You dont have javascript enabled! Please enable it!

গান্ধী আশ্রম হত্যাকাণ্ড (সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী)

গান্ধী আশ্রম হত্যাকাণ্ড (সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী) সংঘটিত হয় ৪ঠা সেপ্টেম্বর। এতে আশ্রমের দুজন সেবক শহীদ হন।
নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ বাজারের লাগোয়া পশ্চিম পার্শ্বে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট অবস্থিত। এটি একটি বাড়ি ছিল। বাড়ি ও তৎসংলগ্ন জায়গার মালিক ছিলেন ব্যারিস্টার হেমচন্দ্র ঘোষ। তিনি গান্ধীজির সঙ্গে বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তেন। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে কলকাতায় এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। এতে অনেক হিন্দু ও মুসলমান প্রাণ হারায়। এরপর বিহার ও পূর্ব বাংলার নোয়াখালী ও কুমিল্লায় দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এ বছরেরই ৭ই নভেম্বর গান্ধীজি যখন দিল্লি থেকে দাঙ্গা-বিক্ষুব্ধ নোয়াখালীতে আসেন, তখন ব্যারিস্টার হেমচন্দ্র ঘোষ গান্ধীজিকে তাঁর বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করেন। পরে সেখানেই গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্ট গড়ে ওঠে।
গান্ধীজির সঙ্গে সেদিন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই এখানে এসেছিলেন। গান্ধীজি চলে যাবার পর তাঁদের প্রায় সবাই চলে যান, থেকে যান শুধু ৩ জন চারুচন্দ্র চৌধুরী (সিলেট), দেবেন্দ্র নারায়ণ সরকার (ফরিদপুর) ও মদনমোহন চট্টোপাধ্যায় (হুগলী)। তাঁরা গান্ধীজির অহিংস আদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন এবং এখানে আর্ত- মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। তিনজনই ছিলেন চিরকুমার।
১৯৭১ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর চাটখিল উপজেলার রাজার বাড়ি গণহত্যার পর দুপুর ২টার দিকে পাকবাহিনী ও -রাজাকার-রা আশ্রমের পাশ দিয়ে যাবার সময় আশ্রম আক্রমণ করে। তখন চারুচন্দ্র চৌধুরী আশ্রমে ছিলেন না। অপর দুজনকে হানাদাররা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, বুট দিয়ে লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয় এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে শরীর রক্তাক্ত করে গুলি করে হত্যা করে। তাঁরা দুজনই ছিলেন বয়োবৃদ্ধ। দেবেন্দ্র নারায়ণের বয়স ছিল ৮০ বছর এবং মদনমোহনের বয়স ছিল ৭৫ বছর। হানাদাররা আশ্রমটি লুট করার পর তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১৯৯০ সালে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে তাঁদের সমাধিস্থলে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। [শওকত কামাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!