You dont have javascript enabled! Please enable it! জামায়াতে ইসলামী অপরাধী সংগঠন - সংগ্রামের নোটবুক
জামায়াতে ইসলামী অপরাধী সংগঠন
জামায়াতে ইসলামীকে একটি অপরাধী সংগঠন বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গােলাম আযমের রায়ের পর্যবেক্ষণে এই মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দালিলিক প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, গােলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি অপরাধী সংগঠনের মতাে কাজ করেছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া অন্যান্য রায়েও মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে পাকিস্তানি সেনাদের সহযােগী বাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধকালীন নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের পাশাপাশি জামায়াতকেও দায়ী করেছেন। গােলাম আযম ছিলাে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির; কামারুজ্জামান, কাদের মােল্লা ও আবুল কালাম আযাদ ছাত্র সংঘের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাে। এ জন্য এই চারজনের বিরুদ্ধে রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরােধী অপরাধের সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, উপমহাদেশের ইতিহাস বলে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ই জামায়াত বিতর্কিত ভূমিকায় ছিল। ওই সময় জামায়াত সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। এই দুই রাষ্ট্র গঠনে দলটির কোনাে ভূমিকাই ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টির সময় জামায়াতের তৎকালীন আমির মাওলানা মওদুদী মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র। রাষ্ট্রের বিরােধিতা করেছিলাে। কিন্তু মুসলমানরা আলাদা রাষ্ট্রের আন্দোলন শুরু করলে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হয়। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী নিজেদের পাকিস্তানের একমাত্র ইসলামিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করে। এর পরে যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করে, তখনাে জামায়াতে ইসলামী এর তীব্র বিরােধিতা করে এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহায়তা করে। কিন্তু যখন ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছিল, তখনাে জামায়াত নিজেদের প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করে এবং যারা স্বাধীনতার পক্ষে ছিল, তাদের ভারতীয় চর হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে আরও বলেছেন, বিভিন্ন নথি ও সাধারণ ধারণা থেকে দেখা যায়, গােলাম আযমের নেতৃত্বে জামায়াত ও এর সহযােগী সংগঠনগুলাে প্রত্যক্ষভাবে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরােধিতা করে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে স্বাধীনতাবিরােধী চক্রটি এখনাে সক্রিয়। আর এর ফলে নতুন প্রজন্মের জামায়াত-সমর্থকেরাও মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্বাধীনতাবিরােধী এবং সাম্প্রদায়িক মানসিকতায় পুষ্ট ।
এটা একটি জাতির জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমাদের জাতির কাছে এমন কোনাে প্রমাণ নেই যে একাত্তরে জামায়াত যে স্বাধীনতাবিরােধী ভূমিকা। পালন করেছিল, তাদের সেই মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে এবং ৩০ লাখ শহীদের প্রতি সমবেদনা ও শ্রদ্ধার কোনাে নিদর্শন তারা এখনাে দেখায়নি। ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছে, একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তােলার স্বার্থে এ ধরনের স্বাধীনতাবিরােধীদের সরকারের কোনাে নির্বাহী পদে, সামাজিক ও রাজনৈতিক দলে এবং সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনে কোথাও ঠাই দেওয়া উচিত নয়। লাখ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক একটি দেশ গড়ার ক্ষেত্রে এসব উচ্চ পদে এই স্বাধীনতাবিরােধীরা যাতে কোনােভাবেই আসীন না হতে পরে, সে জন্য রাষ্ট্রকে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এর আগে জামায়াতের নেতা কামারুজ্জামানের রায়ে ট্রাইব্যুনাল-২ বলেন, মাওলানা সাইয়েদ আবুল আল-মওদুদীর মস্তিষ্কপ্রসূত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান রক্ষার নামে বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সর্বাত্মকভাবে সহযােগিতা করে। জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় আল-বদর বাহিনী, যা ছিল। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতের ‘অ্যাকশন সেকশন’ বা ‘আর্মড উইং’। কাদের মােল্লা ও আযাদের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে ট্রাইব্যুনাল-২ পর্যবেক্ষণে বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরােধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আধা সামরিক (প্যারামিলিটারি) বাহিনী আল-বদর । মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারাও নশংস অপরাধ ঘটায়। ওই দুটি রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে ছাত্র সংঘের সদস্য ও জামায়াতের প্রশিক্ষিত রুকনদের দিয়ে আল-বদর নামের আধা সামরিক বাহিনীটি গড়ে তােলা হয়েছিল। রায়ে ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি পুলিশ ও সেনা। কর্মকর্তাদের নিশ্চিহ্ন করতে এবং বাঙালি রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রদের হত্যা ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে অপারেশন সার্চলাইট’-এর নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। পাকিস্তান রক্ষার নামে জামায়াতে ইসলামী প্যারামিলিশিয়া বাহিনী বা সহযােগী বাহিনী গঠন করে নিরস্ত্র বাঙালি বেসামরিক ব্যক্তিদের নিশ্চিহ্ন করার অভিযানে অংশ নেয়।

সূত্র : ফিরে-দেখা-৭১-যুদ্ধাপরাধীদের-বিচার-সুজন-হালদার