You dont have javascript enabled! Please enable it!

খুলনা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী (খুলনা শহর)

খুলনা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী (খুলনা শহর) মুক্তিযুদ্ধের একটি সহযোগী সংগঠন। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে এটি গঠিত হয়। ছাত্রলীগ নেতা শেখ আব্দুল কাইয়ুম ছিলেন এর অন্যতম সংগঠক।
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো খুলনায়ও যুদ্ধের প্রস্তুতি পূর্ব থেকেই শুরু হয়ে যায়। অনেকটা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আন্দোলনকারী ছাত্র-যুবকরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে মূখ্য ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ২রা মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন-এর কর্মসূচি পালন থেকেই খুলনা শহর উত্তাল ছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দ। তারাই শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ পর্ব। যাদের নিয়ে এই প্রস্তুতি পর্বের আয়োজন চলে, তাদের নাম দেয়া হয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। ছাত্রলীগ নেতাদের তত্ত্বাবধানে গঠিত এ বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল মুসলিম লীগ-এর গুণ্ডাবাহিনী ও অবাঙালিদের আক্রমণ মোকাবেলা করা। এরা নিয়মিত এক জায়গায় জড়ো হয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন। খুলনা জেলা স্কুল মাঠ ছিল এদের প্রশিক্ষণের জায়গা। এ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের সাধারণ কলা-কৌশল রপ্ত করা ও মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখা। এ বাহিনীর সদস্যরা এখানে নিয়মিত শরীর চর্চায় অংশ নিতেন। লাঠি ও কাঠের তৈরি ডামি রাইফেল দিয়ে তারা প্রশিক্ষণ কার্য চালিয়ে যান।
খুলনায় প্রতিরোধ পর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হচ্ছে একাত্তরের ৩রা মার্চ। এদিন আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ- ও ছাত্র ইউনিয়ন সহ সকল প্রগতিশীল স্বাধীনতাকামী মানুষ রাজপথে নেমে আসে। রাজপথের এ কর্মসূচি সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সেদিন ছাত্র- জনতার বিশাল মিছিল খুলনা শহর প্রকম্পিত করে তোলে। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মিছিলকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৩ জন প্রতিরোধকারী শহীদ এবং অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মিছিলকারীদের একাংশ খুলনা শহরের কে ডি ঘোষ রোডে অবস্থিত কয়েকটি বন্দুকের দোকান ভেঙ্গে বন্দুক, রাইফেল ও গুলি সংগ্রহ করে। এসব অস্ত্র সরাসরি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের হাতে চলে আসে। তারা এগুলো নিয়ে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র- যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। এতে খুলনার জয় বাংলা বাহিনী-র সদস্যবৃন্দ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া পাকবাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালাবেন।
মাসাধিককাল এ কর্মসূচি চলে। পাশাপাশি ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি চলে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং জয় বাংলা বাহিনীও এসব কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। পতাকা উত্তোলনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন সামরিক কায়দায় মহড়া চলে। পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির একটি বড় দিক ছিল উত্তোলিত পতাকাকে অভিবাদন জানানো। এ কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতিমূলক কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ও ছাত্রলীগ নেতা শেখ আব্দুল কাইয়ুমকে। খুলনা জেলা স্কুলের মাঠে ডামি রাইফেল দিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণের পুরো বিষয়টি তিনি তত্ত্বাবধান করতেন।
মধ্য-এপ্রিলের পর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশ ভারতে গিয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। আগস্টের দিকে প্রশিক্ষিত দলটির প্রথম গ্রুপ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাতক্ষীরা, খুলনা, সুন্দরবন ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় রাজাকার- ও পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। [গৌরাঙ্গ নন্দী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!