You dont have javascript enabled! Please enable it!

খানজিয়া অপারেশন (কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা)

খানজিয়া অপারেশন (কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা) পরিচালিত হয় ৩রা জুলাই। এতে ১ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৪ জন আহত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে কালীগঞ্জ থানার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রাম খানজিয়া। ইছামতী নদীর তীরে একটি বিওপি ছিল। দুর্গম ও নিরাপদ ভেবে সেখানে পাকসেনারা একটি শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে। এ ক্যাম্পের পাকসেনা, মিলিশিয়া ও রাজাকার-রা প্রায়ই অত্যাচার, লুটপাট ও নারীনির্যাতন চালাত। এছাড়া এখানকার পাকসেনাদের উপস্থিতি মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করত। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধারা খানজিয়ার এ ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ভারতের বরুণহাট ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে খানজিয়া ক্যাম্প আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়া হয়। মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ক্যাপ্টেন এম নূরুল হুদা, লে. মাহফুজ আলম বেগ, হাবিলদার সোবহান, সুবেদার আব্দুল গফুর, শেখ নাসিরুদ্দীন, শেখ ওয়াহেদুজ্জামান, আকবর হোসেন ও আব্দুল বারেক। তাঁদের সঙ্গে আরো ছিলেন আবু তাহের, মোকাররম হোসেন, ইপিআর আব্দুল হক, ইমান আলী, ইউনুছ আলী, কালাচান প্রমুখ।পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যাপ্টেন এম নূরুল হুদা ৩রা জুলাই ৬০-৭০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে খানজিয়া পাকঘাঁটি আক্রমণ করেন। উক্ত তারিখ দিবাগত রাত ১০টার দিকে ঘোরতর অন্ধকার আর বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ইছামতী নদী পেরিয়ে পাশের খানজিয়া ক্যাম্প থেকে ১ কিমি দূরে পাশবর্তী গ্রাম সুইলপুরের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর অবস্থান নেন। পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাত ১২টার দিকে ক্যাপ্টেন এম নূরুল হুদার দল বেড়িবাঁধের ওপর থেকে, লে. মাহফুজ আলম বেগ ও শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের দল ক্যাম্পের পেছন থেকে আর সীমান্তের ওপার থেকে সুবেদার আব্দুল গফুরের নির্দেশে আর্টিলারি দল ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে গোলা নিক্ষেপ করেন। দক্ষিণ-পশ্চিম ও পেছন দিক থেকে গুলি সরবরাহ করা হয়। পাকক্যাম্প থেকেও পাল্টা গুলি ছোড়া হয়। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে লে. মাহফুজ আলম বেগের দলটি ক্যাম্পের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইতোমধ্যে ক্যাপ্টেন হুদার দলও সেখানে পৌঁছে যায়। কিন্তু ততক্ষণে শত্রুরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পাকবাহিনীর ১ জন সৈন্য নিহত হয় এবং ৪ জন গুরুতর আহত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। এ- যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু-পরিত্যক্ত একটা এলএমজি, কিছু গুলি ও অন্যান্য রসদপাতি সংগ্রহ করেন। খানজিয়া যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাঁরা আরো নতুন এলাকা জয় এবং শত্রু হননে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন [এম এম নজমুল হক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!