সড়কপথে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ মহাসড়ক দাউদকান্দির ওপর দিয়ে চলে গেছে। দাউদকান্দি এলাকা গোমতী নদীবাহিত। যুদ্ধের কৌশলগত কারণে হানাদার বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী – উভয়ের জন্যই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন গোমতী নদী ও এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লঞ্চ ও স্পিডবোটের মাধ্যমে গোমতী নদীতে নিয়মিত টহল দিত। এ নদীপথে তারা দাউদকান্দি থেকে হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর এলাকায় অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ করত। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি ২নং সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নজরে আনেন। খালেদ মোশাররফ গোমতী নদীতে যাতায়াতকারী পাকহানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত রাখতে অভিযানের নির্দেশ দেন।
৬ই জুলাই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল হাবিলদার গিয়াসের নেতৃত্বে দাউদকান্দি থানার অন্তর্গত মাসিমপুর বাজারের আধামাইল পশ্চিমে জয়পুর গ্রামে গোমতীর শাখা নদীর পারে এম্বুশ করেন। সকাল ১০টায় পাকিস্তানি সেনাদের দুটি লঞ্চ দাউদকান্দির দিক থেকে গোমতী হয়ে শাখা নদীতে আসে। লঞ্চগুলো এম্বুশের সামনে এসে পড়তেই মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এম্বুশ দলের প্রচণ্ড গুলিবর্ষণে পাকিস্তানি সেনাদের লঞ্চগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ২০-২৫ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। এ অবস্থায় তারা লঞ্চগুলো নিয়ে পিছু হটে দাউদকান্দির দিকে পালিয়ে যায়। এ অপারেশনের ফলে পাকিস্তানি সেনারা এ অঞ্চলে তাদের যাতায়াত কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তৃত্ব ও স্থানীয় লোকজনের মনোবল বেড়ে যায়।
সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নির্দেশে ১৩ই জুলাই রাতে মুক্তিযোদ্ধারা গোমতী নদীতে পাকহানাদার বাহিনীর টহলরত স্পিডবোটে পুনরায় অপারেশন চালান। জুলাই মাসে পাকিস্তানি সেনারা দাউদকান্দি ফেরিঘাটের কাছে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে প্রায় দুই কোম্পানির মতো পাকিস্তানি সেনা বাংকার নির্মাণ করে ঘাঁটিটি শক্তিশালী করে তোলে। তারা ঢাকা-কুমিল্লাগামী প্রতিটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে অনুসন্ধান চালাত। তাছাড়া স্পিডবোটে চড়ে নিকটবর্তী এলাকা টহল দিত। অপারেশনের উদ্দেশ্যে ২ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা দাউদকান্দিতে গিয়ে গৌরীপুর নামক স্থানে ঘাঁটি তৈরি করেন। এরপর শত্রুদের গতিবিধি সম্পর্কে খবর নিয়ে ১৩ই জুলাই রাত ৮টায় মুক্তিযোদ্ধারা দাউদকান্দির উত্তরে গোমতী নদীতে পাকিস্তানি সেনাদের টহলরত একটি স্পিডবোটকে এম্বুশ করেন। এতে একজন লেফটেন্যান্টসহ ২১ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে হেডকোয়ার্টার্সে ফিরে আসেন। [বাশার খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড