You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। প্রতিটি উপজেলা হয়ে ওঠে এক একটি যুদ্ধক্ষেত্র। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে গোপালগঞ্জ মহকুমা (বর্তমান জেলা)-র প্রতিটি মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ ও কৌতূহল দেখা দিয়েছিল। কারণ বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান ছিল এই মহকুমায়। ৭০-এর নির্বাচনের পর পাকিস্তানি শাসকদের ষড়যন্ত্রের প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭১-এর ২রা মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেয়। এরপর তাঁর ৭ই মার্চের দিকনির্দেশনাপূর্ণ ভাষণ ৮ই মার্চ বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত হলে এখানকার ছাত্র-জনতার মধ্যে দারুণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য তারা তৎপরতা শুরু করে। মোল্লা জালালউদ্দিন আহমেদ এমএনএ এবং শেখ মোশাররফ হোসেন (খান সাহেব) এমপিএ-র নেতৃত্বে গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এর পরপরই আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের নেতৃত্বে গোপালগঞ্জের ছাত্র- জনতা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। গোপালগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. ফরিদ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নজীর আহমেদ তালুকদার, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান লেবু মিয়া এবং ন্যাপ নেতা ডা. রমানাথ বিশ্বাস সকলকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এছাড়া এডভোকেট কাজী আব্দুর রশিদ, কামরুল ইসলাম রইস, আবুল হাসেম সমাদ্দার, মো. সাইদুর রহমান (চাঁদ মিয়া মোক্তার), আক্তার হোসেন মোক্তার, বিজয় কুমার সিকদার প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ক্যাপ্টেন হালিম, ক্যাপ্টেন সিহাব উদ্দিন, ক্যাপ্টেন জালাল, ক্যাপ্টেন মিলু, ক্যাপ্টেন ইকবাল, ক্যাপ্টেন সোবাহান, ইসমাত কাদির গামা, কমান্ডার শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু চৌধুরী, এমদাদুল হক ও আব্দুল লতিফ গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরপরই গোপালগঞ্জে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খোলা হয়। ক্যাম্প ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন মো. সাইদুর রহমান (চাঁদ মিয়া মোক্তার)। বঙ্গবন্ধু কলেজ (তৎকালীন কায়েদ-ই-আযম মেমোরিয়াল কলেজ) মাঠ ও যুগশিখা ক্লাব মাঠে ছাত্র- যুবকদের ডামি রাইফেল ও বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ওয়ালিউর রহমান লেবু মিয়া এবং যুগশিখা ক্লাবের সভাপতি আবু হোসেন। এতে কোকো রেজা ও পারুল নামে ২ জন নারী প্রশিক্ষণার্থীও অংশ নেন।
১৬ই মার্চ গোপালগঞ্জ সদরে ছাত্রবিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়। ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ-সময় আদালত ভবন থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শওকত চৌধুরী ও জাকির হোসেন খসরু। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা ডা. ফরিদ আহমেদ, শেখ আব্দুল লতিফ, কামরুল ইসলাম রইস, হাশেম সমাদ্দার, নজির আহমদ তালুকদার, সরদার রহমত জান, ওহাব খান, আক্তারউদ্দিন মিয়া, ন্যাপ নেতা ডা. রমানাথ বিশ্বাস প্রমুখের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্রামগঞ্জ থেকে খাদ্যশস্য, ধান ও অর্থ সংগ্রহ করা হতো। সংগৃহীত খাদ্যশস্য প্রফুল্ল শিকদারের বাড়িতে মজুদ রাখা হতো এবং সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তা সরবরাহ করা হতো। ২৬শে মার্চ ছাত্র-জনতা গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইন ও বৌলতলী পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। শহরের প্রবেশদ্বার মানিকদাহ ঘাটে গড়ে তোলা হয় সম্মিলিত প্রতিরক্ষাব্যূহ। ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন ইপিআর সদস্যও এতে যোগ দেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন শেখ লুৎফর রহমান ওরফে বাচ্চু চৌধুরী। গোপালগঞ্জ মহকুমা মুজিব বাহিনী-র কমান্ডার ছিলেন ইসমত কাদির গামা। কোটালীপাড়া উপজেলার হেমায়েত বাহিনী-র প্রধান হেমায়েত উদ্দিন, বীর বিক্রম ও গোপালগঞ্জ সদরে যুদ্ধ পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে ক্যন্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে আসা ক্যাপ্টেন জালাল আহম্মেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গোপালগঞ্জ শহরের ট্রেজারি ভেঙ্গে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। অস্ত্র সংগ্রহের পর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে মুক্তিফৌজ গঠিত হয় এবং খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ আসার সম্ভাব্য পথ মানিকদাহ ও পোদ্দারের চর কাটাগাঙ এলাকায় ডিফেন্স লাইন তৈরি করা হয়। ১০০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা সেখানে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৩০শে এপ্রিল মেজর ঘোরীর নেতৃত্বে পাকবাহিনী গোপালগঞ্জ শহরে অনুপ্রবেশ করে এবং সদর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে (তৎকালীন সিও অফিসে) মিনি ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করে।
পাকবাহিনীর সহযোগিতায় মুসলিম লীগ, নেজামে
ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘ-এর নেতা-কর্মীরা শহরে শান্তি কমিটি – ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতা শুরু করে। গোপালগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির সভাপতি ছিল মুসলিম লীগের নেতা শারাফত হোসেন চৌধুরী। সদরে পাকবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় দোসর ছিল মুসলিম লীগের ওয়াহিদুজ্জামান ঠান্ডা মিয়া (কেন্দ্রীয় নেতা ও তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী)। রাজাকারদের মধ্যে কাফু মিয়া, লাল মিয়া, বড় মিয়া, মনি মিয়া, হেমায়েত, আবদুর রব, আরজ আলী, নেজামে ইসলামীর নেতা মওলানা হোসাইন আহম্মেদ, গেপালগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার আবদুল মজিদ, কায়েদ-ই-আযম মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যাপক আকরাম উদ্দিন, এডভোকেট টি রহমান, দবির উদ্দিন আজাদ, আফসারউদ্দিন প্রমুখ খুবই তৎপর ছিল।
পাকবাহিনী ৩০শে এপ্রিল গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে নৃশংস তাণ্ডবলীলা চালায়। ব্যাংকপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, চৌরঙ্গীর আব্দুল লতিফের বাসভবন, আওয়ামী লীগ অফিস, স্বর্ণপট্টি চৌরঙ্গীমোড়, সাহাপাড়া বাজার রোড ও হীরাবাড়ি রোডসহ আশপাশের গ্রামের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় মানিকহার গ্রামে হামলা চালায়। এ-সময় তারা তৎকালীন কায়েদ-ই আযম মেমোরিয়াল কলেজের (বর্তমান বঙ্গবন্ধু কলেজ) দর্শনের প্রভাষক সন্তোষ কুমার দাসকে হত্যা করে। তারা মানিকহার, বৌলতলী, সাতপাড় ও গান্ধিয়াশুর গ্রামে হামলা চালিয়ে লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালায়। পাকবাহিনী পাইককান্দি গ্রামে নওশের আলী চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকে তাকেসহ মোট ১৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা পাইককান্দির পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ার তাহাজ্জদ আলী মাস্টার ও আফসার আলী চৌধুরীসহ বহু লোককে হত্যা করে। হত্যার এসব ঘটনা পাইককান্দি গণহত্যা নামে পরিচিত। রাজাকার রঙ্গু সিকদারের প্রোরোচনায় পাকসেনারা মানিকহারের বাদশা মোল্যার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা বাদশা মোল্যা ও তাঁর কয়েকজন নিকট আত্মীয়সহ ৮ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে, যা মানিকহার গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। পরবর্তীতে তারা বাদশা মোল্যার ছেলেকে পেছন দিক থেকে গুলি করে হত্যা করে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের মিনি ক্যান্টনমেন্টই ছিল পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির। পাকবাহিনী বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে এখানে বন্দি করে নির্যাতন ও হত্যা করত। নারীদের ধরে এনে তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের মিনি ক্যান্টনমেন্টের পাশের পদ্মপুকুর (বর্তমান জয়বাংলা পুকুর) পাড় ছিল পাকবাহিনীর বধ্যভূমি। জয়বাংলা পদ্মপুকুর বধ্যভূমি-তে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের ধরে এনে হত্যা করা হতো।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মানিকহার, ঘোড়াদাইর, পাইককান্দি ও কেকানিয়ায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। ৭ই এপ্রিল পাকবাহিনী মানিকহার গ্রাম আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন হালিম ও ক্যাপ্টেন মিলুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। মানিকহার যুদ্ধে মনি শিকদার ও অন্য আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ই ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- এস এম ইমদাদুল হক, বীর উত্তম (পিতা এস এম এ মালেক, মাটলা), মো. আশরাফ আলী খান, বীর বিক্রম (পিতা আব্দুস সোবহান খান, পশ্চিম নিজরা, উলপুর), লুৎফর রহমান, বীর প্রতীক (পিতা মুন্সী সাইদুর রহমান, গোবরা, ভাটিয়াপাড়া), আবুল বাশার, বীর প্রতীক (চন্দ্ৰ দিঘলিয়া) ও মোক্তার আলী, বীর প্রতীক (পিতা আজহার উদ্দিন শেখ, ঘোষেরচর)।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- এস এম ইমদাদুল হক, বীর উত্তম (৭ই নভেম্বর ধামাই চা-বাগান যুদ্ধে শহীদ), মো. আশরাফ আলী খান, বীর বিক্রম (আখাউড়া যুদ্ধে শহীদ), মাহাবুবুর রহমান চাঁদ মিয়া চৌধুরী (পিতা মুনছুর আলী চৌধুরী, গোবরা), গুলজার হোসেন চৌধুরী (পিতা আহম্মদ হোসেন চৌধুরী, গোবরা), হারুনার রশিদ মোল্লা (পিতা আব্দুল রাজ্জাক মোল্লা; প্রধান শিক্ষক, মানিকহার সপ্তপল্লী হাজি খোরশেদ উচ্চ বিদ্যালয়), আসাদ সরদার (পিতা আব্দুল খালেক সরদার, শশাবাড়িয়া), মোসলেম শেখ (পিতা আব্দুল জব্বার শেখ, শশাবাড়িয়া), বালা মোল্লা (পিতা মোজাম মোল্লা, শশাবাড়িয়া), আব্দুল বারেক শেখ (পিতা আদম শেখ, শশাবাড়িয়া), ইউনুছ আলী সিকদার ওরফে মনি মিয়া (পিতা মোশারফ হোসেন সিকদার, পাইককান্দি), দাউদ শেখ (পিতা আব্দুস সামাদ শেখ, পাইককান্দি), আফসার মোল্লা (পিতা আব্দুল গফুর মোল্লা, হরিদাসপুর), সুধীর রঞ্জন বিশ্বাস (পিতা নব কুমার বিশ্বাস, খাটরা), শচীন্দ্র নাথ বিশ্বাস (পিতা শশীচরণ বিশ্বাস, খাটরা), নারায়ণ মণ্ডল (পিতা বিচরণ মণ্ডল, খাটরা), সন্তোষ কুমার দাস (প্রভাষক, তৎকালীন কায়েদ-ই আযম মেমোরিয়াল কলেজ, বর্তমান বঙ্গবন্ধু কলেজ), আসাদ শেখ (পিতা ছলিম শেখ, ঘোষেরচর), মনি শিকদার (পিতা রুস্তুম শেখ, ঘোষেরচর), বেলায়েত শেখ (পিতা ইয়াকুব শেখ, মানিকদাহ), শচীন্দ্র নাথ বৈদ্য (পিতা কৃষ্ণধন বৈদ্য, ছোট ডোমরাশুর), আবু তারা কাজী (পিতা আন্দু কাজী, গোপীনাথপুর), মাহাবুব আলী খান (পিতা তবু খান, বেদগ্রাম), আব্দুল লতিফ ফকির (পিতা আরশাদ আলী ফকির, বেদগ্রাম), ডা. আব্দুল মান্নান মোল্লা (পিতা আব্দুল গনি মোল্লা, শুকতাইল), শওকত আলী উকিল (পিতা তাছির উদ্দিন উকিল, কলপুর), আব্দুল আলী গাজী (পিতা তোফাজ্জেল গাজী, আড়পাড়া), আলাউদ্দিন কাজী (পিতা আব্দুল খালেক কাজী, আড়পাড়া), আব্দুল মালেক মল্লিক (পিতা কলমদার মল্লিক, ঘোড়াদাইড়) এবং মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু (পিতা আবুবক্কার সিদ্দিক, মেরী গোপীনাথপুর)। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে গোপালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন পুকুর পাড়ে পদ্মপুকুর স্মৃতিসৌধ, সদরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নামসহ নির্মিত স্মৃতিফলক। শেখ মনি স্টেডিয়াম গেইটে ৭১-এর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক ও সাতপাড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে স্থাপন করা হয়েছে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য। গোবরায় শহীদ গোলজারের নামে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও শহীদ মাহাবুবের নামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কলেজে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ সন্তোষ কুমার দাস ছাত্রাবাস। এছাড়া গোপালগঞ্জ শহরে লেবু মিয়া স্মৃতি সংঘ, শহীদ লতিফ কিন্ডার গার্টেন ও মিরাজ খান ঠাকুর স্মৃতি সংসদ রয়েছে। [মনোজ কুমার সাহা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড