You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে গজারিয়া উপজেলা (মুন্সীগঞ্জ)

গজারিয়া উপজেলা (মুন্সীগঞ্জ) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। চারদিক নদীবেষ্টিত এ উপজেলা শিল্প- কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেঘনা ও গোমতী নদীর অববাহিকায় ৫১ বর্গমাইল আয়তনের জনপদটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার অংশ চলে গেছে গজারিয়ার ওপর দিয়ে। হানাদার বাহিনীর সমস্ত সৈন্য ও অস্ত্রের রসদ সরবরাহ হতো এ সড়ক দিয়ে। ঐতিহাসিকভাবেই এখানকার মানুষ রাজনীতি-সচেতন। ১৯৬৬ সালের ৬-দফা এবং ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে এ অঞ্চলের মানুষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ছাত্রনেতা হাফিজ আহমেদ, আব্দুল খালেক আলো, ফজলুল হক, আবুল কাসেম, আলী আহমেদ প্রমুখ পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে <আওয়ামী লীগ- প্রার্থী অধ্যাপক কে এম শামসুল হুদা এমপিএ নির্বাচিত হন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে ষড়যন্ত্র শুরু করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন- শুরু এবং এর ধারাবাহিকতায় ৭ই মার্চ তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে
মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে।
২৫শে মার্চ বিকেলে অধ্যাপক কে এম শামসুল হদা এমপিএ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে এলাকায় গিয়ে ফেরিগুলো রামচন্দ্রপুরে পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।
শামসুল হুদা রাতে গজারিয়ায় এসে মেঘনা ও বাউশিয়া ফেরিঘাটের সুপারভাইজার আলী আহাম্মদ ও মো. ছিদ্দিকুর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশের কথা জানান। সঙ্গে-সঙ্গে ফেরিগুলো রামচন্দ্রপুরের দিকে পাঠিয়ে দেন।
গজারিয়া থেকে আগরতলার দূরত্ব বেশি নয়৷ ভৌগোলিকভাবে গজারিয়ার অবস্থান ভারত সীমান্তের করিডোরের মতো। এপ্রিল মাসের পর প্রতিদিন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, শরিয়তপুরসহ দূর- দূরান্ত থেকে শতশত যুবক গজারিয়ার ভবেরচর পশু চিকিৎসালয়ে এসে জড়ো হতে থাকে। এখান থেকেই তাদের ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গজারিয়ার যুবকরা ভারতে যেতে শুরু করে। ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে আগস্ট মাসে তারা এলাকায় ফিরতে শুরু করে। এ সময়ে দুই শতাধিক যুবক ভারত থেকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং লাভ করে।
২৫শে মার্চের পর মানুষ বাঁচার তাগিদে স্রোতের মতো ঢাকা শহর ছেড়ে সড়ক ও নৌপথে গ্রামের বাড়ি যেতে শুরু করে। বরিশাল ও চাঁদপুরগামী লঞ্চের যাত্রাবিরতির সময় প্রতিদিন অসংখ্য লঞ্চযাত্রী গজারিয়া ঘাটে আশ্রয় নেয়। মার্চ মাস থেকেই গজারিয়ার যুবকরা যাত্রীদের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে। এপ্রিল মাসের শুরুতে আবদুল খালেক আলোর নেতৃত্বে গোসাইরচর গ্রামে আলোর দিশারী নামে একটি ট্রেনিং সেন্টার গড়ে ওঠে। ২৫-৩০ জন যুবক বাঁশের লাঠি দিয়ে শরীরচর্চাসহ যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। গজারিয়া গ্রামের সতীশ কর্মকারের বাড়ির পেছনে যুবকদের আরেকটি গোপন আস্তানা গড়ে ওঠে। মে মাসে এ কে এম নজরুল ইসলাম (২ছাত্রলীগ- কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জগন্নাথ কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক)-এর নেতৃত্বে চরবাউশিয়া গ্রামে একটি ট্রেনিং সেন্টার গড়ে ওঠে। এখানে ১০-১২ জন যুবককে ৩০৩ রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এপ্রিল মাসে অধ্যাপক কে এম শামসুল হুদা এমপিএ মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য কিছু যুবককে ভারতের আগরতলায় পাঠান। মুক্তিযুদ্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করা, বিশেষ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ৪ঠা মে গজারিয়া পাইলট হাইস্কুলে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুহম্মদ আবুল কাশেম, হাসানুজ্জামান চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম পটল, হাফিজ আহমদ, আব্দুল খালেক আলো, ফজলুল হক, তানেস উদ্দীন আহমেদ, আলী আহমদ, আব্দুল মালেক, নজরুল ইসলাম, হাকিম ঢালী, কবির মাস্টার, শফিউল্লাহ (বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সভার সিদ্ধান্তক্রমে মে মাসের ৫ তারিখ থেকে গোসাইর চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোয়াজ্জেম (আব্দুল খালেক আলোর ভাই)-এর নেতৃত্বে সুবেদার আলীর নির্দেশনায় যুবকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এরপর ৯ই মে কিছু যুবককে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের মেঘালয় ও ত্রিপুরায় পাঠানো হয়। সেখানে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে তাঁরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে কিছু যুবক আনসার কমান্ডার ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত সৈনিকদের সহায়তায় প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ভরেবচর পশু হাসপাতাল ছিল প্রশিক্ষণার্থী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গোপন আস্তানা ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল। অধ্যাপক শামসুল হুদা এমপিএ-র নির্দেশে হাসপাতালের ভেটেরেনারি সার্জন সফিকুর রহমান চৌধুরী (মনোহরগঞ্জ, লাকসাম) এলাকার ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন, তাদেরকে ভারত যাওয়ার দিকনির্দেশনা দিতেন। তিনি স্বল্প সময়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়াসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করতেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।
এ উপজেলার যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন- মো. রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক – (এফএফ, ভাটেরচর), এ কে এম নজরুল ইসলাম (বিএলএফ) ও আব্দুল খালেক আলো (বিএলএফ) এবং ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন মো. তফাজ্জল হোসেন (এফএফ), মোজাম্মেল হক খোকা (বিএলএফ) ও মো. অলিউল্লাহ (বিএলএফ)। গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন মো. ফজলুল হক, মো. শহীদউল্লাহ, কাজী মহব্বত আলী, সোলাইমান মিয়া, ডি এম অলিউল্লাহ ও মো. আবদুর রহমান। পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে যুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক- এর নেতৃত্বে। ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নির্দেশে ও মো. রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসে দুবার ভাটেরচর ব্রিজ ভাঙ্গার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অবশেষে ১৪ই আগস্ট রাতে কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক টুয়াইসি তোফাজ্জলসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় ভাটেরচর নদীর ওপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ব্রিজটি এক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেন। উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা, যাতে পাকবাহিনী সহজে ও নির্বিঘ্নে মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে না পারে। ব্রিজ ভাঙ্গার পর ঢাকার সঙ্গে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি ভাটেরচর ব্রিজ অপারেশন নামে পরিচিত।
এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ৩০শে আগস্ট রাতে আনারপুর, ভিটিকান্দি, আলীপুরা ও ভবেরচর ব্রিজ ধ্বংস করেন। ব্রিজগুলো ভাঙ্গার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে পাকিস্তানিরা নৌ- যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দেয়। খালেদ মোশাররফ গেরিলাদের নৌপথে অপারেশন করার নির্দেশ দেন। অপারেশনের জন্য এনারগা [বিশেষ বোম] পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা বাউশিয়া ঘাটে ভেড়ানো একটি খালি ফেরিতে এনারগা লাগিয়ে বিস্ফোরণ ঘটান। ১৮ই অক্টোবর কালীবাজার মোল্লাকান্দি মোড়ে গ্রুপ কমান্ডার ফজলুল হক ও হাজীগঞ্জের শফিকসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এম বি পাবনা ও এম বি যশোর নামে দুটি ফেরি ডুবিয়ে দেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা আরো একটি ফেরি ডুবিয়ে দেন।
৯ই মে পাকবাহিনী গজারিয়া উপজেলায় অনুপ্রবেশ করে। এখানে তারা মোট ৭টি ক্যাম্প স্থাপন করে। এর মধ্যে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ছিল ৬টি ক্যাম্প। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী বাউশিয়া ফেরিঘাট ও মেঘনাঘাটে সড়ক ও জনপদ বিভাগের [সওজ] রেস্টহাউজে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে মধ্যবাউশিয়া ব্রিজ, ভবেরচর ব্রিজ, আনারপুর ব্রিজ ও ভাটেরচর ব্রিজে ক্যাম্প স্থাপন করে। ৭ই জুন হানাদার বাহিনী গজারিয়া থানা সদরের টিসি হলে ক্যাম্প স্থাপন করে। এখান থেকে তারা সমগ্র এলাকা পর্যবেক্ষণ করত। গজারিয়ায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর তৎপরতা ছিল। দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়ার জন্য ১৮ই মে গজারিয়া থানা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। ২৮ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক ছিল গজারিয়া ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য ও স্থানীয় মুসলিম লীগ- নেতা আবদুল গফুর চৌধুরী। যুগ্ম- আহ্বায়ক ছিল বালুয়াকান্দি ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আমজাদ আলী সরকার (টুকু মুনশি)। মে মাসের শেষের দিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে গজারিয়ায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। আবদুল জলিল চৌধুরী রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিল। মো. ছিদ্দিক, মোসলেম মিয়া, আবদুর রহিম, শামসুদ্দীন (শামসু কানা), নূর মোহাম্মদ নূরী, রাজা মুনশি, নাসির মুনশি, আনোয়ার হোসেন, বাবুল মিয়া, তোতা, মজিবর, আতাবর ও কলসেরকান্দির আমিরুল ইসলাম খান রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। মহাসড়কের হানাদার ক্যাম্পগুলোতে যারা রাজাকার হিসেবে নিয়োজিত ছিল, তাদের বেশির ভাগই ছিল বহিরাগত।
পাকবাহিনী ৯ই মে গজারিয়া ইউনিয়নের গোসাইরচর, গজারিয়া, নয়ানগর, নাজিরচর, বালুচর, নাগেরচর, দক্ষিণ ফুলদী ও সোনাইরকান্দি গ্রামে হামলা চালায়। এতে ৩ শতাধিক মানুষ নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এটি গজারিয়া গণহত্যা – নামে পরিচিত উপজেলার বালুয়াকান্দি, তেতৈলতলা, আলিপুরা ও বাউশিয়া গ্রামে হানাদার বাহিনী ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এতে শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও অসংখ্য বহিরাগত মানুষ গণহত্যার শিকার হয়। নিরাপদ ভেবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ থেকে বেশকিছু হিন্দু পরিবার গজারিয়া ও নয়ানগর গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও অন্যত্র থেকে আসা বেশকিছু ক্ষেতমজুর এ হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। শামসুদ্দীন চৌধুরী (শ্যাম মিয়া), গজনবী আহমেদ চৌধুরী (খোকা মিয়া), আবদুল গফুর চৌধুরী ও আবদুল জলিল চৌধুরীসহ কিছু স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি এ গণহত্যার জন্য দায়ী। তারাই পাকবাহিনীকে গোপনে খবর দেয়।
২২শে মে পাকহানাদার বাহিনী পুরান বাউশিয়া গ্রামের ৯টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। এ-সময় তারা ক্ষেতমজুর মনির হোসেনকে হত্যা করে। এর কয়েকদিন পর তারা মধ্য বাউশিয়া কৃষ্ণমন্দির ভাংচুর ও রামচরণ দাশের বাড়ির ১০টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। ১৪ই আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দর আলী, তফাজ্জল হোসেন ও আবদুল বাতেন বাচ্চুসহ কয়েকজন যুবক আলীপুরা রাজাকার ক্যাম্পে বোমা নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনার পরদিন দুপুরে ৬ জন রাজাকার হামলাকারীদের খুঁজতে চরপাথালিয়া গ্রামে যায়। তারা আলী আহমদ নামে এক যুবককে সামনে পেয়ে গুলি করে। এরপর তাকে বৈদ্যারবাজার থানায় নিয়ে গায়ে সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দেয়। পরদিন