You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.28 | খাদিমনগর চা-বাগান গণহত্যা (সিলেট সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

খাদিমনগর চা-বাগান গণহত্যা (সিলেট সদর)

খাদিমনগর চা-বাগান গণহত্যা (সিলেট সদর) সংঘটিত হয় ২৮শে মার্চ ও ১৯শে এপ্রিল। এতে শতাধিক লোক প্রাণ হারায়।
২৮শে মার্চ সকালে পাকিস্তানি সৈন্যরা খাদিমনগর চা- বাগানের ৩ নম্বর বস্তিতে হানা দেয়। তারা ঘুম থেকে তুলে শ্রমিকদের একসঙ্গে জড়ো হতে নির্দেশ দেয়। বস্তির মাঝামাঝি জায়গায় সবাই জড়ো হলে তাদেরকে দুভাগে ভাগ করে। এক দলে নারী-শিশু, আরেক দলে পুরুষ। তারপর নারী-শিশুদের দলকে বিশ্বহরি নামক একজনের ঘরে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে পাকিস্তানি বর্বর সেনারা আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের গগনবিদারী আর্তচিৎকারে এক মর্মদত্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এক সময় বন্দিরা পেছনের দরজা ভেঙ্গে পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়। তবে ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুরুষের দলটিকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি জায়গায়। প্রাণরক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে অনেকেই প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করে। কেউ-কেউ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। যারা পারেনি তাদের বস্তির পূর্বদিকে একটি ছোট নালার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কতজনকে সেদিন হত্যা করা হয় তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি। এখানে নিহতদের মধ্যে গণপতি মাহালী, চরণ মাহালী, নিরঞ্জন মাহালী, সুকরা মাহালী, যোগীন্দ্র মাহালী, নবকুমার মাহালী, উপেন্দ্র কুমার মাহালী, ভেড়ি ভাগাল সাঁওতাল, বাবুলাল কাঁহার, ছনুয়া মাহালী, মনমোহন সাঁওতাল, সানুয়া মাহালী ও রেবতী মাহালীর নাম জানা গেছে।
৩০শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী খাদিমনগর চা- বাগানের উইং ব্যারাক ঘিরে ফেলে এবং আক্রমণ করে। নিরস্ত্র অবস্থায় হাবিলদার শরাফত ও কোয়ার্টার গার্ড হাবিলদার মুজিবুর রহমান সেদিন পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনী ১৯শে এপ্রিল আবার খাদিমনগর চা- বাগানে এসে চা-শ্রমিকদের জড়ো করে। রেশন দেয়া হবে বলে তাদের ব্যবস্থাপকের বাংলোর পেছনের এক কোয়ার্টারে নিয়ে যায় এবং সবাইকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রথমে জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। গ্যাসে দম বন্ধ হয়ে ছটফট করতে থাকে সবাই। তারপর বর্বররা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে ও দম বন্ধ হয়ে একে একে ৪৪ জন প্রাণ হারায়। নিহতদের মধ্যে দুর্গা হাজং, মতিলাল হাজং, দিলীপ হাজং, বনোয়ারী লাল হাজং, চিলর হাজং, হাড়ো ছত্রী, তয়লা ছত্রী, সুধীর রবিদাস, সহদেব রবিদাস, খরবনা রবিদাস, ভানু ছত্রী, চরু নায়েক, ইন্দ্র নায়েক, সুরেন্দ্র নায়েক, যোগেশ নায়েক, সুরেন্দ্র ছত্রী, অনিল খ্রিস্টান, চরুপ নায়েক, কিরণ হাজং, রামধানী রুহিদাস, মহেন্দ্র ছত্রী, রবি বাড়াইক, লালমোহন কর্মকার, নন্দ কর্মকার, ছবি ছত্রী ও দিলীপ শীলের নাম জানা গেছে। এখানে বাতাসিয়া রুহি দাসসহ আরো অনেক শ্রমজীবী নারী পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধর্ষিত হন। [মো. মুহিবুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড