গুয়ারেখা গণহত্যা (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর)
গুয়ারেখা গণহত্যা (স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর) সংঘটিত হয় ২৪শে মে। পাকিস্তানি সেনা ও স্থানীয় রাজাকারদের দ্বারা সংঘটিত এ গণহত্যায় ১৮ জন মানুষ শহীদ হন।
ঘটনার দিন বেলা ১২টার দিকে পাকিস্তানি সৈন্য ও -রাজাকার বাহিনী গুয়ারেখায় প্রবেশ করে। রাজাকার কমান্ডার কাদের মাওলানা, আমজাদ ফকির প্রমুখ তাদের নেতৃত্ব দেয়। গ্রামে প্রবেশ করেই তারা হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজে মেতে ওঠে। প্রথমেই তারা হিরন্ময় মৃধার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। রজনী কান্ত মৃধা ছিলেন অনেক বৃদ্ধ ও রোগাক্রান্ত। চলতে-ফিরতে পারতেন না। ঘরে আগুন দিলে পুড়ে মারা যাবে এ ভয়ে ছেলে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বাবাকে গোয়াল ঘরে লুকিয়ে রেখে একটু দূরে নিজেও লুকিয়ে থাকে। আগুন থেকে গোয়াল ঘরও রক্ষা পায়নি। আগুন জ্বলতে থাকলে জ্ঞানেন্দ্রনাথ ‘বাবা-বাবা’ বলে চিৎকার করতে-করতে বের হয়ে আসে। মুহূর্তেই বুলেটবিদ্ধ হয় তার শরীর।
ননী গোপাল মৃধা (২১) (পিতা কুমুদ মৃধা) পাকসেনাদের কবলে পড়লে কলেমা পাঠ পড়ে শোনান। পাকসেনারা তাকে ছেড়ে দিতে চাইলে রাজাকার আমজাদ ফকিরের নির্দেশে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে সে হিন্দু। মুহূর্তেই গুলিবিদ্ধ হন ননী গোপাল মৃধা। রক্ত দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হলো প্রিয় মাতৃভূমিকে। হানাদার বাহিনীর গুয়ারেখা গণহত্যায় ১৮ জন মানুষ শহীদ হন, যাদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন— গুয়ারেখা গ্রামের ননী গোপাল মৃধা (পিতা কুমুদ মৃধা), সুধীর মৃধা (পিতা পরেশ মৃধা), চিত্তরঞ্জন মৃধা (পিতা সতীশ চন্দ্ৰ মৃধা), রতন মৃধা (পিতা রাখাল মৃধা), রজনীকান্ত মৃধা (পিতা ভরত চন্দ্র মৃধা), জ্ঞানেন্দ্রনাথ মৃধা (পিতা রজনীকান্ত মৃধা), মধুসূদন মৃধা, হিমাংসু মৃধা (পিতা মৃত্যুঞ্জয় মৃধা), শরৎচন্দ্র মৃধা (পিতা উমাচরণ মৃধা), ব্রজেন্দ্রনাথ মৃধা (পিতা কৈলাস চন্দ্ৰ মৃধা), নীলকান্ত হালদার (পিতা দ্বারিকানাথ হালদার), হরিচরণ রায় (পিতা নিশিকান্ত রায়), রমেশ মণ্ডল (পিতা রুহিনী মণ্ডল), গঙ্গাচরণ মণ্ডল (পিতা রামচন্দ্র মণ্ডল), নিশিকান্ত রায় ও ললিত বেপারী (পিতা কার্তিক বেপারী)। শহীদ ননী গোপাল মৃধা, জ্ঞানেন্দ্ৰ নাথ মৃধা, সুধীর মৃধা, শরৎ চন্দ্র মৃধা, রতন মৃধা ও চিত্তরঞ্জন মৃধাকে একটি গর্তে এবং অন্য ছয় জনকে অপর একটি গর্তে গণকবর দেয় গ্রামবাসী। [হাবিবুল্লাহ রাসেল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড