You dont have javascript enabled! Please enable it!

গগনবাড়িয়া গণহত্যা (দুর্গাপুর, রাজশাহী)

গগনবাড়িয়া গণহত্যা (দুর্গাপুর, রাজশাহী) সংঘটিত হয় ২২শে এপ্রিল। এ নিষ্ঠুর গণহত্যায় গগনবাড়িয়া ও আশপাশের গ্রামের অনেক লোক শহীদ হন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের নাম পাওয়া যায়।
গগনবাড়িয়া গ্রামটি রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত। গগনবাড়িয়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আসা- যাওয়া ছিল। মাঝে-মাঝেই মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের কাজীপাড়া ক্যাম্প থেকে এ এলাকায় অপারেশন করতে এসে চুনিয়াপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা করিম মোল্লা ও সানোয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজের বাড়িতে অবস্থান করতেন। স্থানীয় দালালরা বিষয়টি টের পেয়ে যায় এবং আবদুল ওয়াহেদ মোল্লা (দুর্গাপুর থানা শান্তি কমিটি-র চেয়ারম্যান) বিষয়টি দালাল আয়েন উদ্দিন (রাজশাহী জেলা শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য)-কে জানায়। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত হানাদার ক্যাম্পে গিয়ে পাকবাহিনীকে খবর দেয়।
২২শে এপ্রিল সকাল ১০ ঘটিকায় পাকবাহিনী তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এক গ্রুপ নওহাটা-বড়গাছি, এক গ্রুপ হাটরামচন্দ্রপুর-হাটগোদাগাড়ী এবং এক গ্রুপ দুর্গাপুর হয়ে গগনবাড়িয়ায় আসে। তাদের নেতৃত্ব দেয় ক্যাপ্টেন ইলিয়াস। এদিন তারা গগনবাড়িয়াসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে চরম নৃশংসতা চালায়। তারা গগনবাড়িয়া গ্রামের নিরীহ মানুষজনকে ধরে গগনবাড়িয়া মোড় থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা মাঠে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। সেদিন গগনবাড়িয়া গ্রামে গণহত্যায় শহীদ ১৫ জনের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন- মো. লুৎফর রহমান (পিতা মো. সোলেমান সরকার, শ্রীপুর), কালু শেখ (পিতা আবদুর রহমান শেখ, শ্রীপুর), আবদুর রহমান (পিতা ভিক্ষু মণ্ডল, বেড়া), মো. ওসমান আলী (পিতা মো. তারেক রহমান, বেড়া), আবদুল করিম সরদার (পিতা মো. ভোদা সরদার, গগনবাড়িয়া), মো. কান্দু (গগনবাড়িয়া), মো. ওয়াবাইদুল হক (পিতা জুমন সরদার, গগনবাড়িয়া), মো. টোকাই মণ্ডল (গগবাড়িয়া), লোহাই বেপারী (গগনবাড়িয়া), মো. পাতান মণ্ডল (গগনবাড়িয়া), মো. জামের আলী (পিতা জুমন আলী, গগনবাড়িয়া), আবদুল খালেক (পিতা আবদুল মালেক, আমগ্রাম), আবদুল জলিল (পিতা আবদুল ওয়াহেদ, সাকোয়া), মো. সেরু (পিতা মো. মানিক, চুনিয়াপাড়া) ও আবদুল করিম মণ্ডল (চুনিয়াপাড়া)। এদিন মোসলে মণ্ডল (পিতা লফর মণ্ডল, গগনবাড়িয়া)-কে পাকবাহিনী গুলি করলেও তিনি আহত অবস্থায় রক্তাক্ত লাশের ওপর পড়ে বেঁচে যান। একই দিন পাকবাহিনী দুর্গাপুর উপজেলার কুশিয়াডাঙ্গা, তিয়ারকুরি, লক্ষ্মীপুর প্রভৃতি গ্রাম থেকে শতাধিক মানুষকে ধরে এনে গগনবাড়িয়া খোলা ফসলি মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পাকবাহিনী চলে গেলে কিছু লাশ গ্রামবাসীরা নিজ-নিজ বাড়িতে এবং কিছু লাশ গগনবাড়িয়া গণহত্যার স্থলে কবর দেয়। গগনবাড়িয়া গণকবরের পাশে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!