You dont have javascript enabled! Please enable it!

খোর্দ্দ যুদ্ধ (কলারোয়া, সাতক্ষীরা)

খোর্দ্দ যুদ্ধ (কলারোয়া, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ১৫ই অক্টোবর। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।
খোদ কলারোয়া থানার দেয়াড়া ইউনিয়েনের প্রাণকেন্দ্র। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী খোদ বাজার অনেক আগে থেকেই ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালের আগে থেকে এখানে একটি বৃহৎ সরকারি পাটের গুদাম ছিল। স্থানীয়দের কাছে থেকে পাট কিনে এখান থেকে রপ্তানি করা হতো। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল গফফারের নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযোদ্ধা খোৰ্দ্দতে আসেন। প্রথমে তাঁরা বিভিন্ন লোকের বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে অবস্থান করে রাতের বেলা বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন চালাতেন। এক রাতে তাঁরা রায়টা ব্রিজ উড়িয়ে দেন, যাতে পাকসেনারা কলারোয়া থেকে খোৰ্দ্দতে না আসতে পারে। ফলে খোদতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানাজানি হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন একত্রিত হয়ে খোদ বাজারের পাশে একটি ঘাঁটি স্থাপন করেন। কপোতাক্ষ নদের উত্তর পাশে চাকলায় মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন সফিকউল্লাহর নেতৃত্বে ৬০-৭০ জনের একটি দল অবস্থান করছিল। খোদ কলারোয়া থানা থেকে দূরবর্তী এবং কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন যে, কলারোয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের খোর্দ্দ আসতে প্রলুব্ধ করতে হবে, কারণ খোদ এমন একটি জায়গা যেখানে পাকিস্তানি বাহিনী এলে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাকিস্তানি বাহিনীকে খোদ আসতে প্রলুব্ধ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা খোদ বাজারে অবস্থিত সরকারি পাটের গুদামে আগুন ধরিয়ে দেন। ফলে গুদামে রাখা বহু পাট আগুনে পুড়ে যায়। এ খবর কলারোয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যদের নিকট পৌঁছে যায়। ১৫ই অক্টোবর একদল পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের দোসর -রাজাকার-রা খোর্দ্দ অভিমুখে রওনা হয়। আসার সময় তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের গাড়ির চারপাশে সাধারণ মানুষদের নিয়ে আসে যাতে মুক্তিযোদ্ধারা হঠাৎ তাদের আক্রমণ করতে না পারে। এ খবর খোদতে অবস্থানরত কমান্ডার আব্দুল গফফারের নিকট চলে যায়। তিনি তাঁর অধীনস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নদীর উত্তর পাশে অবস্থানরত সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন সফিকউল্লাহর সঙ্গে যুক্ত হন। দুই ইউনিট একত্রিত হয়ে নদীর উত্তর পাশে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা খোদ্দ বাজারে পৌঁছে স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, মুক্তিযোদ্ধারা খোদ বাজারে ঘাঁটি স্থাপন করেছে। তারা আরো জানতে পারে যে, নদীর উত্তর পাশে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে আছে। ফলে পাকসৈন্যরা তাদের লক্ষ করে গুলি চালায়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি চালান। প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা সুবিধা করতে পারছিলেন না। পরে তাঁদের সঙ্গে আরো কয়েকটি ইউনিট যুক্ত হয়। সেগুলো হলো— সুবাস কমান্ডার (কেশবপুর), মনিরুজ্জামান কমান্ডার (বুড়িহাটি, কেশবপুর), আনিস খান (বরণডালী) এবং ইপিআর-এর একটি গ্রুপ। ৩-৪ ঘণ্টা গুলি বিনিময় চলে। এতে কয়েক জন পাকসেনা নিহত হয়। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। তাই বাকি পাকসেনারা দ্রুত কলারোয়ায় ফিরে যায়।
যে-সকল মুক্তিযোদ্ধা খোদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা হলেন— কমান্ডার আব্দুল গফফার (বহুড়া), গোলাম মোস্তফা (ইলিশপুর), গোলাম রব্বানী (খোদ), এ জেড নজরুল ইসলাম (বোয়ালিয়া), মাস্টার মো. ইবাদুল্লাহ (উলুডাঙ্গা), দার বক্স (পূর্বকোটা), রবিউল ইসলাম (ইলিশপুর), সোহরাব হোসেন (পাকুড়িয়া), নজিবর রহমান (খোদ), মঈন উদ্দীন (গয়ড়া), শওকত আলী (মাদরা) প্রমুখ। [মাসুদুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!