বীর প্রতীক খায়রুল বাশার খান
খায়রুল বাশার খান, বীর প্রতীক (১৯৩১-২০০৭) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩১ সালের ১লা জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার গোপীনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বে এ গ্রাম। খায়রুল বাশার খানের পিতার নাম আমীর আলী খান এবং মাতার নাম ফিরোজা বেগম। তিনি প্রথমে গোপীনাথপুরে, পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং কিছুদিন কলকাতায় অধ্যয়ন করেন। তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন।
খায়রুল বাশার খানের কর্মজীবনের শুরু পুলিশ বাহিনীতে চাকরির মাধ্যমে। পরে তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগদান করেন। ইপিআর-এর সুবেদার মেজর হিসেবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন তিনি যশোরে কর্মরত ছিলেন। তিনি অন্য বাঙালি ইপিআর সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। বেনাপোল দিয়ে তাঁরা ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে গিয়ে তিনি ‘জেড’ ফোর্সে যুক্ত হন। এ ফোর্সের অধীনে তিনি বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার কামালপুর বিওপি-তে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে তিনি অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খায়রুল বাশার খানের পরিবারের সদস্যরা পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হন। রাজাকারদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে পাকসেনারা খায়রুল বাসারের পিতা আমীর আলী খানকে গোপীনাথপুর গ্রামে হত্যা করে। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা তখন খুলনার টুথপাড়ায় বাস করতেন। রাজাকার ও পাকসেনারা দুবার খুলনাস্থ তাঁদের বাসায় আক্রমণ করে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক খায়রুল বাশার খানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয় (গেজেট নম্বর ৪২২, খেতাবের সনদ নম্বর ১৭২)।
স্বাধীনতার পর খায়রুল বাশার খান বাংলাদেশে রাইফেলস (বিডিআর, বর্তমান বিজিবি)-এ যোগদান করেন। বিডিআর- এর ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (ডিএডি), এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (এডি) ও ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে তিনি বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বিডিআর-এর মহাপরিচালকের এডিসি, চট্টগ্রামে এডজুট্যান্ট এবং রাঙ্গামাটিতে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে খায়রুল বাশার খান কৃতিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালের ১৭ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
খায়রুল বাশার খান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ রাইফেলস শিরোনামে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ৪ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জোবেদা বাশার। [জালাল আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড