You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.23 | গঙ্গাসাগর গণহত্যা (আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) - সংগ্রামের নোটবুক

গঙ্গাসাগর গণহত্যা (আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

গঙ্গাসাগর গণহত্যা (আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ২৩শে আগস্ট সংঘটিত হয়। এতে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ৩২ জন মানুষ শহীদ হন। তাদের একই গর্তে গণকবর দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-দালালরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হত্যা, লুণ্ঠন ও নারীনির্যাতনের ঘটনা ঘটায়। এ উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের টানমান্দাইল ও জাঙ্গাল গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ছিল আওয়ামী লীগ-এর সমর্থক এবং স্বাধীনতাকামী। স্থানীয় দালালদের তা অজানা ছিল না। তারা হানাদার ক্যাম্পে গিয়ে জানায় যে, এ দুটি গ্রামের অধিকাংশ পরিবারেই মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে এবং গ্রাম দুটিতে অভিযান চালালে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ করানো সম্ভব হবে। এ সংবাদের ভিত্তিতে ২২শে আগস্ট বিকেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিশাল একটি গ্রুপ টানমান্দাইল ও জাঙ্গাল গ্রামে প্রবেশ করে এবং ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ১৩০ জন মানুষকে আটক করে গঙ্গাসাগর দিঘির পাড়ে তহসিল কাছারিতে স্থাপিত হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। রাতে ক্যাম্পের পাশের একটি মসজিদে নিয়ে আটককৃতদের ওপর নির্যাতন চালায়। ২৩শে আগস্ট রাতে সবাইকে গঙ্গাসাগর দিঘির পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তাদের মধ্য থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাছাই করে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়। অতঃপর ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ৩২ জনকে সেখানে গুলি করে হত্যা করে এবং একই গর্তে তাদের মাটিচাপা দেয়। এদিনের শহীদরা হলেন- রামজুল হক মুন্সি (টানমান্দাইল), তারা চান্দ মোল্লা (টানমান্দাইল), খেলু মিয়া (টানমান্দাইল), বারুদ মিয়া (টানমান্দাইল), তারু মিয়া মুন্সি (টানমান্দাইল), আবুল বাসার (টানমান্দাইল), ডা. আবু তাহের (টানমান্দাইল), তোতা মিয়া (টানমান্দাইল), আবুল হাশেম মোল্লা (টানমান্দাইল), গোলাম মওলা মোল্লা (টানমান্দাইল), গোলাম কাদির মেম্বার (টানমান্দাইল), আবদুল খালেক মোল্লা (টানমান্দাইল), হায়দার আলী (টানমান্দাইল), শামসু সরকার (টানমান্দাইল) মোজাউল হক সরকার (টানমান্দাইল), আবদুল মন্নাফ মিয়া (টানমান্দাইল), আবদুস সোবহান মিয়া (টানমান্দাইল), রাজু মিয়া (টানমান্দাইল), আবুল ফায়েজ (টানমান্দাইল), রিয়াজ উদ্দিন (টানমান্দাইল), আবদুল হান্নান (টানমান্দাইল), আবদুল গণি (টানমান্দাইল), জজু মিয়া ওরফে নসু মিয়া (টানমান্দাইল), সাধন মিয়া (জাঙ্গাল), ওমর আলী (জাঙ্গাল), মোসলেম মিয়া (জাঙ্গাল), মালু মিয়া (জাঙ্গাল), ডেংগু মিয়া (জাঙ্গাল), সরল মিয়া (জাঙ্গাল), হেলাল মিয়া (জাঙ্গাল) ও আবু মিয়া (গাংভাঙ্গা)। এদিন আরো একজন হত্যার শিকার হন। তিনি হলেন ফজলুল হক (গঙ্গাসাগর, দিঘিরপাড়)। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড