গান্ধাইল গণহত্যা (কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ)
গান্ধাইল গণহত্যা (কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৫ই মে। এতে ৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।
বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী-র জন্মভূমি কাজীপুর। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এখানে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ২৫শে মার্চের পরে কাজীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করে। পাকিস্তানি বাহিনী ৫ই মে উপজেলার গান্ধাইল গ্রামে নৃশংস গণহত্যা চালায়। স্থানীয় শান্তি কমিটির নেতা ইমান আলী (চেয়ারম্যান, গান্ধাইল ইউনিয়ন) এবং রাজাকার ময়েজউদ্দিনের প্ররোচনায় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে এবং অস্ত্র উদ্ধারের নামে গান্ধাইল গ্রাম আক্রমণ করে এবং গণহত্যা চালায়। এতে গান্ধাইলের সাব- রেজিস্ট্রার, পোস্ট মাস্টার আজাহার আলী, আবেদ আলী মাস্টার (স্কুল শিক্ষক), আমজাদ হোসেনসহ ৯ জন শহীদ হন।
গান্ধাইল এলাকাটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। এখানকার অনেক হিন্দু মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী সাব-রেজিস্ট্রারকে গ্রামের হিন্দু এবং মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় আছে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি স্থানীয় না হওয়ায় এ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না বলার সঙ্গে-সঙ্গে তারা তাঁকে অফিসের কাছেই গুলি করে হত্যা করে। গান্ধাইলে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসা এক ব্যক্তি পাকিস্তানি বাহিনীকে দেখে দৌড় দিলে তাকেও তারা গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয় আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে আব্দুস সামাদ ঘাটু ও আব্দুল খালেক মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে এ-সময় ভারতে যান। তাঁদের না পেয়ে পাকবাহিনী আমজাদ হোসেনকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস উদ্দিন কমান্ডারও সে-সময় ভারতে ছিলেন। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বড়ভাই পোস্ট মাস্টার আজাহার আলীকে তারা হত্যা করে। শরীরচর্চার শিক্ষক ছিলেন ময়েজউদ্দিন মাস্টার। তিনি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁকেও পাকিস্তানি বাহিনী টার্গেট করেছিল। গান্ধাইল আসার পথে পাকিস্তানি বাহিনী আবেদ আলী মাস্টারকে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করে এবং তাঁকে ময়েজউদ্দিন মাস্টার মনে করে হত্যা করে। [সুম্মিতা রানী দাস]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড