You dont have javascript enabled! Please enable it! গোদাগাড়ি যুদ্ধ (পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও) - সংগ্রামের নোটবুক

গোদাগাড়ি যুদ্ধ (পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও)

গোদাগাড়ি যুদ্ধ (পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও) সংঘটিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমদিকে। এতে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে পরিচালিত এ-যুদ্ধে ৫৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ী হন। তবে তাঁদের ৩ জন সহযোদ্ধা শত্রুর গুলিতে আহত হন।
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী গোদাগাড়িতে পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প ছিল। ভৌগোলিক কারণে এ ক্যাম্প পাকসেনাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ থেকে দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের কিছু অংশ এবং পুরো ঠাকুরগাঁওকে রক্ষা করার জন্য পাকবাহিনী এখানে ব্যাপক শক্তির সমাবেশ ঘটায়। গোদাগাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের সীমানার মধ্যে ছিল মালন ক্যাম্প। এখানে ভারতের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং বাংলাদেশের ভেতরে প্রেরণের কাজ তদারকি করা হতো। পাকসেনাদের ভয় ছিল যে, এখান থেকে তাদের ওপর আক্রমণ হতে পারে। এজন্য গোদাগাড়ি ক্যাম্প এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তারা খুব তৎপর ছিল। সমগ্র এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেও গোদাগাড়ি পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণ করা কৌশলগত দিক থেকে খুব জরুরি ছিল। এ কারণে উভয়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটিতে কয়েকবার যুদ্ধ হয়। পূর্বে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ওপর হামলা ও শেল নিক্ষেপ করলেও কখনো সফলতা আসেনি।
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর মালন ক্যাম্পের দায়িত্ব নেয়ার পর গোদাগাড়ি ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি নিজে আনিস হাওলাদার, সফি হাওলাদার, মোস্তাফিজুর হাওলাদার এবং গণি হাওলাদারকে নিয়ে ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী স্থানগুলো রেকি করেন। এরপর একটি বড় দল নিয়ে আক্রমণ করেন। প্রথমে নিজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দলে বিভক্ত করে ক্যাম্প ঘিরে ফেলেন। কিন্তু
রাজাকার- ডা. মান্নান, হান্নান ও কুদ্দুসের মাধ্যমে আগেই খবর পেয়ে পাকসেনারা ১২টি বাংকারে পজিশন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ফায়ার শুরু করে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র গোলাগুলির সম্মুখীন হন। তবে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে তাঁরা চারপাশ থেকে পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলে। মর্টার শেল নিক্ষেপ এবং রাইফেল, মেশিনগান ও স্ট্যানগানের গুলি বিনিময় হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মানিক ওলিউল্লাসহ ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা করিম, মোবারক এবং জমিরউদ্দীন গুলিবিদ্ধ হন। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর কয়েকটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়। এখানে ৫৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় পাকসেনাদের মনোবল ধ্বংস এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের উজ্জ্বীবিত করে। [মো. আসাদুজ্জামান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড