You dont have javascript enabled! Please enable it!

খিরনশাল গণহত্যা (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা)

খিরনশাল গণহত্যা (চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ৪ঠা ডিসেম্বর। খিরনশাল কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার একটি গ্রাম। গ্রামটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা অংশ থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এ গ্রামে পাশাপাশি অবস্থিত মুহুরী বাড়ি ও পাটোয়ারি বাড়ি। এই দুটি বাড়িতে ৮ জনকে হত্যা করা হয়।
৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান কর্তৃক ভারত আক্রান্ত হওয়ার পর সেদিন রাতে চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত হয়ে ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর একাধিক দল বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে … চৌদ্দগ্রাম থানা ও আশপাশে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনী। দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরদিন ৪ঠা ডিসেম্বর তারা পেছনে সরে থানা থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে খিরনশাল গ্রামের দিকে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং যৌথবাহিনীর ওপর গুলি চালাতে থাকে। দুপুরের দিকে পাকিস্তানিদের অবস্থানের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে খিরনশাল ও সিংরেশসহ আশপাশের গ্রামে। স্থানীয়রা জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেয় = খিরনশাল পাটোয়ারী বাড়িতে।
এদিকে সেদিন সকালে পাটোয়ারী বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার পাঠানো হয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। এ বাড়ির আলী হোসেন, শহীদ আমির হোসেন ও শহীদ সাদেক আলী . ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তাঁরা নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঠাতেন এবং তাঁদের রান্না করে খাওয়াতেন। পার্শ্ববর্তী মুহুরী বাড়ির আব্দুল গফুরও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। তিনি বক্তৃতার মাধ্যমে স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন।
পাটোয়ারী বাড়ি ও মুহুরী বাড়িতে স্থানীয় লোকজন আশ্রয় নিলে ঐ অঞ্চলের রাজাকার-রা পাকিস্তানিদের খবর দেয়। এ খবর পাওয়ার পর দুপুর ২টার দিকে পাকিস্তানিরা স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে বাড়িদুটি ঘিরে ফেলে। দুটি বাড়িতে ৫০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি সেনা সদস্য প্রবেশ করে। পাটোয়ারী বাড়ি থেকে সাদেক আলী, তিতা মিয়া, মনা মিয়া ও আম্বর আলীকে ধরে মুহুরী বাড়িতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ-সময় পাকিস্তানি আর্মিদের কয়েকজন মুহুরী বাড়ির মাস্টার আব্দুল গফুরের ঘর ঘেরাও করে। আব্দুল গফুর স্ত্রী- সন্তানদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিয়ে ঘরের ভেতর বাঙ্কারে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে তাকে ধরে এনে বেয়ানেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। একই সময়ে পাকিস্তানিরা পাটোয়ারী বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে সেরাজুল হক, আমির হোসেন ও সিদ্দিকুর রহমানকে।
খিরনশাল গণহত্যায় শহীদরা হলেন- সাদেক আলী পাটোয়ারী (পিতা মকরম আলী পাটোয়ারী, খিরনশাল), সিদ্দিকুর রহমান (পিতা আব্বাস আলী, সিংরেশ), আমির হোসেন (পিতা নাজির মিয়া, খিরনশাল), মাস্টার আব্দুল গফুর (পিতা মৌলভী ইউসুফ আলী, খিরনশাল), সেরাজুল হক (পিতা সেকান্দর আলী, সিংরেশ), তিতা মিয়া (পিতা আনর আলী, সিংরেশ), মনা মিয়া (পিতা আলী নওয়াব, সিংরেশ) এবং আম্বর আলী (পিতা মসন্দ আলী, সিংরেশ)। [বাশার খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!