খালিয়া গণহত্যা (রাজৈর, মাদারীপুর)
খালিয়া গণহত্যা (রাজৈর, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ২০শে ও ২৭শে মে। মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের খালিয়া একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম। এ গ্রামের বহু হিন্দু নরনারী হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর স্থানীয় রাজাকারদের হাতে এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। নিরীহ গ্রামবাসীকে তারা হত্যা করে, গ্রামে নির্বিচারে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ ঘটায় এবং অনেক নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
খালিয়া গণহত্যায় অংশ নেয়া পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার- বাহিনী এসেছিল টেকেরহাটের ঘাঁটি থেকে। তারা প্রথমে রথবাড়ি, কদমবাড়ি ও ফুলবাড়ি গ্রামে প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হত্যা করে।
দ্বিতীয় দফায় তারা এ গ্রামে হামলা চালায় ২৭শে মে। এদিন খালিয়া দক্ষিণ পাড়ায় কেনারামকে খালিয়া হাইস্কুলের দক্ষিণ পাশে গুলি করে হত্যা করে এবং বাড়ৈ বাড়ি ও কুটিশ্বর মণ্ডলের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। কয়েকটি পরিবার হানাদারদের ভয়ে একটি জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল ছোট বাচ্চারাও। একটি ছোট বাচ্চা অবিরাম কান্নাকাটি করছিল। শত চেষ্টা করেও বাচ্চাটির কান্না থামাতে পারছিলেন না তার মা। কান্নার শব্দ শুনে পাকসেনারা চলে আসতে পারে এ ভয়ে সবার প্রাণ বাঁচাতে এক পর্যায়ে মা বাচ্চার কান্না থামাতে তার মুখে হাতচাপা দিয়ে রাখেন। মায়ের হাতের চাপে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে বাচ্চাটি মারা যায়। হানাদার বাহিনীর আক্রমণ থেকে সবাইকে বাঁচানোর জন্য মায়ের হাতে প্রাণ যায় সন্তানের।
এ গ্রামের ধন্য চন্দ্র মণ্ডল একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ-এর প্রতিষ্ঠাতা কর্মী ছিলেন। তখন সেনদিয়ায় কমল কান্তি রায়, খালিয়ার কার্তিক চন্দ্র সাহা, তড়িৎ দে, ওহাব মোল্লা, শওকত হাওলাদার, তাহের আলী হাওলাদার প্রমুখ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। মাদারীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আছমত আলী খান ও টুনু মান্নান প্রায়ই ধন্য চন্দ্র মণ্ডলের বাড়িতে আসতেন। এ গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী নেতা চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী। এ গ্রামের গৌরচন্দ্র বালা যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। ধন্য চন্দ্রের ছেলে খালিয়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ সমস্ত ঐতিহ্যের কারণে এসব ব্যক্তির বাড়িতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। খালিয়া গ্রামে গণহত্যায় শহীদ কয়েকজন হলেন- চণ্ডীচরণ বালা, কেনারাম মণ্ডল, পুণ্য চরণ পাল ও এলোকেশী কুণ্ডু। [শেখ নাছিমা রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড