You dont have javascript enabled! Please enable it!

গোপালপুর থানাযুদ্ধ (গোপালপুর টাঙ্গাইল)

গোপালপুর থানাযুদ্ধ (গোপালপুর টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ৮ই অক্টোবর এবং ৮-১০ই ডিসেম্বর দু-দফায়। গোপালপুর টাঙ্গাইল জেলার একটি উপজেলা শহর। জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে এর অবস্থান। ১৯৭১ সালের ২রা মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোপালপুর থানায় ক্যাম্প স্থাপন করে। থানার পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রবহমান বৈরান নদী। আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম-এর নির্দেশে ৮ই অক্টোবর কোম্পানি কমান্ডার আবদুল হাকিমের নেতৃত্বে গোপালপুর এবং কোম্পানি কমান্ডার খন্দকার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভূঞাপুর থানামুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ৭ই অক্টোবর রাতে উভয় কোম্পানি কমান্ডার থানা দুটি শত্রুমুক্ত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। হাবিবুল হক খান বেনু ও কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল কোম্পানির কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা হাকিম কোম্পানিকে সহযোগিতা করেন। ৮ই অক্টোবর খন্দকার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভূঞাপুর হানাদারমুক্ত হলেও আবদুল হাকিম গোপালপুরকে হানাদারমুক্ত করতে ব্যর্থ হন। তবে হাকিম কোম্পানির একজন ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম লালু, বীর প্রতীক- চা দোকানের কর্মচারীর ছদ্মবেশে গোপালপুর থানায় প্রবেশ করে হানাদারদের ঘাঁটিতে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান। এতে ৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এ ঘটনার পর টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ থেকে অতিরিক্ত পাকসেনা এলে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন।
৬ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় বিপুল উদ্যমে যুদ্ধ শুরু করেন এবং একের পর এক এলাকা হানাদারমুক্ত করতে থাকেন। কাদেরিয়া বাহিনী-র অধিনায়ক কাদের সিদ্দিকীর নির্দেশে আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা ৮ই ডিসেম্বর গোপালপুরের পাশে সাইলাজানি ব্রিজ ধ্বংস করে গোপালপুর থানায় অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। গোপালপুর থেকে পাকবাহিনীকে উৎখাত করার জন্য সেদিন রাতেই ঘাটাইলের পাঁচটিকড়ী গ্রামে বসে চার কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ই ডিসেম্বর রাতে গোপালপুর গরুহাটি দিয়ে নূর হোসেন আঙ্গুর তালুকদারের কোম্পানি, বৈরান নদীর পশ্চিম পাড় থেকে আবদুল হাকিম ও বকুল কোম্পানি এবং নদীর পূর্ব পাড়ে পাট গুদামের পশ্চিম পাশ থেকে আসাদুজ্জামান আরজু কোম্পানি একযোগে আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি বাহিনী পাট গুদামের পাশে বাংকারে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। ৯ ও ১০ই ডিসেম্বর সারাদিন উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত আক্রমণে পাকবাহিনী টিকতে না পেরে রাতের অন্ধকারে গোপালপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গোপালপুর থানায় প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। যুদ্ধে দুজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং ১৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে।
গোপালপুর থানা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শহীদুল ইসলাম লালু, চাঁদ মিয়া, আবদুল লতিফ খান, আবদুল লতিফ মিয়া, শামছুল আলম প্রধান, আবদুর রহমান, জামাল উদ্দিন আকন্দ, সাহেব আলী, মোবারক হোসেন, শামসুল হক তালুকদার, ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা, আমজাদ হোসেন, আবদুল লতিফ মিলিটারি, আবদুল কাদের তালুকদার, আবদুস সোবাহান তুলা ও তারা মিঞার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!