You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.17 | খিলাবাজার যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

খিলাবাজার যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)

খিলাবাজার যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ১৭ই মে ও ৮ই ডিসেম্বর দুবার। দুবারই হানাদাররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায় এবং তাদের একটি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করে, তার মধ্যে খিলাবাজার অপারেশন অন্যতম। দুদফায় তারা এ অপারেশন পরিচালনা করে – ১৭ই মে ও ৮ই ডিসেম্বর। ১৭ই মে আনুমানিক সকাল ১০টায় পাকবাহিনীর একদল সেনা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় খিলাবাজারের আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করে; পুড়িয়ে দেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান বিএসসি-র বসতবাড়ি। সেখানে থেকে তারা পার্শ্ববর্তী কুমার বাড়ি ও পাল বাড়িতে প্রবেশ করে রাণী পালকে ধর্ষণ করে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাণী মারা যায়। এরপর তারা লক্ষ্মীরাণী পাল ও মঞ্জুরাণী পালকে ধর্ষণ করে। এতে লক্ষ্মীরাণী পালের মৃত্যু ঘটে এবং মঞ্জুরাণী পাল আজো সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা নিয়ে অকর্মণ্য অবস্থায় বেঁচে আছেন। খিলাবাজারে পাকসেনা অনুপ্রবেশের সংবাদ শুনে কয়েকজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সূচীপাড়া থেকে পাথৈর মনিপুর হয়ে নদী পার হয়ে ঘুঘুরচপ মাঝিবাড়িতে অবস্থান নেন। তাঁদের দলে ছিলেন- হাবিলদার আসমত আলী, সুবেদার সিরাজুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক আবদুল হালিম, সৈনিক সিরাজুল ইসলাম, আবদুল মান্নান বিএসসি, ফরিদ উল্ল্যাহ চৌধুরী, গোলাম সরোয়ার, রুস্তম আলী, কামাল পাশা মজুমদার, ইদ্রিস মোল্লা প্রমুখ। ঘুঘুরচপ মাঝিবাড়ি ও জেলেবাড়ি থেকে একযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ শুরু হলে পাকসেনারা পিছু হটে। গুলি চালাতে-চালাতে তারা শাহরাস্তি রেলস্টেশনের দিকে চলে যায়। রাজাকারদের ফেলে যাওয়া একটি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
পাকসেনারা দ্বিতীয়বার খিলাবাজারে আক্রমণ চালায় মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ৮ই ডিসেম্বর। এদিন হানাদাররা প্রসন্নপুর খিলাবাজার ও কাইথড়া গ্রামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা সংঘটিত করে। এবারও মুক্তিবাহিনীর এম্বুশ করে থাকা সদস্যদের হাতে পরাস্ত হয়ে পলায়নকালে পথে বৃষ্টির মতো গুলি করে মুহূর্তের মধ্যেই হত্যা করে অনেক নর-নারীকে; আহত করে অসংখ্য মানুষকে (দ্রষ্টব্য প্রসন্নপুর-আহম্মদনগর গণহত্যা)। [মো. মিজানুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড