গৈড়লার টেক অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম)
গৈড়লার টেক অপারেশন (পটিয়া, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান সড়কের গৈড়লার টেক এলাকায় কমান্ডার শাহ্ আলমের নেতৃত্বে তাঁর গ্রুপ ও কমান্ডার মহসিন খান গ্রুপ এ অপারেশন পরিচালিত করে।
ঘটনার দিন দুপুরে কিছু রাজাকার, আলবদর ও -মুজাহিদ- দোহাজারীর দিক থেকে পটিয়া হয়ে চট্টগ্রাম শহরে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল ঘটনাস্থলের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে অবস্থান নেয়। হানাদাররা একটি বাসে করে অস্ত্রশস্ত্রসহ ঘটনাস্থলে এলে উভয় দিক থেকে ভয়াবহ আক্রমণ পরিচালিত হয়। এ-যুদ্ধে নুরুল হক নামে শাজাহান ইসলামাবাদী গ্রুপের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তিনি ছিলেন পুলিশ বাহিনীর সদস্য। অপরদিকে ৪ জন রাজাকার ও আলবদর নিহত হয় এবং কিছু রাজাকারকে বন্দি করা হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাদের সহায়তার জন্য পটিয়া ও চট্টগ্রাম শহরের দিক থেকে দুদল পাকসেনা গৈড়লার টেকের দিকে অল্পদূর অগ্রসর হয়ে আবার ফিরে যায়।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে হানাদারদের শতাধিক রাইফেল ও ১৫ বাক্স গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এলাকার লোকজন সেগুলো নাইখাইন প্রাইমারি স্কুলে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের আশঙ্কায় অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বন্দিকৃত রাজাকারদের কেলিশহর রতনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— কমান্ডার শাহ্ আলম (কচুয়াই পটিয়া), কমান্ডার মহসিন খান, ডেপুটি কমান্ডার উদয়ন নাগ (সারোয়াতলী, বোয়ালখালী), দেওয়ান মোহাম্মদ আলী (ফরিদপুর), আবুল কাসেম (মিরসরাই), সুশীল চক্রবর্তী (পশ্চিম শাকপুরা, বোয়ালখালী), শেখ মানিক (বন্দর কলোনি), ফজল আহমদ (তেকোটা পটিয়া), শেখর দস্তিদার (ধলঘাট পটিয়া), মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (দক্ষিণ রাউজান), সুরক্ষিত চৌধুরী (কক্সবাজার), মোহাম্মদ ইউসুফ (মরিয়মনগর, রাঙ্গুনিয়া), মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (মিরসরাই), প্রিয়তোষ চৌধুরী (ঠেগরপুনি, পটিয়া), পুলক কুমার দাশ (রতনপুর, পটিয়া), মোয়াজ্জম হোসেন (খুলনা), অসিত দাশ (রহমতগঞ্জ), শামসুজ্জামান হীরা (খলিসাদহ, পাবনা), মিয়া মোহাম্মদ জাফর (বাকলিয়া), ভূপাল দাশগুপ্ত (আনোয়ারা), সুজিত বড়ুয়া (তেকোটা), আনোয়ার হোসেন (রাঙ্গুনিয়া), তপন দস্তিদার, নুরুল ইসলাম, হারাধন দাশ, আবু তাহের, বদন দাশ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, সোলাইমান (কৃষক নেতা), আবুল হাশেম, তাজুর মুল্লুক, যুগল সরকার, আবু বক্কর, দয়াল হরি দে, নুরুল হক (পুলিশ-সদস্য), কামরুল, হাফেজ আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ ইসহাক, আবদুস ছবুর, তরুণ দাশ, কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ, সিরাজুল ইসলাম, সজল দাশ, ছগীর মোহাম্মদ, আবদুস ছালাম মাস্টার প্রমুখ। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড