You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.27 | খালখল্পী ব্রিজ গণহত্যা (দিনাজপুর সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

খালখল্পী ব্রিজ গণহত্যা (দিনাজপুর সদর)

খালখল্পী ব্রিজ গণহত্যা (দিনাজপুর সদর) সংঘটিত হয় ২৭শে মার্চ। দিনাজপুর সদর উপজেলায় সংঘটিত এ গণহত্যায় বেশ কয়েকজন নিরীহ বাঙালি শহীদ হন।
দিনাজপুর সদর থেকে উত্তরে দশ মাইল যাওয়ার পথে খালখল্লী ব্রিজের অবস্থান। ২৭শে মার্চ বাঙালি ইপিআর ও জনগণ ইপিআর হেডকোয়ার্টার্স কুঠিবাড়িকে দখলে আনার জন্য দিনাজপুর শহরে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এজন্য দিনাজপুর সদরে অসংখ্য বেরিকেড দেয়া হয়। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যাতে হানাদার বাহিনী দিনাজপুর শহরে ঢুকতে না পারে, সেজন্য দিনাজপুর-সৈয়দপুর সড়কেও গাছ ফেলে একাধিক স্থানে বেরিকেড দেয়া হয়। ২৭শে মার্চ সন্ধ্যার দিকে দিনাজপুর কুঠিবাড়ি থেকে হানাদার বাহিনীর একটি জিপগাড়ি দশ মাইল যাওয়ার পথে খালখল্লী ব্রিজের নিকট গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে এবং পার্শ্ববর্তী মোস্তফাপুর, গোবিন্দপুর, নান্দলবাড়ি, লোহারগেট, রানিপুর, রানিগঞ্জ, হরিরামপুর, শুভ্রা প্রভৃতি গ্রাম থেকে বেশ কয়েকজন যুবককে ব্রিজের পাশে ধরে আনে। তারপর তাদের হাত-পা বেঁধে বেয়নেট দিয়ে আঘাত ও গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। এটাই ছিল দিনাজপুর জেলার প্রথম গণহত্যা, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে খালখল্পী ব্রিজ গণহত্যা নামে পরিচিত। এ গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন অনেকে। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- মনিরউদ্দিন আনোয়ার মনু (পিতা ফুলু মোহাম্মদ সরকার, শুভ্রা), ময়েজউদ্দিন আহমেদ (রানিগঞ্জ), কবিরাজ নিত্যানন্দ সরকার (শুভ্রা), গোলিয়া বর্মণ রায় (রানিগঞ্জ), তার ভাই আনন্দ মোহন রায়, পুণ্য চন্দ্র রায় (শুভ্রা), সমির উদ্দিন আহমেদ (শুভ্রা) এবং আমেশ্বর কর্মকার (শুভ্রা)। এ ঘটনায় আহত আদিবাসী যুবক সুরেন (শুভ্রা) এখনো জীবিত আছেন। গুলিতে তার দাঁত উড়ে গিয়েছিল।
খালখল্লী ব্রিজ গণহত্যা দিনাজপুরে বাঙালিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২৮শে মার্চ বাঙালি ইপিআরদের সঙ্গে বাঙালি যুবকরা মিলিত হয়ে দিনাজপুর কুঠিবাড়ি ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে সশস্ত্র অভিযান চালান এবং কুঠিবাড়ি দখলে নেন। [মাসুদুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড