You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেপালি কংগ্রেস ও নেপালের তৎকালীন প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম নেতা গিরিজা প্রসাদ কৈরালা - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেপালি কংগ্রেস ও নেপালের তৎকালীন প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম নেতা গিরিজা প্রসাদ কৈরালা

গিরিজা প্রসাদ কৈরালা (১৯২৪-২০১০) নেপালি কংগ্রেস ও নেপালের তৎকালীন প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম নেতা, পরবর্তীকালে নেপালের প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতসহ আন্তর্জাতিক পরিসরে এর পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী। ১৯৭১ সালে তিনি নেপালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালনার এক পর্যায়ে ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করেন। মে মাসে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ভারতের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে কাজ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গিরিজা প্রসাদ কৈরালা Bangladesh Liberation War সম্মাননা প্রাপ্ত হন।
গিরিজা প্রসাদ কৈরালা ব্রিটিশ-ভারতের বিহারের শারসায় ১৯২৪ সালের ৪ঠা জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কৃষন প্রসাদ কৈরালা তখন ভারতে নির্বাসিত ছিলেন। গিরিজা প্রসাদ কৈরালা জনতার কাছে ‘গিরিজা বাবু’ নামে পরিচিত ছিলেন। ভারত ও নেপালে অধ্যয়ন শেষে ১৯৪৭ সালে তাঁর রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে। একজন শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হিসেবে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। বিরাটনগর জুট মিলস আন্দোলন, নেপাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, মরাং জেলা নেপালি কংগ্রেসের মাধ্যমে তিনি কেন্দ্রীয় নেপালি কংগ্রেসের নেতায় পরিণত হন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি নেপালে কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তাঁকে ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত তিনি নেপালি কংগ্রেস পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে পাঁচ বছর তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কেবল গিরিজা প্রসাদ কৈরালাই নন, কৈরালা পরিবারের আরো তিনজন বিভিন্ন সময় নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন। গিরিজার বড় ভাই বি পি কৈরালা প্রথমে ১৯৫৯ সালে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে নেপালি কংগ্রেসের নেতা গিরিজা প্রসাদ কৈরালার সঙ্গে ভারতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যোগাযোগ হয়। তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালিদের ওপর সংঘটিত তীব্র গণহত্যার সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তিনি বাঙালিদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি মে মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁদের অনুপ্রাণিত করার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ৭১-এর ১৮-২০শে সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ প্রশ্নে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, যুগোস্লাভিয়া, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, নেপাল, আফগানিস্তান, ভারত-সহ ২৪টি দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। সম্মেলনের সাধারণ সেশনে নেপালের প্রতিনিধি ছিলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালার বড়ভাই কংগ্রেস নেতা বি পি কৈরালা। তিনি ১৮ই সেপ্টেম্বর এ সম্মেলনে এক অসাধারণ ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের মানুষ একটি আদর্শের জন্য, মানবতার মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক জীবনবোধের জন্য লড়াই করছেন। তাঁরা সে অর্থে কেবল নিজেদের জন্য নন, আমাদের জন্যও লড়াই করছেন। গিরিজা প্রসাদ কৈরালা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাঁদের অনুপ্রাণিত করেন। তিনি বাংলাদেশের শরণার্থীদের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও সংস্থার কাছে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের আহ্বান জানান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর গিরিজা প্রসাদ কৈরালাকে Bangladesh Liberation War সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করে। বাংলাদেশের এ অকৃত্রিম বন্ধু ২০১০ সালের ২০শে মার্চ কাঠমুণ্ডুতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড