গুরই গণহত্যা (নিকলী, কিশোরগঞ্জ)
গুরই গণহত্যা (নিকলী, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ই সেপ্টেম্বর। এতে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা ছিল মুক্তাঞ্চল। এ অঞ্চলে পাকসেনারা কখনো ঘাঁটি স্থাপন করতে পারেনি। জেলার নিকলী উপজেলার গুরই এবং বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়া বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী ক্যাম্প ছিল। গুরই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে শুরু থেকেই পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা নাস্তানাবুদ হচ্ছিল। ফলে গুরই গ্রাম পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিশেষ লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়। তারা গুরুই আক্রমণের সুযোগ খুঁজছিল। ৬ই সেপ্টেম্বর তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে গুরই- এ হামলা করে। গ্রামে ঢুকেই পাকসেনারা কয়েকজন লোককে হত্যা করে। তারপর বিভিন্ন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এক পর্যায়ে হিলচিয়া ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি-আক্রমণে ৫ জন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দেশীয় কয়েকজন দোসর নিহত হয়। কিন্তু পাকিস্তানিদের সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা এক পর্যায়ে পশ্চাদপসরণে বাধ্য হন। এরপর পাকসেনারা ক্রুদ্ধ হয়ে গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালায়। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। পূর্বপাড়ার ৮৮টি এবং মসজিদপাড়ার ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। বহু বাড়িতে লুটতরাজ চালায়। হানাদাররা এখানে লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগ করেই ক্ষান্ত হয়নি; নির্বিচারে গুলি করে অনেক নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। কয়েকজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। গ্রামের খুর্শিদ মিয়ার বাড়িতে অনেককে ধরে নিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। নবী নেওয়াজের বাড়িতে ছয়জন নারী-পুরুষ তাদের গুলিতে নিহত হয়। পুরো গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় লাশের পর লাশ ছড়িয়ে ছিল। পাকবাহিনীর গুরই গণহত্যায় নিহতদের মধ্যে ২৫ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন— ইয়াকুব আলী (পিতা ছাবর আলী), হাফিজ উদ্দিন (পিতা আব্দুল গফুর), সুন্দর আলী (পিতা মোহাম্মদ নাগর), আব্দুল আলী (পিতা মোহাম্মদ নাগর), লাল হোসেন (পিতা আলী নেওয়াজ), ফুলু মিয়া (পিতা নবী নেওয়াজ), রুছমত আলী (পিতা ইব্রাহিম মিয়া), আফতাব উদ্দিন তারা মিয়া (পিতা মানউল্লাহ), ভেলু মিয়া (পিতা নজম উদ্দিন), জিন্নত আলী (পিতা ওয়াহেদ আলী মুন্সি), চাঁন বানু (স্বামী ইয়াকুব আলী), সুরুজ আলী (পিতা কাবিল সরকার), মহর বানু (স্বামী কান্তু মিয়া), মুন্তাজ (পিতা মমিন), সুনাম উদ্দিন (পিতা বচু মিয়া), ছুবেদ আলী (পিতা আমির হোসেন), জোবেদা বেগম (স্বামী আ. ছমেদ), ইছব আলী (পিতা জাফর আলী), গতা মিয়া (পিতা কাবিল), সরাফত আলী (পিতা সুরুজ আলী), মধু মিয়া (পিতা সজীব শেখ), সাহেদা বানু (স্বামী মিয়া হোসেন), আব্বাছ আলী আবু (পিতা আমির হোসেন), আব্বাছ আলী (পিতা কাবিল মিয়া) এবং মর্তুজ আলী (পিতা সুরুজ আলী)। [মহিবুর রহিম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড