মুক্তিযুদ্ধে গাইবান্ধা সদর উপজেলা
গাইবান্ধা সদর উপজেলা ছিল এ জেলার সকল আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মূল নেতৃবৃন্দ গাইবান্ধা শহরে বাস করতেন। তাঁরা কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের সমন্বয় করতেন এবং আন্দোলনের সকল কর্মসূচি মহকুমা শহর থেকে বিভিন্ন থানা শহর ও গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে দিতেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করলে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাইবান্ধায়ও আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার সংবাদ পেয়ে গাইবান্ধায় ২২শে ফেব্রুয়ারি স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। মিছিল-সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয় গাইবান্ধা শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলোর শ্রমিকরা এ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মতিউর রহমানকে সভাপতি এবং হাসান ইমাম টুলুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহকুমায় প্রথম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে গাইবান্ধা সদরসহ মহকুমার ৪ টিআসনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হন।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনেও গাইবান্ধা শহরের ছাত্রসমাজ খুবই সক্রিয় ছিল। পরবর্তীকালে ৬ দফা আন্দোলন, ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলন, আইয়ুবের উন্নয়ন দশক উদযাপন-বিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান-এর সকল কর্মসূচি গাইবান্ধা শহরে ছাত্র-জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণে পালিত হয়। এ সময় নির্যাতন ও কারাভোগের শিকার হন গাইবান্ধার অনেক রাজনীতিবিদ ও ছাত্রনেতা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গাইবান্ধা মহকুমার জাতীয় পরিষদের ৩টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ- প্রার্থীরা বিজয়ী হন। গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি থানা নিয়ে গঠিত জাতীয় পরিষদ আসনে নির্বাচিত হন গাইবান্ধা মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান এবং গাইবান্ধা সদরের প্রাদেশিক পরিষদ আসনে নির্বাচিত হন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান রেজা।
একাত্তরের ১লা মার্চ পূর্বঘোষিত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হলে পূর্ব বাংলায় গণবিস্ফোরণ ঘটে। অন্যান্য স্থানের মতো গাইবান্ধায়ও অসহযোগ আন্দোলন-এর সকল কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হতে থাকে। ৩রা মার্চ সমগ্র গাইবান্ধায় পূর্ণ দিবস হরতাল পালিত হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বিকেলে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে লুৎফর রহমান এমএনএ-এর সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন- ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামে যৌথভাবে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি পালন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ-এর নির্দেশনা অনুসারে সদর উপজেলাসহ মহকুমার সর্বত্র সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট চলতে থাকে। সকল প্রকার খাজনা-ট্যাক্স আদায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি বাড়িতে কালো পতাকা উড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিন মহকুমা শহরে লাঠিসহ পতাকা হাতে মিছিল হতে থাকে। ১২ই মার্চ গাইবান্ধা মিউনিসিপ্যালিটি পার্কে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে লুৎফর রহমান এমএনএ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় স্বাধীনতা অর্জনের দৃঢ় শপথ গ্রহণ করা হয়। একই দিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা গণেশ প্রসাদের সভাপতিত্বে একটি ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়।
১৫ই মার্চ মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান এমএনএ-কে আহবায়ক এবং সদর উপজেলার ওয়ালিউর রহমান রেজা এমপিএ ও মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আতাউর রহমানকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১৭-সদস্য বিশিষ্ট মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য ১৪ জন সদস্য হলেন- শাহ্ আব্দুল হামিদ এমএনএ, আবু সোলাইমান মণ্ডল এমএনএ, ডা. মফিজার রহমান এমপিএ, আবু তালেব মিয়া এমপিএ, জামালুর রহমান প্রধান এমপিএ, আজিজার রহমান এমপিএ, শামসুল হোসেন সরকার এমপিএ, ভাষাসৈনিক মতিউর রহমান, হাসান ইমাম টুলু, গোলাম কিবরিয়া, রাজনীতিবিদ নির্মলেন্দু বর্মণ, হাফিজার রহমান, মোহাম্মদ খালেদ ও নূরুল আবছার তারা মিয়া। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা উদ্যোগী হয়ে এলাকাভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। অবাঙালি মহকুমা প্রশাসক এস এস জি এ রিজভি ও ব্যাংক কর্মকর্তা রেজা শাজাহান প্রশাসনিক কার্যক্রমে মহকুমা সংগ্রাম কমিটিকে সহযোগিতা করেন। ২৩শে মার্চ প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে পাকিস্তান সরকার সর্বত্র পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেয়। অন্যদিকে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও স্বাধীন বাংলা শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ঐদিন দেশব্যাপী ‘প্রতিরোধ দিবস’ আহ্বান করে। সে কর্মসূচি সফল করতে ২৩শে মার্চ গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে (বর্তমান স্বাধীনতার বিজয়স্তম্ভ চত্বর) ছাত্রলীগের মহকুমা সভাপতি এম এন নবী লালুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ছাত্র- জনতার সমাবেশে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ নেতা নির্মলেন্দু বর্মণ, মোহাম্মদ খালেদ, ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল আরেফিন তারেক, সৈয়দ শামস উল আলম হীরু, সদরুল কবীর আঙ্গুর, আমিনুল ইসলাম ডিউক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানো হয়। পরে শহরের সর্বত্র স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। গাইবান্ধা কলেজের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মাজহার উল মান্নানকে যুগ্ম আহবায়ক করে গঠিত শিক্ষক সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ২৪শে মার্চ গাইবান্ধা শহরে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিকেলে ভিএইড রোডস্থ বার্মা ব্যাংক ভবনে গাইবান্ধা শহরে অবস্থানকারী অবসরপ্রাপ্ত বা ছুটিতে আসা সেনা, নৌ, বিমান ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনীর কাজিউল ইসলাম, আজাদ হোসেন, সেনাবাহিনীর মাহবুব আলী প্রধান, মকবুল হোসেন প্রধান, এনামুল ইসলাম টুকু, আবুল হোসেন, বিমানবাহিনীর আলতাফ হোসেন, আফতাব হোসেন, খন্দকার তোফাজ্জল হোসেন, আনসার বাহিনীর মমতাজুল ইসলাম, আজিমউদ্দিন প্রমুখ। এ সভায় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য 1 প্রশিক্ষণ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২৬শে মার্চ সকালে গাইবান্ধার ওয়্যারলেস কেন্দ্রের মাধ্যমে মহকুমা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান এমএনএ ও যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ালিউর রহমান রেজা এমপিএ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা অবহিত হন। এদিন মহকুমা সংগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হাসান ইমাম টুলুর নেতৃত্বে গাইবান্ধা ট্রেজারি থেকে দুশ রাইফেল ও গোলাবারুদ এবং আনসার ক্যাম্পের অস্ত্রগুলো নিয়ে ছাত্র-যুবকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ২৭শে মার্চ থেকে গাইবান্ধা কলেজ এবং ইসলামিয়া হাইস্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। গাইবান্ধা কলেজের অধ্যক্ষ অহিদউদ্দিন আহমেদ রোভার স্কাউটের ৩০০ কাঠের রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণে সহায়তা করেন। দুই জায়গাতেই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন সেনা, নৌ, বিমান ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
গাইবান্ধা শহরে যাতে পাকহানাদার বাহিনী প্রনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ছাত্র-জনতা কুপতলা-খোলাহাটি রাস্তার ছোট-ছোট ব্রিজ হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করে। তারা গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কসহ শহরে প্রবেশের সকল রাস্তায় বড়বড় গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ২৬শে মার্চ থেকে ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ১৬ই এপ্রিল পাক হানাদাররা মাদারগঞ্জের আংরার ব্রিজে অবস্থান নেয়। গাইবান্ধায় প্রশিক্ষণরত ছাত্র-যুবক এবং বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সেখানে সুবেদার আফতাব বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধে যোগ দেন। পরের দিন ১৭ই এপ্রিল আফতাব বাহিনী ও ছাত্র-জনতার সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধের পর প্রতিরোধকারীদের গোলা-বারুদ ফুরিয়ে গেলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হন। পাকিস্তানি হানাদাররা সাদুল্যাপুর হয়ে বিকেলে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে।
সদর উপজেলার ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে আমিনুল ইসলাম সুজা, এম এন নবী লালু ও মাহাবুব এলাহী রঞ্জু ১১ নম্বর সেক্টরে এবং মফিজুর রহমান খোকা ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। সদর উপজেলার দুই বীর যোদ্ধা মাহাবুব এলাহী রঞ্জু ও এ টি এম খালেদ দুলু মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার-এর শপথ গ্রহণের দিন অর্থাৎ ১৭ই এপ্রিল বিকেলে গাইবান্ধা মহকুমা শহর ও সদর উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনী অনুপ্রবেশ করে। একটি দল সাদুল্যাপুর হয়ে এবং আরেকটি দল পলাশবাড়ি হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে হেলাল পার্কে (বর্তমান শাহ্ আব্দুর হামিদ স্টেডিয়াম) তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মহকুমা সদর দপ্তর এবং মূল নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। এ ক্যাম্প সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্টহাউসে ছিল পাকবাহিনীর অফিসার্স ক্যাম্প। প্রথমে একজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে পাকসেনাদের একটি ট্যাংক ইউনিট শহরে ঢোকে। এ ইউনিট এখানে সপ্তাহ দুয়েক ছিল। পরে আসে পদাতিক বাহিনী। এ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল মেজর মেহমুদ। বিভিন্ন সময়ে মহকুমা সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে মেজর মেহমুদ, মেজর তাহসিন মির্জা, লে. কর্নেল সাঈদ, লে. কর্নেল আজিজ প্রমুখ। এছাড়া শহরের ভিএইড রোডের ওয়্যারলেস স্টেশন, বাদিয়াখালী ব্রিজ, গজারিয়া ব্রিজ এবং সন্যাসদহ ব্রিজ সংলগ্ন এলকায় পাকসেনাদের ক্যাম্প ছিল। রাজাকাররা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প করে ব্রিজ-কালভার্ট পাহারা, নারীনির্যাতন ও লুটপাটে সহায়তা এবং পাকবাহিনীর কাছে মুক্তিবাহিনীর খবরাখবর সরবরাহ করত। উপজেলার কামারজানীতে রাজাকারদের একটি বড় ক্যাম্প ছিল। ডিবি রোডের নিবারণ সাহার দোকান দখল করে স্বাধীনতাবিরোধী ফজলুল হক ব্যাটালিয়ান-এর অফিস করা হয়েছিল।
এপ্রিলে ঢাকায় গঠিত পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্ৰীয় শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে ২৫শে এপ্রিল জেলা, মহকুমা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুসারে মুসলিম লীগ নেতা খন্দকার আজিজুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে গাইবান্ধা মহকুমা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। কয়েক মাস পর তাকে অপসারণ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মওলানা আব্দুর গফুরকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। পাক হানাদারদের সহযোগী দলগুলোর মধ্যে গাইবান্ধায় জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগ খুব সক্রিয় ছিল। যারা পাকবাহিনীর সহযোগী ও দালাল হিসেবে পরিচিত ছিল, তাদের মধ্যে মুসলিম লীগের আব্দুল আউয়াল খান, সাইদার রহমান, মওলানা মনছুর আলী, আব্দুল জব্বার, আবু তাহের, বিডি মেম্বার হানিফ ফারুকী এবং জামায়াতে ইসলামীর খোলাহাটীর মওলানা আব্দুল খালেক, ইয়াকুব উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ছাত্র সংঘ-এর কামরুল ইসলাম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া গাইবান্ধা কলেজের শিক্ষক রমজান আলী, রেজাউল আলম খন্দকার, আব্দুল ওয়াহাব লাবিব, আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল ও অফিস সহকারী আজিজার রহমান পাকবাহিনীর পক্ষে কাজ করে। এখানে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, বাড়ি-জায়গা দখল ও হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে রফিক কসাই, আব্দুল মজিদ টেইলার, কাজী কশিম উদ্দিন, মতিয়ার রহমান, রাজা মিয়া, আমানউল্লাহ, আতাউল্লাহ, গোলাম, মুজাহিদ কমান্ডার হযরত আলী, ফজলুল হক ব্যাটেলিয়ানের বদরুল প্রমুখ। এদের অনেকেই স্বাধীনতার পর দালাল আইনে গ্রেফতার হয়। এক হিসাব অনুযায়ী সদর উপজেলায় রাজাকারের সংখ্যা দেড়শত জনের মতো ছিল। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজাকার ও দালাল হিসেবে সদর উপজেলায় ৬২ জন গ্রেফতার হয়েছিল।
সদর উপজেলায় আলশামস বাহিনী গঠিত না হলেও স্বাধীনতাবিরোধী ফজলুল হক ব্যাটালিয়ান গঠন করা হয়। এ বাহিনীর প্রধান ছিল মাহবুবার রহমান নামে এক তেল ব্যবসায়ী। ডিবি রোডের নিবারণ সাহার দোকান দখল করে সেখানে এ বাহিনীর অফিস করা হয়। এরা সংখ্যায় ছিল ২০-২২ জন। শহরের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। খাঁ পাড়ার কাইয়ুম, মুকুল খাঁ, দুলাল, আঁখি, হাকিম, পূর্বপাড়ার বদরুল, পশ্চিমপাড়ার বাবলু, মাজু প্রমুখ এ বাহিনীর সদস্য ছিল।
গাইবান্ধায় আলবদর বাহিনীর ১১২ জন প্রশিক্ষিত সদস্য ছিল। গাইবান্ধা আনসার এডজুডেন্ট নূর আহমেদ পাকিস্তানপন্থী হওয়ায় তাকেই রাজাকার বাহিনীর প্রধান করা হয়। শহরের অবাঙালিদের অনেকেই মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে নানা অপকর্মে যুক্ত হয়। এরা শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনসহ পাকহানাদারদের সকল অপকর্মে সহায়তা করত। হত্যা, লুণ্ঠন, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কাজে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের স্থানীয় দালাল, রাজাকার, আলবদর, ফজলুল হক ব্যাটেলিয়ান ও মুজাহিদ বাহিনীর সহযোগিতায় তাদের ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্রগুলোতে নারীনির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন করত। গাইবান্ধা মহকুমা শহরের বড় ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। সোনার দোকানগুলোর প্রায় সবই ছিল হিন্দু ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন। পাকসেনারা ঢোকার পরপরই শহরের সোনার দোকানগুলো লুট হয়। প্রাণভয়ে হিন্দু ব্যবসায়ীরা শহর থেকে চলে গেলে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রথমে লুট এবং পরে দখল করে জামায়াত-মুসলিম লীগের সমর্থকরা। তখনকার প্রশাসন ও সেনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিজেদের নামে বিভিন্ন দোকান এমনকি বাড়ি পর্যন্ত বরাদ্দ নেয়। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মওলানা আব্দুল গফুরও ‘স্বর্ণশ্রী’ নামে একটি সোনার দোকান বরাদ্দ নেয়। আর দালালদের সহযোগিতায় পাকহানাদাররা একেকদিন উপজেলার একেক এলাকায় যেত এবং সেখানে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচার গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করত। যুবতীদের ক্যাম্পে নিয়ে এসে পৈশাচিক নির্যাতন চালাত। পরে তাদের প্রায় সবাইকে হত্যা করত। কামারজানী রাজাকার ক্যাম্পেও এ- ধরনের নির্যাতন করা হতো। এ উপজেলায় ২৭শে নভেম্বর একটি গণহত্যা সংঘটিত হয় কামারজানী গণহত্যা। এতে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী প্রাণ হারায়।
গাইবান্ধার হেলাল পার্কে স্থাপিত পাকক্যাম্প শুধু সদর থানা নয়, গোটা মহকুমার প্রধান নির্যাতনকেন্দ্র এবং বন্দিশিবির ছিল। এখান থেকে মহকুমার সকল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষকে ধরে এনে বন্দি অবস্থায় নির্যাতন ও পরে হত্যা করা হতো। এ ক্যাম্পে নারীদের ধর্ষণ ও হত্যার মূল হোতা ছিল পাঞ্জাব রেজিমেন্টের মেজর মেহমুদ, বালুচ রেজিমেন্টের মেজর আফজাল, লেফটেন্যান্ট নেওয়াজ রিজভি, ২৯ ক্যাভালরির মেজর তহসীন মির্জা, মেজর শের খান ও ক্যাপ্টেন খোককর। এছাড়া শহরের ভিএইড রোডের ওয়্যারলেস স্টেশন, বাদিয়াখালী ব্রিজ, গজারিয়া ব্রিজ এবং সন্যাসদহ ব্রিজ সংলগ্ন এলকায় পাকসেনারা ক্যাম্প স্থাপন করে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালায়। কামারজানী এলাকায় পনির মিয়ার ছেলে সালুর নেতৃত্বে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। সদর উপজেলার প্রধান বধ্যভূমি হলো পাকহানাদারদের সদর দপ্তর “হেলাল পার্ক বধ্যভূমি। এ বধ্যভূমি সংলগ্ন শাহ্ কফিল উদ্দিনের গুদাম একটি বড় গণকবর। এদুটি স্থানে শতশত মানুষকে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়া হয়। কামারজানির রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে পাকহানাদাররা হত্যাকাণ্ড চালাত। এখানে নিহতদের কামারজানি বাজারের দক্ষিণে একটি গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হয়। এছাড়া নান্দিনা যুদ্ধ-এ মুক্তিযোদ্ধাদের বিপর্যয়ের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসীদের অনেককে একটি কবরে মাটিচাপা দেয়া হয়। সেখানে পাকহানাদারদের হাতে ধরা পড়ে নির্যাতনে শহীদ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কের বিসিক শিল্পনগরীর কাছে কবর দেয়া হয়। এ-যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করে পাকহানাদারদের হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা দলটিকে রক্ষাকারী দুই বীর যোদ্ধা ওমর ফারুক ও ইসলাম উদ্দিন। এঁরা সাহারবাজারে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে শহীদ হন। পরে স্থানীয় জনগণ এ দুই বীর যোদ্ধাকে গাইবান্ধা-সাদুল্যাপুর সড়কের উত্তরপাশে চক গয়েশপুর গ্রামের বাঁশঝাড়ে কবরস্থ করেন। গাইবান্ধা- ত্রিমোহনী সড়কের পুলিশ লাইনের পশ্চিম পাশে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে নিহত মাতৃভাণ্ডারের মালিক উপেন চন্দ্র রায় ও যোগেশ চন্দ্র রায়ের সমাধি রয়েছে।
মহকুমা শহরের সঙ্গে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাদিয়াখালী সড়ক সেতুর অনিবার্যতা বিবেচনা করে মাহাবুব এলাহী রঞ্জু এবং রোস্তম আলী খন্দকারের দুটি কোম্পানি যৌথভাবে অপারেশনের পরিকল্পনা করে। ২৭শে আগস্ট তাঁরা এলএমজি, স্টেনগান, এসএলআর, রাইফেল ও গ্রেনেড নিয়ে নৌকাযোগে পরিকল্পনামেতা সেতুটির দুই পাশে ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারারত সেনা ও রাজকারদের বাংকার আক্রমণ করেন। একটানা আধ ঘণ্টা গুলি বিনিময় হলেও শত্রুপক্ষ পিছু না হটায় রঞ্জু কোম্পানির জুবেল এবং রোস্তম কোম্পানি-র সামছুল আলম অসীম সাহসিকতায় পাক হানাদারদের কাছে গিয়ে বাংকারের উপর ১০টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। হানাদাররা এই গ্রেনেড আক্রমণে টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিকার মো. ইকবাল মাজুর তাৎক্ষণিক উদ্যোগ ও চেষ্টায় ডিনামাইট দিয়ে সেতুটির এক অংশ ধ্বংস করে দেয়া হয়।
গাইবান্ধা শহর থেকে মহকুমার উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের দরিয়াপুর সেতু ধ্বংসের পরিকল্পনা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সে অনুযায়ী মাহাবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে তাঁর কোম্পানির ১০০ জন সদস্য সুন্দরগঞ্জ থানার শ্রীপুরে অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর রাতে সেতুর উভয় প্রান্তে পাহারারত শত্রুসেনাদের সঙ্গে তাঁদের ভীষণ যুদ্ধ শুরু হয়। শত্রুপক্ষ পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেলে ইঞ্জিনিয়ার ওয়াশিকার মো. ইকবাল মাজুর চেষ্টায় ডিনামাইট বসিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সেতুটি ধ্বংস করেন। সফল অভিযান শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার পথে সেতু থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে মাঠেরহাটে পৌঁছালে তাঁদের ওপর হানাদাররা অতর্কিতে হামলা করে। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হন। গুলি বিনিময় করতে-করতে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে আহতদের দ্রুত মুক্ত এলাকায় পাঠিয়ে দেন। তাঁরা সুন্দরগঞ্জ থানার ছাপরহাটি এলাকায় আশ্রয় নেন। ১৭ই সেপ্টেম্বর পাকহানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেললে গুলি বিনিময় শুরু হয় এবং বিকেল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। এখানে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। দরিয়াপুর ব্রিজ অপারেশন-এ পাকবাহিনীর কমপক্ষে ২০-২৫ জন সেনা হতাহত হয়।
গাইবান্ধা শহর থেকে পলাশবাড়ির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কের সাকোয়া ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। -এ লক্ষ্যে সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনাতে একটি গোপন আস্তানা নির্ধারিত হয়। কোম্পানি কমান্ডার সাইফুল ইসলাম সাজা এবং গোয়েন্দা গ্রুপের প্রধান ফজলুল রহমান রাজার নেতৃত্বে ১৮ই অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নান্দিনাতে পাকবাহিনীর একটি যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। অপরপক্ষে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ১৬ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। যুদ্ধকৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের দিক থেকে নান্দিনা যুদ্ধ এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধে একটি বড় ও আলোচিত ঘটনা। ৭ই ডিসেম্বর গাইবান্ধা হানাদারমুক্ত হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনী ৩রা ডিসেম্বর ফুলছড়ি স্টিমার ঘাট ও ৪ঠা ডিসেম্বর গাইবান্ধা রেলস্টেশনের পাশে বোমাবর্ষণ করে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ৫ই ডিসেম্বর গভীর রাতে স্টেডিয়াম ছাউনি থেকে পাকিস্তানি সেনারা রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে ট্যাংক বহরসহ পালিয়ে যায়। ৬ই ডিসেম্বর বিকেলে সাদুল্যাপুর গাইবান্ধা সড়ক দিয়ে মাদারগঞ্জ হয়ে ভারতীয় জেনারেল লছমন সিং-এর নেতৃত্বাধীন ৩৪০ মাউন্ট ব্রিগেডের একটি ট্যাংক বহর সাদুল্লাপুর হয়ে গাইবান্ধা উপজেলা নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরদিন ৭ই ডিসেম্বর কোম্পানি কমান্ডার মাহাবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা প্রথম গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করেন। অন্য একাধিক দলও একই দিন শহরে প্রবেশ করে। সকল মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন এসডিও মাঠে (বর্তমানে স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ) সমবেত হন। সেখানে বিকেলে দশ সহস্রাধিক মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা জানায়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- এ টি এম খালেদ, বীর প্রতীক- (পিতা গোলাম মওলা প্রামাণিক, মধ্যপাড়া) ও মো. মাহাবুব এলাহী রঞ্জু, বীর প্রতীক- (পিতা ফজলে এলাহী, মুন্সিপাড়া)।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন- বদিউল আলম চুনী (পিতা বছির উদ্দিন আহমেদ, গোডাউন রোড, গাইবান্ধা সদর), আবুল কাশেম খোকা (পিতা ইসমাইল হোসেন, পশ্চিম পাড়া, গাইবান্ধা শহর), নজরুল ইসলাম (পিতা নিজামউদ্দিন, মুন্সীপাড়া, গাইবান্ধা সদর), আসাদুজ্জামান নবাব (পিতা আজিজার রহমান, মহুরীপাড়া, গাইবান্ধা সদর), শহিদুল হক চৌধুরী (পিতা আবু মো. ফজলুল করিম, স্টেশন রোড, গাইবান্ধা সদর), এ কে এম হামিদুর রহমান (পিতা মোজাহার উদ্দিন, আহমেদ ফলিয়া, বোয়ালী ইউনিয়ন), মো. নবীর হোসেন কামাল উদ্দিন (থানসিংপুর, বোয়ালী ইউনিয়ন), আহম্মেদ আলী (পিতা মো. শমসের আলী, কুপতলা ইউনিয়ন), এ কে এম মাহবুবর রহমান জাহাঙ্গীর (পিতা আব্দুস সালাম, স্কুলের বাজার, কুপতলা ইউনিয়ন), হায়দার আলী বেপারী (পিতা হাফেজ উদ্দিন বেপারী, মীরপুর, সাহাপাড়া ইউনিয়ন), আব্দুস সামাদ (পিতা গোলজার রহমান আকন্দ, চকবরুল, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন), আলতাফ হোসেন (পিতা গরীবউল্লাহ, রামনাথের ভিটা, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন), আবুল হোসেন কালু শেখ (পিতা রিফাইতপুর, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন), আবুল হোসেন (পিতা কাইম উদ্দিন, রিফাইতপুর, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন), ছাবেদ আলী (পিতা জমসের আলী, বালাআটা, গোবিন্দপুর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন), আবুল হাসান (পিতা রশিদুজ্জামান, পূর্ব কোমরনই, খোলাহাটি ইউনিয়ন), ডা. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (স্টেশন রোড, গাইবান্ধা সদর), আবু তালেব মিয়া (পিতা মো. আব্দুল মজিদ, মুন্সীপাড়া, গাইবান্ধা শহর), আব্দুস সোবহান (পিতা বাবর আলী মিয়া, মুন্সীপাড়া, গাইবান্ধা শহর), আব্দুল মোতালেব মহসিন (পিতা আলী মণ্ডল, থানসিংপুর, বোয়ালী ইউনিয়ন), আজিজুল হক (পিতা কাউসার উদ্দিন, নারায়ণপুর, বল্লমঝাড় ইউনিয়ন), আব্দুল কুদ্দুস (পিতা মনিরউদ্দিন আকন্দ, পলাশপাড়া, গাইবান্ধা সদর), সদরুজ্জামান হায়াত (পিতা উদ্দিন আহমেদ, সাদুল্যাপুর রোড, গাইবান্ধা সদর), গিয়াস উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা দসিম উদ্দিন, প্রামানিক, পশ্চিম বারবলদিয়া, মালিবাড়ি ইউনিয়ন) এবং মহির উদ্দিন সরকার (পিতা সফর মাহমুদ, গোবিন্দপুর, গাইবান্ধা সদর)।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্মারকস্তম্ভ, স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— গাইবান্ধা পৌরপার্কের স্বাধীনতার বিজয়স্তম্ভ, এর সংলগ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফলক, শহরের পশ্চিম পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, মুন্সীপাড়া শহীদ মিনার, শহরের পৌরপার্কে বীর প্রতীক এ টি এম খালেদ দুলু পত্রিকাফলক, মধ্যপাড়ায় খালেদ দুলু, বীর প্রতীকের প্রতিকৃতি সম্বলিত স্মারকস্তম্ভ, শহরের মহুরিপাড়ার শহীদ আসাদুজ্জামান নবাব পত্রিকাফলক, গাইবান্ধা ত্রিমোহনী সড়কের মাতৃভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী দুই ভাইয়ের সমাধিস্তম্ভ, পৌর এলাকায় শহীদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সড়ক ও খালেদ দুলু, বীর প্রতীক সড়ক। এছাড়া তৎকালীন এসডিও মাঠের নতুন নামকরণ করা হয়েছে স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড