গয়নাঘাটা ব্রিজ বধ্যভূমি (গৌরনদী, বরিশাল)
গয়নাঘাটা ব্রিজ বধ্যভূমি (গৌরনদী, বরিশাল) বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলায় অবস্থিত। ২৫শে এপ্রিল থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করে।
স্থলপথে দক্ষিণাঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অনুপ্রবেশের সময় গৌরনদীর মুক্তিযোদ্ধারা কটকস্থলে তাদের প্রতিরোধ করেন। এ কারণে হনাদাররা গৌরনদী কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের ক্যাম্পের কাছেই গয়নাঘাটা খালের ওপর ছিল গয়নাঘাটা ব্রিজ। এখানে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। তারা প্রতিদিনিই বিভিন্ন জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নির্যাতন শেষে হত্যা করত। ২৫শে এপ্রিল থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত হানাদার বাহিনী এখানে একাধিকবার গণহত্যা চালায়। ২১শে জুলাই থানা রাজাকার কমান্ডার আফতাবউদ্দিন মিয়ার নির্দেশে তার পুত্র সাহাবুদ্দিন মিয়া মুক্তিযোদ্ধা ধুন্দ বিমল চন্দ্র দাস (ধুন্দ)-এর পিতা ও ভাইসহ ১৩ জনকে ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। তাদের এ ব্রিজের ওপর গুলি করে হত্যা করা হয়। গয়নাঘাটা ব্রিজ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া নান্নু, হাতেম পিয়নের পুত্রবধূ রওশন আরা (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক) প্রমুখ। হানাদাররা বিভিন্ন জায়গা থেকে সাধারণ মানুষ ধরে এনে এ ঘাটে লাইনে দাঁড় করিয়ে কখনো ব্রাশফায়ারে আবার কখনো জবাই করে হত্যা করে লাশগুলো খালে ফেলে দিত। তাদের অনেকের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। পাকিস্তানি বাহিনী চলে যাওয়ার পর এখানে অনেক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে। গয়নাঘাটা ব্রিজ বধ্যভূমিতে শহীদ ১৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন— আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলার কালিচরণ দাস (৮৫), নির্মল চন্দ্র দাস (৩৫), উপেন পিয়ন (৩০), শিবু লাল দত্ত (৫০), খোকা বাবু দত্ত (৩০), সিদ্ধেশ্বর দত্ত (৪৫), বিশ্বেশ্বর দত্ত (৫৫), সুরেন ঠাকুর (৪০), সুভাষ দাস (৪৫), রেনু পদ ডাক্তার (৩৫), চিন্তা হরণ দত্ত (৫০), ফুল্লশ্রীর নলিনী দত্তের জামাতা (৩০), নলিনী দত্তের জামাতার ভাই (৪০), রামচন্দ্র বাড়ৈ (৪৫), দ্বিজবর বাড়ৈ (৫০), মানসিক প্রতিবন্ধী বিশ্বনাথ দাস (ছয়গ্রাম, গৌরনদী) ও হাকিম দেওয়ান (৪০) (টরকী, গৌরনদী)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড