খোচাবাড়ি গণহত্যা (লালমনিরহাট সদর)
খোচাবাড়ি গণহত্যা (লালমনিরহাট সদর) সংঘটিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর স্থানীয় দোসর বিহারিদের দ্বারা। লালমনিরহাট সদরে অবস্থিত একটি স্থান খোচাবাড়ি। কাশেম নামের এক যুবকের নেতৃত্বে বিহারিরা এখানে গণহত্যা চালায়। কাশেম ‘হাইজানী’র ছেলে নামে পরিচিত ছিল। হাইজানী ছিল খোচাবাড়ি সংলগ্ন লালমনিরহাট খোলাহাটির একজন দুর্ধর্ষ বিহারি মহিলা। সে ছেলের দ্বারা বাঙালি নিধনসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে যুক্ত ছিল। কাশেম গরু জবাই করা ধারালো অস্ত্র দ্বারা জনৈক মমতাজের পিতার ভুড়ি কেটে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি নিধন শুরু করে। সে ‘কুখ্যাত কাশেম’ হিসেবে পরিচিত ছিল। খোচাবাড়ি গণহত্যায় নিহত ৭ জনের নাম জানা গেছে, যাদের হাইজানীর ছেলে কাশেম তার লোকজন নিয়ে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ৩ জনকে এক সঙ্গে, এবং অপর ৪ জনকে পৃথকভাবে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মো. আজিমুদ্দিন মিস্ত্রি (পিতা মো. তাইজুদ্দিন, খোচাবাড়ি, রেলওয়ের মিস্ত্রি), মো. জাহের আলী (পিতা বাহাউদ্দিন, খোচাবাড়ি), আব্দুল হোসেন (পিতা আজগর আলী, খোচাবাড়ি, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য), হুদা মিয়া (পিতা নেছারউদ্দিন, খোচাবাড়ি), সেকেন্দার আলী (পিতা মো. এনায়েতুল্লাহ, খোচাবাড়ি), আব্দুর রশিদ ও মজিবর রহমান।
আজিমুদ্দিন ও জাহের আলীকে নগরবানী মাংসহাটির কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়। আব্দুল, সেকেন্দার ও হুদা মিয়াকে নেছারউদ্দিনের পুকুরপাড়ে গুলি করে হত্যা করে এক সঙ্গে মাটিচাপা দেয়া হয়। হুদা মিয়া পুকুরের মালিক নেছারউদ্দিনের পুত্র। পুকুরপাড়ে নিহত ৩ জনের সঙ্গে আরো দুজনকে গুলি করা হয়। কিন্তু ঘটনাক্রমে তারা বেঁচে যান। এ দুজন হলেন খোচাবাড়ির বাসিন্দা রেল খালাসি হিসেবে পরিচিত আনসার আলী ও মো. রফাতুল্লাহ মণ্ডলের পুত্র বক্তার হোসেন। আনসারের মুখে এবং বক্তারের কানে গুলি লাগে। মুক্তিযুদ্ধের পর বক্তার হোসেন ‘গুলি খাওয়া বক্তার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। গণহত্যার শিকার দৈলজের গ্রামের মজিবর রহমান খোচাবাড়িতে বাঁশ বিক্রি করতে এসে বিহারিদের হাতে ধরা পড়েন। তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। খোচাবাড়ি গণহত্যায় নিহতদের স্থান সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে কোনো স্মৃতিচিহ্ন এখানে অবশিষ্ট নেই। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড