You dont have javascript enabled! Please enable it!

গাছবান যুদ্ধ (পানছড়ি, খাগড়াছড়ি)

গাছবান যুদ্ধ (পানছড়ি, খাগড়াছড়ি) সংঘটিত হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ভারতীয় মিত্রবাহিনী – ও মুক্তিবাহিনী – খাগড়াছড়িতে পাকবাহিনী
মিজোবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালায়। গাছবান যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকহানাদাররা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দুশ জনের মুক্তিবাহিনীর একটি দল পানছড়ি থেকে খাগড়াছড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। দলটি ৩টি গ্রুপে বিভক্ত ছিল। ইপিআর-এর নায়েক সুবেদার কমান্ডার খায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল, পুলিশের মাহমুদুলের নেতৃত্বে একটি দল ও শার্লি কোম্পানির কমান্ডার আলী আশরাফের নেতৃত্বে ছিল অপর একটি দল। এ ৩টি দল এক সঙ্গে খুব সতর্কতার সঙ্গে পানছড়ি থেকে খাগড়াছড়ির দিকে পায়ে হেঁটে অগ্রসর হচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন- আনোয়ার আলী (পিতা মো. সুরত আলী), শিশু মিয়া (পিতা ইদ্রিস মিয়া), কালা মিয়া, জুলফু মিয়া (পিতা লুতু মিয়া), নোয়াব আলী (পিতা আলী আজম), আলী আহম্মদ (পিতা মো. সফর আলী), মজিব, রাজা মিয়া, নুর আহম্মদ, মোসলেম উদ্দিন, মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ হাকিম, আবদুল মান্নান, সিরাজ মিয়া (পিতা আলী আহম্মদ), জুনাব আলী, জয়নাল আবেদীন, দিলীপ বড়ুয়া (পিতা লহড়ী বড়ুয়া), ফটিক মিয়া প্রমুখ।
সকাল দশটার দিকে দলটি পানছড়ির গাছবান এলাকায় পৌঁছলে রাস্তার পাশে আগে থেকেই হলুদের ক্ষেতে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায়। গুলির শব্দ শুনেই মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক হয়ে যান এবং মুহূর্তের মধ্যেই তাঁরা রাস্তার অপর পাশে পজিশন নিয়ে পাল্টা গুলি চালান। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে গোলাগুলি চলে। এ-সময় পাকিস্তানি বাহিনী প্রায় ৩-৪ ম্যাগাজিন গুলি ছোড়ে। প্রচণ্ড গোলাগুলির এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে গুলি ছুড়তে-ছুড়তে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দুঃসাহসিকতায় শত্রুসৈন্যরা দিগ্বদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারা দ্রুত পজিশন উইথড্র করে পিছু হটে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও গুলি ছুড়তে-ছুড়তে পাকিস্তানি সেনাদের ধাওয়া করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে যায়। এ- যুদ্ধে অবশ্য কেউ হতাহত হয়নি।
এরপর আলী আশরাফের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি পাহাড়ি পথ দিয়ে দীঘিনালার দিকে, সুবেদার খায়রুজ্জামানের দলটি খাগড়াছড়ি ও মাহমুদুলের নেতৃত্বাধীন দলটি রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের দিকে চলে যায়। [ইয়াছিন রানা সোহেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!