তাকে নারায়ণগঞ্জ এসিস্ট্যান্ট সাব মার্শাল ল আদালতে হাজির করা হয়। মার্শাল ল আদালত তাকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেয়। ১৭ই আগস্ট হানাদার বাহিনী আলীপুরা ও নয়াকান্দি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। তারা মসজিদের ভেতরে গিয়ে বাহর আলী নামের একজনকে হত্যা করে। রাজাকাররা ২২শে আগস্ট আবদুল বাতেন বাচ্চুকে তার শ্বশুরবাড়ি দাউদকান্দির দোনারচর থেকে গ্রেফতার করে। তাকে দাউদকান্দি আমি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে সহায়তা করার অভিযোগে আগস্ট মাসে কয়েকজন রাজাকার মধ্য বাউশিয়া প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হীরালাল রায় চৌধুরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে নিয়ে তাঁকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চাপ প্রয়োগ ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরদিন তাঁকে গজারিয়া থানায় পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে তাঁকে মুন্সীগঞ্জ মার্শাল ল আদালতে পাঠানো হয়। ঢাকায় তিন মাসের বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর তিনি ছাড়া পান। ২২শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা গজনবী আহমেদ চৌধুরী খোকা মিয়াকে তুলে নিয়ে গেলে হানাদাররা গভীর রাতে গজারিয়া গ্রামের মহানন্দ দাশের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ১৫টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ৭ই ডিসেম্বর ভবেরচর হত্যাকাণ্ডের পর হানাদার বাহিনী ভিটিকান্দি গ্রামে গিয়ে হোয়াইট ফসফরাস ছিটিয়ে ২৪টি ঘর পুড়িয়ে দেয়। তারা নব্বই বছর বয়সী ইসমাইল ফকিরকে ঘরের ভেতরে পুড়িয়ে মারে। ৯ই ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে পাকবাহিনীর দুই শতাধিক সদস্য মেঘনা ঘাটে আসে। তাদের একটি গ্রুপ বালুয়াকান্দি গ্রামে ঢুকে গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয় এবং মফিজ উদ্দিন নামে একজনকে হত্যা করে।
২৩শে নভেম্বর পাকহানাদার বাহিনী গজারিয়া বাজারের চা বিক্রেতা আরশাদ আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গজারিয়া ইউনিয়ন কাউন্সিলের বাংলোয় নিয়ে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। হানাদার বাহিনী বালুচর গ্রামের আবদুর রব রাড়ীকে বাংলোতে নিয়ে রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়।
গজারিয়ায় বহু নারী পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার হন। জুন মাসের কোনো এক রাতে হানাদার বাহিনী নয়ানগরের ১৫ বছরের মেয়ে তিলকীকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিনদিন পর তারা তিলকীকে ফেরত দিয়ে যায়। জুলাই মাসে স্থানীয় রাজাকাররা গজারিয়ার বাসন্তীকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে দিনের পর দিন ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে হানাদার বাহিনীর ৩ জন সদস্য টেকপাড়ায় ঢুকে সুফিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতন করে। ১০ই অক্টোবর সকালে পাঁচজন বিহারি পুলিশ নয়াকান্দি ঢুকে ১৬ বছর বয়সী মেয়ে রুবিয়া খাতুনকে নির্যাতন করে। গজারিয়া থানা হেডকোয়ার্টার্স পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল।
গজারিয়া থানা হেডকোয়ার্টার্স সংলগ্ন গোসাইরচর গ্রামে শতাধিক গ্রামবাসীর একটি গণকবর রয়েছে। এটি গজারিয়া গণকবর নামে পরিচিত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ফেরিঘাটের কাছে একটি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। অধ্যাপক কে এম শামসুল হুদা এমপিএ-র নেতৃত্বে গর্ত খুঁড়ে সেখান থেকে অসংখ্য গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পাকবাহিনী মেঘনাঘাটে যাত্রীবাহী বাসে নিয়মিত তল্লাশি চালাত। কাউকে সন্দেহ হলে বাস থেকে নামিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন কিংবা হত্যা করত। মেঘনাঘাটের এ বধ্যভূমি ১৯৮৮ সালে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
গজারিয়ায় দুভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। একটি মহাসড়ক কেন্দ্রিক এবং অপরটি থানা কেন্দ্রিক। ১৪ই আগস্ট রাত ১টার দিকে চর বাউশিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনা ও রাজাকারদের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয়। গ্রুপ কমান্ডার মো. ফজলুল হকের (গুয়াগাছি) নেতৃত্বে ৭৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে ৪ জন রাজারকার নিহত হয় এবং পাকসেনা ও অন্য রাজাকাররা পালিয়ে যায়। এ অপারেশনে কমান্ডার মো. ফজলুল হক ও তৌহিদসহ ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে ভবেরচর ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে মুক্তিযোদ্ধা শওকত ওসমান বসা ছিলেন। এ-সময় দুই পাকিস্তানি গোয়েন্দা তাকে নৌকার মাঝি ভেবে নদী পার করে দিতে বলে। ওসমান তাদের নৌকায় তুলে ভিটিকান্দি নদীতে নিয়ে যান। মাঝ নদীতে গিয়ে তিনি বৈঠা দিয়ে নৌকার তলি ফুটো করে দেন। মুহূর্তেই নৌকাটি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে দুই গোয়েন্দা জীবন বাঁচাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ওসমান প্রথমে নৌকার বৈঠা এবং এরপর বেয়নেট দিয়ে আঘাত করলে তারা নিহত হয়।
১০ই অক্টোবর ৫ জন পুলিশ পোড়াচক বাউশিয়া থেকে এক যুবতী মেয়েকে নৌকায় তুলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকায় গুলি করে। এতে একজন পুলিশ নিহত হয়। গুলিতে নৌকার তলা ছিদ্র হয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা চার পুলিশকে বন্দি ও তিনটি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করেন। এরপর মতলবে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়। পাক হানাদাররা মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজি করত। তারা নৌকার যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিত। ২৭শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মেঘনা নদীর কান্দারগাঁও গ্রামের কাছে হানাদার বাহিনীর নৌকায় আক্রমণ করে দুই হানাদারকে হত্যা করেন।
২৭শে আগস্ট গভীর রাতে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকবাহিনীর দোসর আবদুল মজিদ কারীর বাড়ি ঘেরাও করেন। তাঁরা মজিদ কারী ও তার দুই ছেলে গোলাম মোস্তফা ও আমানউল্লাহকে তুলে নিয়ে যান। কাঠালিয়া নদীতে বেয়নেট চার্জ করে তাদের হত্যা করা হয়। ২১শে নভেম্বর বিকেলে গজারিয়া গণহত্যার অন্যতম কুশিলব গজনবী আহমেদ চৌধুরী (খোকা মিয়া)-কে গেরিলারা গজারিয়া বাজার থেকে তুলে নিয়ে যান। ফুলদী নদীর ভাসমান ক্যাম্পে তিনদিন আটকে রেখে ২৪শে নভেম্বর সন্ধ্যায় দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে তাকে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করা হয়। গজারিয়ার রাজাকারদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল ছিদ্দিক। সে গ্রামের অসহায় পরিবারের যুবতী নারীদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যেত। মুক্তিযোদ্ধারা ২০শে নভেম্বর রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে হত্যা করে হোগলাকান্দি খালে ফেলে দেয়। ১১ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা জাহাঙ্গীর নামক এক রাজাকারকে হত্যা করে মেঘনা নদীতে লাশ ফেলে দেয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে শান্তি কমিটির সদস্য আফসার উদিন খান (বলাকী), মুজাফ্ফর রাড়ী (গোসাইরচর) ও ইউসুফ আলী মোল্লাহকে (নয়ানগর) হত্যা করে।
গজারিয়া সদরে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণের উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ফুলদী নদীতে বেশ কয়েকটি নৌকায় অবস্থান নেন। ক্যাম্পের খোঁজখবর নেয়ার জন্য তাঁরা আমিরুল ইসলাম, আহসান উল্লাহ ও নূরুল হক নামে তিন কিশোরকে নিয়োগ করেন। কিশোররা পাকবাহিনীর দোসর, রাজাকার ও থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে খবর সংগ্রহ করত। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প আক্রমণের জন্য আমিরুল ইসলামের ঘরে অস্ত্র রাখতেন। আমিরুল ইসলাম ইলিশ মাছের ডালা মাথায় নিয়ে আর্মি ক্যাম্প রেকি করেন। কিশোরদের সহযোগিতায় ১৯শে নভেম্বর গোসাইরচর খেয়াঘাটে মুক্তিবাহিনীর কাছে ১২ জন রাজাকার ও দুজন ইপিআর সদস্য আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের কাছ থেকে ১৪টি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ বেশকিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এর আগে পুরান বাউশিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ১১ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। তাদের কাছ থেকে ১০টি রাইফেল ও দুশ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
১৫ই সেপ্টেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা আলীপুরার দিকে অগ্রসরমাণ ইপকাফ (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স)- এর ১০-১২ জনের একটি দলের ওপর আক্রমণ চালান। শত্রুপক্ষও পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ৩ জন ইপকাফ সদস্য ও ৩ জন রাজাকার নিহত এবং ৪ জন ইপকাফ সদস্য আহত হয়। এটি -আলীপুরা যুদ্ধ- হিসেবে পরিচিত। পাকসেনারা যে-কোনো সময় আক্রমণ করতে পারে এ সংবাদের ভিত্তিতে কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক-এর নেতৃত্বে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা ৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভবেরচর ঈদগাহ সংলগ্ন খালের ওপর ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ই ডিসেম্বর ব্রিজ ভাঙ্গার সময় পাকবাহিনী মহাসড়কের দুদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান জাহাঙ্গীরসহ ১১ জন শহীদ হন। এটি ভবেরচর ব্রিজ গণহত্যা নামে পরিচিত। ভবেরচরের পর ৮ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা আইউব আহত হন। ৯ই ডিসেম্বর বিএলএফ কমান্ডার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চর বাউশিয়া ফেরিঘাটে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করলে যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়। এটি চর বাউশিয়া ফেরিঘাট যুদ্ধ- হিসেবে পরিচিত। এ-যুদ্ধে কমান্ডার নজরুল ইসলাম শহীদ হন। ঐদিন একই স্থানে পুনরায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৯ই ডিসেম্বর বিকেলে পাকবাহিনী ভাটেরচরে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে গুয়াগাছির মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার চিশতিসহ কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হন। অপরদিকে ৭ জন পাকমিলিশিয়া নিহত হয়। এটি – ভাটেরচর যুদ্ধ – হিসেবে পরিচিত। ৯ই ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে বারোটায় পাকবাহিনীর জিওসি মেজর জেনারেল রহিম খান তার দলবল নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি গানবোটসহ গজারিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে কালিপুরার পাশে মেঘনা নদী অতিক্রম করার চেষ্টা করে। এ-সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বিমান পাকবাহিনীর নৌবহরে আঘাত হানে। পাকবাহিনীও পাল্টা আক্রমণ করে। এতে পাকবাহিনীর একটি গানবোট ডুবে যায় এবং একজন কর্নেলসহ ৪ জন পাকসেনা ও ১৭ জন নৌ-অফিসার নিহত হয়। অপরপক্ষে ভারতীয় বাহিনীর একটি ক্যানভারা বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ই ডিসেম্বর আউয়াল স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ভবেরচর বাসস্টেশনে ‘আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান’ নামে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে সড়ক বর্ধিতকরণের কারণে সড়ক ও জনপদ বিভাগ ফলকটি ভেঙ্গে ফেলে। ২০১০ সালের ১লা জুন শহীদ মতিউর রহমান জাহাঙ্গীরের নামে ভবেরচরে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। ২০১৬ সালে ভবেরচর বাস স্টেশনের কাছে সরকারি উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে বালুয়াকান্দি ও বসুরচর পাঁচগাঁও গ্রামে দুটি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে। [হাফিজ আহমেদ ও সাহাদাত পারভেজ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!