গুপ্তের বাজার যুদ্ধ (দৌলতখান, ভোলা)
গুপ্তের বাজার যুদ্ধ (দৌলতখান, ভোলা) সংঘটিত হয় ২১শে নভেম্বর। ভোলা জেলার দৌলতখান থানা থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে ২-৩ কিমি দূরে মেঘনার পশ্চিম তীরে গুপ্তের বাজার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র। বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। বাজারের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে একটি বড় রাস্তা ছিল। এই রাস্তা দিয়ে সরাজগঞ্জ বাজার, রাণীগঞ্জ বাজার ও তজুমদ্দিনে যাওয়া যেত। যুদ্ধপরবর্তীকালে বাজারটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ২৭শে অক্টোবর পাকবাহিনী দৌলতখান থানা পুনর্দখল করার পর প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে গুপ্তের বাজার ও রাণীগঞ্জ বাজার এলাকায় আসত। এ-সময় তারা দু-একটি স্থানে অগ্নিসংযোগও করে। ২১শে নভেম্বর ১৫-২০ জন পাকসেনা গুপ্তের বাজারে এসে কয়েকটি ঘরে আগুন দেয়। এ খবর পেয়ে গুপ্তের বাজার এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা ক্যাম্পের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য বাজারের উত্তর পার্শ্বস্থ ভূঁইয়াবাড়ির সামনে কালভার্ট ব্রিজের কাছে অবস্থান নেন। পাকবাহিনী ব্রিজের নিকট আসতেই মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। পাকবাহিনীও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর সুবেদার ছিদ্দিক সামনে এগিয়ে এলে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে সে নিহত হয়। অবশিষ্ট পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় আধঘণ্টা যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে ৬-৭ জন পাকসেনা আহত হয়। তাদের নিয়ে পাকসেনারা দ্রুত দৌলতখান থানায় চলে যায়।
গুপ্তের বাজারের এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মাহবুবুর রহমান শিশু, খোরশেদ আলম, সেনাসদস্য মো. সহীদ, কাঞ্চন মিয়া, আব্দুর রশিদ ও সুবেদার মফিজ। এ- যুদ্ধই ছিল দৌলতখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ যুদ্ধ। [মো. রফিকুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড