খিলপাড়া গণহত্যা (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম)
খিলপাড়া গণহত্যা (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২১শে এপ্রিল। এতে ৭ জন লোক নিহত হয়।
হিন্দু অধ্যুষিত খিলপাড়া গ্রাম সংলগ্ন একটি হাটের নাম সিকদার হাট। পাশেই চাতরি গ্রাম। আনোয়ারা থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এডভোকেট ফজলুল করিমের নেতৃত্বে চাতরি গ্রামে বিশাল এক রাজাকার- বাহিনী গড়ে ওঠে। রাজাকারদের কেন্দ্র হয়ে ওঠে সিকদার হাট। চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মাহামুদুন্নবী চৌধুরীর উদ্যোগে শহরে শান্তি কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানরা এতে যোগ দেয়। সভা শেষে আনোয়ারা থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুল করিম তার দলবল নিয়ে সিকদার হাটে এসে ঘোষণা দেয়, ‘আমাদের নেতা বলে দিয়েছে, পাকিস্তানে কোনো হিন্দু থাকতে পারবে না।’ এতে খিলপাড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে এলাকা ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। ঠিক সেই সময় ২১শে এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে একদল পাঞ্জাবি সৈন্য এ গ্রামে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুল করিমের নেতৃত্বাধীন একদল রাজাকার। এ অবস্থায় খিলপাড়া গ্রামের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে গ্রাম সংলগ্ন ধানক্ষেত ও ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে নিয়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের অনুগত কয়েকশ স্বাধীনতাবিরোধী খিলপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। তারা বহু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায়। এ-সময় ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা লোকদের মধ্যে একজন মাথা উঁচু করে রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান প্রত্যক্ষ করছিল। তাকে দেখে হানাদাররা ধানক্ষেতে ছুটে যায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৭ জনকে হত্যা করে। এ গণহত্যায় নিহতরা হলেন— শশাঙ্ক বিমল আইচ, বীরেন্দ্র কুমার আইচ, নিকুঞ্জ নাথ, নরেন্দ্র লাল নাথ, প্যারি মোহন শীল, নতুন চন্দ্ৰ শীল ও মনী নাথ। হত্যা করেও হানাদাররা ক্ষান্ত হয়নি। তারা গ্রামের প্রত্যেকটি ঘর তল্লাশি করে সহায়-সম্পদ লুটে নিয়ে প্রতিটি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। [জামাল উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড