You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক গাজী আব্দুল ওয়াহিদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক গাজী আব্দুল ওয়াহিদ

গাজী আব্দুল ওয়াহিদ, বীর প্রতীক (১৯৩১-১৯৯৭) নায়েক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩১ সালের ১০ই মে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার মঙ্গলসি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আসমত আলী গাজী এবং মাতার নাম হাজেরা খাতুন। তিনি ১৯৪৯ সালে পটুয়াখালী জেলার কাশীপাড়া হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। তিনি ছিলেন ইপিআর বাহিনীর একজন সদস্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ নিরীহ বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করলে এর প্রতিবাদ ও দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। তিনি ৯নং সেক্টরে এসব যুদ্ধ করেন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম এ জলিল।
গাজী আব্দুল ওয়াহিদ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে যশোর ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সের অস্ত্রাগারের দায়িত্বে ছিলেন। পাকবাহিনী ২৫শে মার্চ গভীর রাতে যশোর ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স আক্রমণ করে। সেখানে বাঙালি ও অবাঙালি ইপিআরদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ শেষে পাকসেনারা যশোর সেনানিবাসে চলে যায়। পরদিন যশোরে ইপিআর-এর সেক্টর কমান্ডার পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট আসলাম বাঙালি ইপিআর- দের অস্ত্র জমা দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তাঁরা সে নির্দেশ মানেননি। ৩০শে মার্চ ভোরে যশোর সেনানিবাসে গোলাগুলির শব্দ শুনে ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে অবস্থানরত বাঙালি সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন হাবিলদার কাজী তৈয়বুর রহমানের নির্দেশে তিনি ও সিপাহি আব্দুল গণি সাবল দিয়ে অস্ত্রাগারের তালা ভেঙ্গে অস্ত্র নিয়ে যশোর শহরের বিভিন্ন স্থানে ডিফেন্সে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনী সেনানিবাসে ফিরে যায়। ৩রা এপ্রিল পাকবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। শত্রুদের গোলার আঘাতে বাঙালি যোদ্ধারা টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। যশোর শহরের পূর্ণ দখল পাকবাহিনীর হাতে চলে যায়। এরপর গাজী আব্দুল ওয়াহিদ তাঁর দলের সঙ্গে মেহেরপুর হয়ে ভারতে চলে যান। ভারতে তাঁরা সুসংগঠিত হয়ে আবার মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার নায়েক গাজী আব্দুল ওয়াহিদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ১৯৯৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি পরলোক গমন করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম মিসেস বানু বেগম। এ দম্পতির ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড