গুনাগরী রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম)
গুনাগরী রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ১১ ও ১২ই ডিসেম্বর। এতে ৪ শতাধিক বন্দুক, ১টি ২২ বোরের পিস্তল, ২টি ১২ বোরের বন্দুক, ৩টি রাইফেল, বিপুল পরিমাণ গোরাবারুদ ও কিছু দা, ছুরি মুক্তিযোদ্ধারা হস্তগত করেন। এ অপারেশনের মধ্য দিয়ে বাঁশখালী হানাদারমুক্ত হয়।
বাঁশখালীর গুনাগরী ছিল পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প। এ ক্যাম্পে ২০০ জনের অধিক -রাজাকার- অবস্থান করত। এছাড়াও এ ক্যাম্পে প্রায় ৫০০ রাজাকার আসা-যাওয়া, বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান ও আক্রমণে সহযোগী হিসেবে কাজ করত। তারা বিভিন্ন সময়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে সাধারণ মানুষজনকে হত্যা এবং অসংখ্য বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের দ্বারা বহু নারী নির্যাতনের শিকার হন। মুক্তিযোদ্ধারা এক সময় এ রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ২৭শে নভেম্বর ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী ৮ জন বিএলএফ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাঁশখালী আসেন। ডিসেম্বর মাসে বানীগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে বাঁশখালীতে অবস্থানরত কমান্ডার সুলতান উল কবির চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, স্বপন ভট্টাচার্য, খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন এবং ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে অবস্থান নেন। ১১ই ডিসেম্বর বানীগ্রাম থেকে গিয়ে গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা গুনাগরী ক্যাম্প আক্রমণ করেন। ৩৬ ঘণ্টা যুদ্ধের পর ১২ই ডিসেম্বর দুপুরে রাজাকাররা পরাস্ত হয়ে অস্ত্র ফেলে আত্মসমপর্ণ করে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এলে তাদের বন্দি করা হয়। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প থেকে চার শতাধিক বন্দুক, ১টি ২২ বোরের পিস্তল, ২টি ১২ বোরের বন্দুক, ৩টি রাইফেল, বিপুল পরিমাণ গোরাবারুদ ও কিছু দা, ছুরি উদ্ধার করেন।
গুনাগরী রাজাকার ক্যাম্পের পতনের মাধ্যমে বাঁশখালী হানাদারমুক্ত হয় এবং ঐদিনই ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরীর নেতৃত্বে গুনাগরী ওয়াপদা অফিসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। [জগন্নাথ বড়ুয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড