You dont have javascript enabled! Please enable it!

গালিমপুর যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

গালিমপুর যুদ্ধ (নবাবগঞ্জ, ঢাকা) সংঘটিত হয় ২৩ থেকে ২৭শে সেপ্টেম্বর ৫ দিনব্যাপী। যুদ্ধে বহুসংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম (বেনুখালি) শহীদ হন।
নবাবগঞ্জ উপজেলার গালিমপুর যুদ্ধ এতদঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত। ইছামতি নদী বিধৌত গালিমপুর, আগলা ও চূড়াইন ইউনিয়নের সীমানা বরাবর প্রায় নব্বই ডিগ্রি অবস্থানে উত্তর-পূর্বদিকে একটি বাঁক, যার পূর্বদিকে ছাতিয়া, দক্ষিণে চূড়াইনের দুর্গাপুর ও পশ্চিম পাড়ে গালিমপুর গ্রাম। এ ত্রিমোহনায় ২৩ থেকে ২৭শে সেপ্টেম্বর ৫ দিন ধরে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা গালিমপুর যুদ্ধ নামে পরিচিত।
২৩শে সেপ্টেম্বর নদীপথে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন জাফরের নেতৃত্বে দেড়শতাধিক পাকসেনা এম এল পয়েন্টার লঞ্চে করে ঢাকা-লৌহজং-শ্রীনগর হয়ে নবাবগঞ্জ থানা হেডকোয়ার্টার্সে আসছিল। পথে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার কারণে ছাতিয়ায় চরে আটকা পড়ে। গালিমপুরের সোনাহাজরার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল তাঁর কতিপয় সহযোদ্ধাকে নিয়ে হানাদারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। আব্দুল আউয়ালের প্রথম গুলির আঘাতেই পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন জাফর নিহত হয়। এ-যুদ্ধে অংশ নেন বেনুখালির মোহাম্মদ আলী, খান আলম ও তাঁর সঙ্গীরা, কোমরগঞ্জের আব্দুল বাতেন, কামারখালির মো. নূর আলী, বেনুখালির মোহাম্মদ ইদ্রিস, মুন্সিগঞ্জের মন্টু প্রমুখ।
এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ইছামতি নদীর দক্ষিণ পাড়ে হাবিলদার নাসিরউদ্দিন খান ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ওমর আলীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন। নদীর পশ্চিম পাড়ে নবাবগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শওকত হোসেন আঙ্গুরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গালিমপুর- গোবিন্দপুর বাজার ও খালের মুখে সশস্ত্র অবস্থান নেন।
কমান্ডার শওকত হোসেন আঙ্গুরের সহযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন এস এম আলাউদ্দিন শেখর, শাহ মো. আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল মজিদ, মো. আনোয়ার হোসেন, আবুল কালাম আজাদ দারুসহ আগলা ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধা মো. জালাল, মো. রফিক, সাকিল, বাধন প্রমুখ।
২৪শে সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা এম এল পয়েন্টার লঞ্চে অবস্থান করা পাকসেনাদের পুনরায় তিনদিক থেকে আক্রমণ করেন। এদিন সন্ধ্যার কিছু পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা হারুন-উর- রশীদ, জাহাঙ্গীর ও হাফিজ কচুরিপানার ধাপে মাথা লুকিয়ে সাঁতার কেটে এম এল পয়েন্টার লঞ্চের কাছাকাছি গিয়ে ২ পাউন্ডের পি কে এক্সপ্লোসিভ (ফসফরাস) বোমার আঘাতে লঞ্চটিতে আগুন লাগিয়ে দেন। বোমার আঘাতে অধিকাংশ পাকিস্তানি সৈন্য ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং কিছু সৈন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে লুকানোর চেষ্টা করে। সৈন্যদের কিছু অংশ শিবরামপুর গ্রামে ও কিছু অংশ পাশের গ্রাম ছাতিয়ার একটি ফাঁকা বাড়িতে অবস্থান নেয়। শিবরামপুরে লুকিয়ে থাকা হানাদার সৈন্যদের ধরতে গেলে ২৫শে সেপ্টেম্বর বেনুখালির আব্দুর রহিম তাদের গুলিতে শহীদ হন। ২৬ ও ২৭শে সেপ্টেম্বর শিবরামপুরে আগত প্রায় সকল পাকিস্তানি হানাদারদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়। এটি সম্পন্ন করেন বেনুখালীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন খান, আবু সাঈদ ও তাঁর সঙ্গীরা। যুদ্ধে অল্প সংখ্যক পাকসেনা পালাতে সক্ষম হয়। গালিমপুরের এ যুদ্ধের খবর বিবিসি, নয়াদিল্লি ও আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হয়। [মো. আনোয়ার হোসেন ও আব্দুল মালেক সিকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!