মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক বাহিনী খুলনা জয় বাংলা বাহিনী (খুলনা শহর)
খুলনা জয় বাংলা বাহিনী (খুলনা শহর) মুক্তিযুদ্ধের একটি সহায়ক বাহিনী। এর প্রধান ছিলেন খুলনা জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক শেখ আব্দুল কাইয়ুম।
আগরতলা মামলার (১৯৬৮) অন্যতম অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হককে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি অবস্থায় বিচারাধীন থাকাকালে ১৯৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর স্মরণে ঐদিনই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ- সদস্যদের একটি অংশ নিয়ে ঢাকায় সার্জেন্ট জহুর বাহিনী গঠিত হয়। আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে এবং পাকিস্তানিদের দমন-পীড়ন মোকাবেলা করে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার দীপ্ত শপথে ছাত্র-যুবকদের নিয়ে অপর একটি বাহিনী গড়ে তোলা হয়। এ বাহিনীই জয় বাংলা বাহিনী। এ বাহিনীকে রাজপথের কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই মূলত এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাহসী এবং তেজোদীপ্ত তরুণদের একত্রিত করার উদ্দেশ্যে জয় বাংলা বাহিনী গঠিত হয়। এ বাহিনীকে ধারণা দেয়া হয় রাজপথে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে হবে, এমনকি যুদ্ধও করতে হবে।
মূলত ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্ধুদ্ধ হয়ে ছাত্র- যুবকরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। – স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ- সিদ্ধান্ত নেয় ২৩শে মার্চ ‘পাকিস্তান দিবস’ প্রত্যাখ্যান করে তারা ‘বাংলাদেশ দিবস’ পালন করবেন। জয় বাংলা বাহিনী এ কর্মসূচি পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তখন খুলনা জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন শেখ আব্দুল কাইয়ুম। তিনি শুরু থেকেই খুলনার জয় বাংলা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য মার্চের শুরু থেকেই খুলনা শহর ছিল উত্তাল। আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ- ও ছাত্র ইউনিয়ন-সহ সকল প্রগতিশীল স্বাধীনতাকামী মানুষ এক হয়ে রাজপথে নামে। ৩রা মার্চ খুলনায় ছাত্র- জনতার বিশাল মিছিলে হানাদার বাহিনী গুলি করে। এতে তিন জন শহীদ এবং অনেকে আহত হন। প্রতিবাদে মিছিলকারীরা শহরের কে ডি ঘোষ রোডে অবস্থিত কয়েকটি বন্দুকের দোকান ভেঙ্গে বন্দুক, রাইফেল ও গুলি সংগ্রহ করে। সংগৃহীত অস্ত্র নিয়ে জয় বাংলা বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যৌথভাবে খুলনা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-যুবকদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে। প্রায় মাসব্যাপী এ-সকল কর্মসূচির পাশাপাশি চলে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও জয় বাংলা বাহিনীর ‘বাংলাদেশ দিবস’ পালনের প্রস্তুতি। জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যরা খুলনা জেলা স্কুল মাঠে ২৩শে মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন সামরিক কায়দায় মহড়া দিতেন। পতাকা উত্তোলনের আয়োজনকে সফল করতে, পতাকাকে অভিবাদন জানানোর জন্য শেখ আব্দুল কাইয়ুম জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যদের খুলনা জেলা স্কুল মাঠে ডামি রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন। ২৩শে মার্চ সর্বত্র বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি খুলনায় সফল করতে এ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা পালন করে। [গৌরাঙ্গ নন্দী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড