You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে খুলনা মহানগর (খুলনা)

খুলনা মহানগর (খুলনা) খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। মার্চের শুরু থেকেই খুলনা শহর উত্তাল হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন সহ সকল স্বাধীনতাকামী দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এক হয়ে রাজপথে নামে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। ৩রা মার্চ খুলনায় ছাত্র- জনতার বিশাল মিছিলে হানাদার বাহিনী গুলি করে। এতে তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর প্রতিবাদে মিছিলকারীরা শহরের কেডি ঘোষ রোডে অবস্থিত কয়েকটি বন্দুকের দোকান ভেঙে বন্দুক, রাইফেল ও গুলি সংগ্রহ করে। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানালে খুলনার মানুষ বিশেষ করে ছাত্রসমাজ উদ্দীপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী ২৩শে মার্চ খুলনায় ‘পাকিস্তান দিবস’-এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ দিবস’ পালিত হয়। এ দিবসের কর্মসূচিতে শহীদ হাদিস পার্ক এবং এর আশপাশের এলাকায় সকালে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং বিকেলে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, জয় বাংলা বাহিনী এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ-এর যৌথ উদ্যোগে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। রাইফেলের নমুনায় তৈরি কাঠ, বাঁশের লাঠি এবং বিভিন্ন স্কুলের স্কাউটদের ডামি রাইফেল এসব প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হতো। শহরের ইসলামাবাদ কমিউনিটি সেন্টারে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এখানে এম এম সিটি কলেজের স্কাউটদের ২০টি ডামি রাইফেল নিয়ে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বয়রায় অবস্থিত বিভাগীয় কমিশনারের কর্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মাঠ, খালিশপুরের শ্রমিক ময়দান প্রভৃতি স্থানে সেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রশিক্ষণ চলত। এ-সকল স্থানে বাঁশের লাঠি দিয়ে স্থানীয় যুবকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশিক্ষণ নেয়। খালিশপুরের জুট মিলসমূহের শ্রমিকরা এবং নয়াবর্দি, খালিশপুর, কাশিপুর, গোয়ালপাড়া প্রভৃতি এলাকার উৎসাহী যুবকরা এখানে প্রশিক্ষণ নিত। ডা. আমানউল্লাহ কাজী, হুদা ও ইলিয়াস খান তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। জুট মিলসসহ খালিশপুরের বিভিন্ন শিল্প-কারখানার পাঁচশতাধিক শ্রমিক- কর্মচারী মিলের বাঙালি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এ 7 প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রশিক্ষণ আরো সম্প্রসারিত ও জোরদার হয়। খুলনা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ১৭ই মার্চ খুলনা সার্কিট হাউসে অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর প্ৰথম আঘাত হানে। এতে পাকবাহিনীর কয়েকজন সদস্য হতাহত হয়। ২১শে মার্চ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী শহীদ হাদিস পার্কে এক সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে শতশত মানুষ মিছিল সহকারে শহর প্রদক্ষিণ করে। মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া পাকবাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। মাসব্যাপী এ-সকল কর্মসূচির পাশাপাশি চলে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও জয় বাংলা বাহিনীর ‘বাংলাদেশ দিবস’ পালনের প্রস্তুতি। খুলনা জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যরা খুলনা জিলা স্কুলের মাঠে ২৩শে মার্চ পতাকা উত্তোলনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন সামরিক কায়দায় মহড়া দিত। পতাকা উত্তোলনের আয়োজনকে সফল করতে মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম জয় বাংলা বাহিনীকে খুলনা জেলা স্কুলের মাঠে ডামি রাইফেল দিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন।
মধ্য এপ্রিলের পর ছাত্র-যুবকদের একটি অংশ ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। আগস্ট মাসে তাঁরা দেশে ফিরে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন।
খুলনায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ইউনুস আলী ইনু, মোশারফ হোসেন, মোড়ল আব্দুস সালাম, শেখ আব্দুল কাইয়ুম, স ম বাবর আলী, ইউসুফ আলী ভূঁইয়া, আ ব ম নূরুল আলম, শামসুজ্জোহা টিপু, দাউদ আলী, নূরুল ইসলাম খোকন, হেকমত আলী ভূঁইয়া প্রমুখ।
খুলনা সদরে যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর জয়নুল আবেদীন। খুলনা জেলা মুজিব বাহিনী-র (বিএলএফ) কমান্ডার ছিলেন শেখ কামরুজ্জামান টুকু।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকসেনাদের হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে খুলনা শহরের ছাত্র-যুবকরা রাস্তায়-রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে। ২৬শে মার্চ খুলনার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। রাতে ৬-৭ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল খুলনার সার্কিট হাউস ও ইউএফডি ক্লাবে পাকসেনাদের অবস্থানের ওপর হামলা চালায়। দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী দুলাল ও হিটি নামের দুই যুবকের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা দৌলতপুর থেকে খুলনাগামী পাকসেনাদের একটি কনভয় প্রতিরোধের চেষ্টা করে। দৌলতপুর মুহসীন স্কুলের মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে তারা প্রথম পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করে। পাকসেনারা ব্যারিকেড সরিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে প্রতিরোধকারীরা একটু পিছিয়ে এসে তাদের ওপর আক্রমণ করে। পাকসেনারা পাল্টা গুলি ছুড়লে প্রতিরোধকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
২৭শে মার্চ খুলনাগামী পাকবাহিনীর কনভয়টি বৈকালী মোড়ে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে সেখানে ১৩ জন রিজার্ভ পুলিশসহ একদল যুবক বৈকালী সিনেমা হলের ভেতর থেকে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করে। পাকসেনারাও পাল্টা আক্রমণ করে। মুহুর্মুহু মর্টার শেলের গোলাবর্ষণের এক পর্যায়ে প্রতিরোধকারীরা পিছু হটে। পাকসেনারা বৈকালী অতিক্রম করে খুলনা-যশোর রোড ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পাবলিক লাইব্রেরি এবং বয়রা গার্লস কলেজ মোড়ে আবারও প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। এ-যুদ্ধে পুলিশের সিপাহি মুন্সি মোফাজ্জ্বল হক (পিআরএফ নং ১৩৪) এবং বৈকালীর এইচ এন্ড পোদ্দার কোম্পানির শ্রমিক মুন্সি রাঙ্গা মিয়া শহীদ হন। ২৮শে মার্চ পাকহানাদার বাহিনী খুলনা সদরে অনুপ্রবেশ করে। এখানে তাদের কোনো ক্যাম্প ছিল না। খুলনা শহরে ছিল পাকবাহিনীর এডহক ব্রিগেডের ৫নং উইং। এর নেতৃত্বে ছিল লে. কর্নেল শামস। তার অধীনে ছিল ১০৭ পদাতিক ব্রিগেডের ২৫ বেলুচ রেজিমেন্ট এবং ২২ এফ এফ রেজিমেন্ট। এদের সহায়তা করে খুলনাকেন্দ্রিক কমান্ডার গুলজারিনের নেতৃত্বাধীন নেভাল বেইস। মার্চের শুরু থেকেই কর্নেল শামস যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে অতিরিক্ত সৈন্য এনে তার শক্তি বৃদ্ধি করে।
খুলনায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা হলো মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, জামায়াতে ইসলামী – নেতা মাওলানা এ কে এম ইউসুফ ও শামসুর রহমান। এপ্রিলের শুরু থেকেই খুলনা শহরে পাকিস্তানপন্থী মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামী সংগঠিত হতে থাকে। ১০ই এপ্রিল খুলনায় পাকসেনাদের সহায়তায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির প্রথম বৈঠকে পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। শান্তি কমিটির প্রধান ছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা এ কে এম ইউসুফ। শান্তি কমিটি গঠনে মুসলিম লীগ নেতা সবুর খান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ৩০শে এপ্রিল সে দৌলতপুরে স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে মাওলানা এ কে এম ইউসুফ ও গভর্নর মোনায়েম খানের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এস এম আমজাদ হোসেন বক্তৃতা করে। বৈঠক শেষে ‘পাকিস্তানের সংহতি ও ঐক্য’ রক্ষার্থে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
পাকিস্তানপন্থীরা শান্তি কমিটির পাশাপাশি পাকসেনাদের সহায়তা করার জন্য একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে মাওলানা এ কে এম ইউসুফ মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী রোডের ‘ভূতের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত আনসার ক্যাম্পে জামায়াত যুব ক্যাডারের ৯৬ জন সদস্য নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। পুরস্কারস্বরূপ তাকে ১৮ই সেপ্টেম্বর গঠিত গভর্নর মালিকের মন্ত্রিসভায় রাজস্ব মন্ত্রীর পদ দেয়া হয়। নভেম্বর মাসে খুলনায় আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। ৪ঠা নভেম্বর এ বাহিনীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করে জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার সিদ্দিক জামাল, মহকুমা কমান্ডার এ কে এম ফারুকী, আনসারউদ্দীন প্রমুখ।
খুলনা শহরের একাধিক জায়গায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের কর্তৃক হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। ১লা এপ্রিল পাকবাহিনী খুলনা শহরের কয়েকজন সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে হত্যা করে এবং তাদের বাড়িঘরে লুণ্ঠন চালায়। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ভারতে পাড়ি জমায়। পরবর্তীতে ৭ই এপ্রিল পাকবাহিনী বিহারিদের সহযোগিতায় খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী সিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ১২ জন মানুষকে হত্যা করে। এটি খালিশপুর মুন্সীবাড়ি গণহত্যা নামে পরিচিত। ১৫ই এপ্রিল ও ২৯শে মে দু’বার সংঘটিত হয় নসুখান ইটভাটা গণহত্যা। এতে ২৬ জন সাধারণ মানুষ পাকবাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হন। এছাড়া আরো একটি উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ড হলো খালিশপুর প্লাটিনাম জুট মিলস বয়লার হত্যাকাণ্ড। এতে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার সমর্থক শ্রমিক ও অন্যান্যদের জলন্ত বয়লারে নিক্ষেপ করে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক পৈচাশিকভাবে হত্যা করা হয়। খুলনায় পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবিরগুলোর মধ্যে ছিল খুলনার সার্কিট হাউস, খুলনা হেলিপোর্টের বিশ্রামাগার (বর্তমানে খুলনা সার্কিট হাউসের নতুন ভবন), ইউএফডি ক্লাব, খুলনার সাবেক বেতার ভবন (গল্লামারী রেডিও স্টেশন, বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের অংশ), রাজাকার জব্বার মোল্লার বাড়ি (খুলনা সিমেট্রি রোড বা সাহেবের কবরখানা রোড), খালিশপুরের রাজাকার মতিউল্লাহর বাড়ি ও ‘ভূতের বাড়ি’ রাজাকার ক্যাম্প।
খুলনা সদরের গল্লামারী এলাকায় পাকবাহিনী বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে এনে গুলি করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং জবাই করে হত্যা করত। হত্যার এ স্থানটি <গল্লামারী বধ্যভূমি- হিসেবে পরিচিত।
৩রা এপ্রিল গল্লামারী রেডিও স্টেশনে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন কমান্ডার সুবেদার মেজর জয়নুল আবেদীন। সারারাত যুদ্ধ চলে। গল্লামারী যুদ্ধ-এ মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবেদীন, হাবিব ও মোসলেম উদ্দিন শহীদ হন এবং মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। ৩রা এপ্রিল ও ১৫ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা শহরের পশ্চিম প্রান্তের লায়ন্স স্কুল ও গল্লামারী রেডিও স্টেশনে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেন। পাকবাহিনীও পাল্টা জবাব দিতে থাকে। দুপক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলির এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন। দ্বিতীয়বারের গল্লামারী রেডিও স্টেশন অপারেশন-এ মুক্তিবাহিনীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে দৌলতপুর ও এর সংলগ্ন এলাকা শিরোমণি (বাদামতলায়) মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী-র সঙ্গে পাকবাহিনীর ভয়ঙ্কর ট্যাঙ্ক যুদ্ধ হয়। চারদিনব্যাপী এ-যুদ্ধে উভয় পক্ষের অসংখ্য সদস্য হতাহত হয়। যুদ্ধের ইতিহাসে এটি ব্যাটল অব শিরোমণি নামে পরিচিত। বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই বড় এবং ভয়ঙ্কর ট্যাঙ্ক যুদ্ধ।
১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠানিকভাবে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও খুলনা শহরে যুদ্ধ চলে দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত। অবশেষে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় এবং ১৭ই ডিসেম্বর খুলনা সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন— খিজির আলী, বীর বিক্রম- (পিতা জাহান বক্স, হেলাতলা)।
খুলনা সদর উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— মুন্সী মোফাজ্জল হক (পুলিশ সদস্য, বৈকালী মোড় প্রতিরোধযুদ্ধে শহীদ), সুবেদার মেজর জয়নুল আবেদীন (গল্লামারী রেডিও স্টেশন যুদ্ধে শহীদ), হাবিব (ঐ) এবং মোসলেম উদ্দিন (ঐ)। খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনের দেয়ালজুড়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক টেরাকোটা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অদম্য বাংলা’, ব্রজলাল (বি এল) কলেজে অপর একটি ভাস্কর্য এবং খুলনা-যশোর রোড নতুন রাস্তার মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য “বীর বাঙালি’ নিমির্ত হয়েছে। বর্তমানে খুলনা শহরের সাউথ পয়েন্ট রোডে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে
গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর-। [গৌরাঙ্গ নন্দী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!