খারঘর-বরাইল গণহত্যা (নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
খারঘর-বরাইল গণহত্যা (নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ১০ই অক্টোবর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সংঘটিত করে। এ গণহত্যায় ৪৩ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
উপজেলার বরাইল ইউনিয়নের বরাইল গ্রামের পশ্চিমে একটি ছোট গ্রাম খারঘর। এর পশ্চিমে পাগলা নদী, উত্তরে শরিফপুর ও আশুগঞ্জ, পূর্বে চিলোকুট ও সাদেকপুর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে তিতাস ও পাগলা নদী। ৭১-এ খারঘর গ্রামে লোকসংখ্যা ছিল ৭০০ জনের মতো।
১০ই অক্টোবর খুব সকালে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী খারঘর ও পার্শ্ববর্তী বরাইল গ্রামে আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনী রাজাকারদের নিয়ে তিনটি গ্রুপ করে খারঘর গ্রামের ভেতরে বিভিন্ন বাড়িতে প্রবেশ করে যাকে যে অবস্থায় পায়, তাকেই গুলি করে ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। এ গণহত্যায় গ্রামের ৪৩ জন মানুষ শহীদ এবং শতাধিক আহত হন। পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সারাদিন গ্রামের বাড়িঘর ও বরাইল বাজারে লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সন্ধ্যার দিকে আশুগঞ্জ চলে যায়। পরে গ্রামের মানুষ, পাশের গ্রাম থেকে আত্মীয়-স্বজন ও মুক্তিযোদ্ধারা এসে খারঘর গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় পাগলা নদীর তীরে আফসার আলীর বাড়ি ও আ. ওয়াহাব মিয়ার বাড়িতে ৪৩ জন শহীদদের লাশ ২টি গর্তে সমাহিত করে, যার এটিতে মহিলা এবং অন্যটিতে পুরুষদের রাখা হয়। গণকবরের ওপর একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিন হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী বরাইল গ্রামের একজন নারীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ৯ জন লোককে ধরে নিয়ে যায়। পরে মহিলাকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ৮ জনকে আশুগঞ্জ নিয়ে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তারা হলেন – হরেন্দ্র মজুমদার (৪০), অমৃত দেবনাথ (৪০), ক্ষেত্রমোহন দেবনাথ (৬০), অনিরুদ্ধ দেবনাথ (২২), রাজমোহন সূত্রধর (৪০), পরেশ কর্মকার (২৬), যোগেন ভৌমিক (৪৫) ও কৃষ্ণধন ভৌমিক (৪০)। তাদের লাশও পাওয়া যায়নি। মহিলা ছাড়া পেয়ে তার স্বামী তারামোহন দেবনাথ ও তিন ছেলে তিন মেয়েকে নিয়ে ভারতে চলে যান। খারঘর গণহত্যায় শহীদ গ্রামবাসীরা হলেন- ফুল মিয়া (পিতা হাফিজ মিয়া), রেণু মিয়া (পিতা ফুল মিয়া কমান্ডার), আফাজ উদ্দিন (পিতা আলী নেওয়াজ), সাজেদা বেগম (পিতা আলী নেওয়াজ), আয়েশা (পিতা আ. মান্নান), জোবেদা খাতুন (স্বামী আবু তাহের), আ. খালেক (পিতা আ. রহমান), আলী আহাম্মদ (পিতা আব্বাস আলী), দারু মিয়া (আলী আকবর), ফুল মিয়া (পিতা আলী আকবর), মলফত আলী (পিতা জসর আলী), আলী নেওয়াজ (পিতা মুন্সী ফজিল), আ. জলিল (পিতা আছু মোল্লা), খুরশেদ মিয়া (পিতা চেরাগ আলী), আ. ছাদির (পিতা বলি মাহমুদ), জজ মিয়া (পিতা দারুগালী), মতি মিয়া (পিতা কফিল উদ্দিন), সুরুজ মিয়া (পিতা কফিল উদ্দিন), কামাল শাহ (পিতা আবদুল আজিজ), অহিদ মিয়া (পিতা বাদশাহ মিয়া), আবুল কাশেম (পিতা আ. মজিদ), রোকেয়া বেগম (পিতা আ. মজিদ), ছোবান মিয়া (পিতা দানু মিয়া), রহিছ মিয়া (পিতা আ. ছোবান), রহিছ মিয়া (পিতা ইসহাক মিয়া), কালাচাঁন মিয়া (পিতা হাফিজ উদ্দিন), ধন মিয়া (পিতা গোলাম হোসেন), মস্তু মিয়া (পিতা অলফত আলী), জাহের মিয়া (পিতা আ. করিম), তৈয়ব আলী (পিতা নজব আলী), ধন মিয়া (পিতা ফুল মিয়া), সুফিয়া খাতুন (স্বামী ঈসমাইল মিয়া), আবুল কাসেম (পিতা ঈসমাইল মিয়া), আবুল হোসেন (পিতা ঈসমাইল মিয়া), আলেক মিয়া (পিতা ঈসমাইল মিয়া), রহিছ উদ্দিন (পিতা ছন্দর আলী), ফাতেমা বেগম (পিতা রহিছ উদ্দিন), তব্ধব আলী (পিতা নোওয়াব আলী), নিজাম উদ্দিন (পিতা আব্দুল মিয়া), মালু মিয়া (পিতা জয়দর আলী), বালি মিয়া (পিতা সুবেদার), বালি মিয়া (পিতা আয়দর আলী) ও লুন্তু মিয়া (পিতা মাতবর আলী)। [মো. শাহজাহান সোহেল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড