You dont have javascript enabled! Please enable it!

খালিশপুর মুন্সীবাড়ি গণহত্যা (খুলনা শহর)

খালিশপুর মুন্সীবাড়ি গণহত্যা (খুলনা শহর) সংঘটিত হয় ৭ই এপ্রিল। এতে ১২ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি মুন্সী সিদ্দিকুর রহমান অত্র এলাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তাঁর বাড়ি খালিশপুরের গোয়ালখালী এলাকার খুলনা-যশোর রোড ও রেল লাইনের গা ঘেঁষে। খালিশপুর ছিল প্রধানত অবাঙালি বিহারিদের বাসস্থান। বিহারিরা বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোর বিরোধী ছিল। তাই শুরু থেকেই তারা বাঙালিদের ওপর চড়াও হয়। যেহেতু মুন্সী বাড়ির প্রধান ব্যক্তি বাঙালিদের এই সংগ্রামে স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন, সেহেতু তিনি ছিলেন বিহারিদের চক্ষুশূল।
বিহারিরা মুন্সী বাড়ি আক্রমণ এবং মুন্সী সিদ্দিকুর রহমানকে শায়েস্তা করার পথ খুঁজতে থাকে। বাড়িটিতে পুরুষ সদস্যের সংখ্যা ছিল অনেক এবং অস্ত্রশস্ত্রও ছিল। সে-কারণে হঠাৎ করেই বাড়িটিতে তারা আক্রমণ না করে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ৭ই এপ্রিল সকালে খালিশপুরের বিহারিদের মধ্য থেকে মতিউল্লা, ফরিদ মিয়া, মোহম্মদ আলী প্রমুখ মুন্সী বাড়িতে যায়। তারা মুন্সী সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বৈঠকের সমাপ্তি টানে।
কিন্তু ঐদিন দুপুরের পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত ও আত্মরক্ষার জন্য বাড়িটিতে নিয়মিত পাহারা বসানো ছিল। বাড়ির ছাদ থেকে আশপাশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হতো। হঠাৎ করে পাহারায় নিয়োজিত জনৈক সদস্যের নজরে আসে বাড়ির দিকে পাকিস্তানি সেনাদের একটি গাড়ি আসছে। বিপদের আঁচ করতে পেরে মুন্সী সিদ্দিকুর রহমানকে বাড়ির পেছন দিক থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পাকসেনা বহনকারী কয়েকটি গাড়ি এসে উপস্থিত হয় এবং গাড়িগুলো বাড়িটিকে ঘিরে অবস্থান নেয়। এদিকে মুন্সী সিদ্দিকুর রহমানের ভাগ্নে আক্তারুজ্জামান দিপু ছাদ থেকে চিৎকার করতে-করতে নিচে নেমে আসে এবং সকলকে বাড়ি থেকে সরে যেতে বলে। পাকসেনারা দিপুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। দিপু চিৎকার করে লাফিয়ে পড়ে প্রথমে মৃতের মতো পড়ে থাকে এবং পরে দ্রুত রেল লাইনের ওপারে একটি ঝুপড়ির মধ্যে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বাড়ির কেউ আর পালাতে পারেনি। ততক্ষণে পাকিস্তানি সেনারা বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বাড়িতে এসে মুন্সী সিদ্দিকুর রহমানকে খুঁজতে থাকে। তাঁকে না পেয়ে তারা বাড়ির পুরুষ সদস্যদের এক জায়গায় জড়ো করে এবং পূর্বদিকের বাঙ্কারের সামনে দাঁড় করিয়ে তাদের হত্যা করে। সেদিন যারা পাকসেনাদের হাতে নিহত হন, তারা হলেন- এস এম শহিদুর রহমান রুনু ও এস এম লতিফুর রহমান মোহন (পিতা এস এম জোবায়েদ আলী মাস্টার), মুন্সী মিজানুর রহমান তপন ও মুন্সি মনিরুল ইসলাম স্বপন (পিতা মুন্সী আতোয়ার রহমান), মুন্সী আলতাফ হোসেন আলতু (পিতা মুন্সী আফতাবউদ্দিন), মুন্সী বাড়ির জামাই হাবিবুর রহমান, মুজগুন্নী কাজী বাড়ির সন্তান কাজী শহিদুল ইসলাম মুকুল, লিয়াকত হোসেন (ড্রাইভার), হারেজ শরীফ (দারোয়ান), এনায়েত শরীফ (দারোয়ান), সম্ভু (বাড়ির কর্মী) ও আব্দুল আজিজ (বাড়ির কর্মী)। [গৌরাঙ্গ নন্দী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!