গজারিয়া গণহত্যা (গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ)
গজারিয়া গণহত্যা (গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৯ই মে। এদিন পাকবাহিনী গজারিয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে নারকীয় গণহত্যা চালায়। এতে ৩ শতাধিক সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হন।
পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে ৪ঠা মে গজারিয়া পাইলট হাইস্কুলে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোসাইরচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। উক্ত প্রশিক্ষণের সংবাদ দোসরদের মাধ্যমে অবহিত হওয়ার পর ৯ই মে সূর্যোয়ের পূর্বে পাকবাহিনী গোসাইরচর ও নয়নগরে সাধারণ মানুষের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে তারা গোসাইরচর, গজারিয়া, নয়ানগর, বালুরচর, সোনারকান্দি, নাগেরচর, কাজিপুরা, প্রধানেরচর, দক্ষিণ ফুলদি ও বাঁশগাঁও গ্রামের ৩৬০ জন মানুষকে হত্যা করে। গণহত্যার পর পাকবাহিনী বহু মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ায় এবং পরিজনহারা অনেকে ভারতে যাওয়ার সময় হত্যার শিকার হওয়ায় নিহতদের সকলের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গজারিয়া উপজেলা শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদের দেয়া তথ্যে যে-সকল শহীদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন- গোসাইরচর গ্রামের মো. ইদ্রিছ আলী দর্জি (পিতা আজগর দর্জি), মো. আলমাছ দর্জি (পিতা ইসমাইল দর্জি), হাজী মো. বেঙ্গু মোল্লা (পিতা পরান মোল্লা), মো. জলিল শিকদার (পিতা আমিন উদ্দিন সিকদার), মো. রেহান উদ্দিন আখন্দ (পিতা লতিফ আখন্দ), মো. মুজাফ্ফর আলী আখন্দ (পিতা এলাহী আখন্দ), মো. মকবুল সিকদার (পিতা হযরত আলী সিকদার), মো. মজিদ সিকদার (পিতা এনায়েত আলী সিকদার), ইসমাইল সিকদার (পিতা ডেঙ্গ সিকদার), মো. আবুল কালাম সিকদার (পিতা ইসমাইল সিকদার), মো. রজব আলী ভূঞা (পিতা আজগর আলী ভূঞা), আব্দুর রহমান সিকদার (পিতা আইনউদ্দিন সিকদার), মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (পিতা মোবারক আলী মাস্টার), মো. আব্দুর কাদির প্রধান (পিতা আয়াত আলী প্রধান), মো. ছায়াদ আলী ভূঞা (পিতা আয়াত আলী প্রধান), মো. আফছার জেহাদ (পিতা আহম্মদ আলী ভূঞা), মো. আনছার জেহাদ ডিপটি (পিতা তনু জেহাদ), মো. অহেদ আলী জেহাদ (পিতা হযরত আলী জেহাদ), মো. আনছার আলী জেহাদ (পিতা মোহর আলী জেহাদ), মো. তোজক মোল্লা (পিতা মো. বুরযুক মোল্লা), মো. ইসলাম মোল্লা (পিতা মো. বুরযুক মোল্লা), মো. আলাউদ্দিন মোল্লা (পিতা আব্দুল আউয়াল মোল্লা), মো. রুস্তম আলী বেপারী (পিতা ফজর আলী বেপারী), মো. করম আলী সিকদার (পিতা দুখাই সিকদার), মো. সিরাজ হাওলাদার (পিতা সাজত আলী হাওলাদার), মো. আনছার আলী মাস্টার (পিতা আব্দুল আলী), আব্দুর রশিদ (পিতা আমজাত আলী), মো. আরব আলী প্রধান (পিতা জাফর আলী প্রধান), আব্দুল ছাত্তার রাড়ী (পিতা আলতাব উদ্দিন রাড়ী), মো. তাইজউদ্দিন সরকার (পিতা নোয়াব আলী সরকার), মো. আনোয়ার আলী সিকদার (পিতা আশ্রব আলী সিকদার), আব্দুল মতিন প্রধান (পিতা কফুল উদ্দিন প্রধান), মো. আনছার আলী প্রধান (পিতা দুখাই প্রধান), মো. মোনছর আলী প্রধান (পিতা দুখাই প্রধান), মো. মহিউদ্দিন (পিতা মফিজ মুজাম্মেল), মো. ছিদ্দিক (পিতা আক্কাস আলী), মো. ছায়েদ আলী বেপারী (পিতা জব্বর আলী বেপারী), মো. আব্দুল মজিদ মিজি (পিতা রহিম উদ্দিন মিজি), মো. হায়দার আলী ভূঞা (পিতা রহিম উদ্দিন ভূঞা), মো. আফতাব উদ্দিন ঠাকুর (পিতা আমিন উদ্দিন ঠাকুর), মো. গিয়াস উদ্দিন ঠাকুর (পিতা অরযত আলী ঠাকুর), আব্দুল আউয়াল ঠাকুর (পিতা মোকসত ঠাকুর), মো. মতিন ঠাকুর (পিতা আক্রম আলী ঠাকুর), মো. আয়েত আলী (পিতা কেরামত আলী), মো. কেরামত আলী ঠাকুর (পিতা সংসার আলী ঠাকুর), মো. লুৎফর রহমান ঠাকুর (পিতা ইন্নত আলী ঠাকুর), আব্দুল বাতেন (ডাকপাড়া, পিতা করম আলী সিকদার), মো. শাহজালাল (পিতা ওকিল গাজী, ডাকপাড়া), এ কে এম নুরুল হক ও আব্দুল হাসেম সিকদার (পিতা আইনুদ্দিন মুন্সি সিকদার); গজারিয়া গ্রামের আমিরজান (পিতা গফুর মুন্সী), আব্দুল লতিফ চৌধুরী (পিতা তাজউদ্দিন চৌধুরী), রমেসা (পিতা মনোরঞ্জন দাস), সুদন কুমার দাস (পিতা দিনেশ চন্দ্ৰ দাস), ফিরোজা বেগম (পিতা করিম বেপারী), জাহানারা বেগম (পিতা কালু দারোগা) ও অন্নদা সুন্দরী দাস (পিতা শ্রীচরণ দাস); নয়ানগর গ্রামের ইয়াকুব আলী মোল্লা (পিতা জতিরা মোল্লা), জসেদা (পিতা জতিস চন্দ্র দাস), আব্দুর রব মোল্লা (পিতা মনোহর মোল্লা), বিমলা রানী (পিতা হরিসন দাস), মালতী রানী (পিতা ফকির চাঁন দাস), আব্দুল আজিজ রাড়ী (পিতা আলফাজ রাড়ী), আবদুল হাই (পিতা মঙ্গল রাড়ী), জনাব আলী প্রধান (পিতা দাইমুদ্দিন প্রধান), রহমত মিজি (পিতা আকবর আলী মিজি), আছান মোল্লা (পিতা আক্কাস মোল্লা), ইসাদ আলী (পিতা মফিউদ্দিন), সনু বিবি (পিতা আব্দুল গনি), রহমান মির (পিতা ছাবেদ মির), ময়মন নেছা (পিতা সাহেদ মোল্লা), মো. জোহা (পিতা মজুমদার রাড়ী), কুসলা (পিতা দিনেশ), ভারত চন্দ্র বর্মণ (পিতা নলিত বর্মণ), মহাদেব (পিতা আইছালি বর্মণ), মঙ্গল রাড়ী (পিতা অরযত রাড়ী), আনেদ বর্মণ (পিতা মহিমচন্দ্র বর্মণ) সরস্বতী (পিতা সরাদর), আদেল চন্দ্র (পিতা ললিতা চন্দ্ৰ), আব্দুল গনি (পিতা সায়েদ আলী), মো. মোতালেব রাড়ী (পিতা কেরানী রাড়ী), বাচ্চু বারী (পিতা হাসেম বারী), শাহাদত আলী ভূঁইয়া (পিতা তামুদ আলী ভূঁইয়া) ও ফরমান ফকির (পিতা আব্দুর রব ফকির); বালুরচর গ্রামের আব্দুল হালিম ভূঞা (পিতা আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা), সুবেদ আলী ভূঞা (পিতা মো. আনোয়ার হোসেন ভূঞা), আব্দুর রব রাড়ী (পিতা ফজর আলী রাড়ী) ও মো. আব্দুল হক (পিতা আলফাজ উদ্দিন); সোনাইরকান্দি গ্রামের সহর আলী দেওয়ান (পিতা জোহর আলী), মো. কোটাই দেওয়ান (পিতা জোহর আলী দেওয়ান), মো. সুরুজ মিয়া ও মো. আলী (পিতা নজর আলী); নাগেরচর গ্রামের আব্দুস ছালাম (পিতা ইয়াকুব ইসলাম), আবুল হাসেম (পিতা মো. মনির হোসেন), আবুল হাসেম (পিতা আফিজ উদ্দিন), ছামির সর্দার (পিতা ইয়াছিন বেপারী), বুদু মিয়া (পিতা হক্কু মিয়া), আব্দুল মতিন (পিতা বুদু মিয়া), মো. দুলাল (পিতা আব্দুল মতিন) ও আব্দুল মতিন ভূঞা (পিতা আলীমুদ্দিন); কাজীপুরা গ্রামের মোসলেম উদ্দিন সরদার (পিতা মো. আলী সরদার); প্রধানেরচর গ্রামের সওদাগর বেপারী (পিতা ইউসুফ বেপারী); দক্ষিণ ফুলদি গ্রামের আব্বাস প্রধান (পিতা তেজক আলী প্রধান), বাঁশগাও গ্রামের মো. আরব আলী কারী (পিতা পর্বত আলী খান), মো. আলী মোল্লা ও মোতালেব মোল্লা (পিতা আলী মোল্লা)।
গণহত্যার ঘটনায় গ্রামবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত্র ও স্তব্ধ হয়ে যায়। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে শহীদদের সমাধিস্থ করা সম্ভব হয়নি। ৯, ১০ ও ১১ই মে এই ৩ দিন গ্রামবাসী শতাধিক শহীদের লাশ গোসাইরচর গোরস্থানে সমাধিস্থ করতে সক্ষম হয়। গোসাইরচর গোরস্থানই গজারিয়া গণকবর হিসেবে পরিচিত। [হাফিজ আহমদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড