You dont have javascript enabled! Please enable it! খানিকুড়ির চরা গণহত্যা (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) - সংগ্রামের নোটবুক

খানিকুড়ির চরা গণহত্যা (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ)

খানিকুড়ির চরা গণহত্যা (গফরগাঁও, ময়মনসিংহ) অক্টোবর মাসের শেষ দিকে সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ১১ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। শিলা রেলব্রিজের পাশে পাকিস্তানি বাহিনী একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা এখানে মশাখালী, নামা-লংগাইর, কোনাপাড়া এলাকার রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও আওয়ামী লীগ সমর্থক লোকজনকে ধরে এনে অত্যাচার করত। কমান্ডার ইকবাল-ই-আলম কামালের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এ ক্যাম্প আক্রমণের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কুমার বাড়ির পাশে ‘চোরদের খামার’ বলে পরিচিত একটি জনহীন মাঠের কাছে অবস্থান করেন।
রাজাকারদের মাধ্যমে হানাদাররা তাঁদের অবস্থানের খরব পেয়ে সেখানে আক্রমণ চালায়। ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদাররা এ সময় ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ মোট ১১ জনকে ক্যাম্পে ধরে এনে ব্যাপক অত্যাচার চালায়। পরদিন সকালে তাঁদেরকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ গণহত্যার শিকার নামা- লংগাইর গ্রামের ৫ জনের পরিচয় জানা যায়। তারা হলেন- মো. উহুন বেপারী, মো. আরবান বেপারী, মো. সুৰ্য্যত আলী, মো. আবদুল, মো. ইসলাম শেখ। হানাদাররা খানিকুড়ির চরা গণকবরে একজনকে জীবিত অবস্থায় সমাহিত করে। পরের দিন রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে হানাদাররা কোনাপাড়া ও নামা-লংগাইর গ্রামে গিয়ে গণকবর খোঁড়ার জন্য ৪ জনকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে আসে। একজন আসতে অস্বীকৃতি জানালে বন্দুকের নলের আঘাতে তার চোখ নষ্ট করে দেয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে গোরখোদক খালেক, হাছু, একু ফরাজী ও সুবেদ আলী কোনোভাবে একটি কবর খুঁড়ে লাশগুলো দাফন করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের নিকট কাওরাইদ থেকে মশাখালী স্টেশন যাবার পথে শিলা নদীর ওপর নির্মিত রেলব্রিজের ২০০ গজ পূর্বদিকে চরের মধ্যে এ গণকবরটি অবস্থিত, স্থানীয়দের নিকট যা ‘নেয়ামতের বড়ই গাছতলার গণকবর’, ‘নামা-লংগাইর চরের গণকবর’ কিংবা ‘শিলা ব্রিজের পাশের গণকবর’ নামে পরিচিত। দত্তপাড়া নিবাসী মোফাজ্জল মিয়ার জমিনে এটি স্মৃতিফলকহীনভাবে রয়েছে। [নিপা জাহান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৩য় খণ্ড