বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাবেক বিএসএফ প্রধান খসরু এফ রুস্তমজী
খসরু এফ রুস্তমজী, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ (১৯১৬- ২০০৩) ভারতের সাবেক বিএসএফ প্রধান। তিনি ১৯১৬ সালের ২২শে মে নাগপুরের কাম্পটিতে জন্মগ্রহণ করেন। পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত তিনি নাগপুরের বিজ্ঞান কলেজের ডেমোনস্ট্রেটর ছিলেন (১৯৩৬-৩৮)। ব্রিটিশ-ভারত পুলিশ বাহিনীর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মধ্যপ্রদেশে প্রথম হয়ে তিনি এ বাহিনীতে যোগদান করেন (১৯৩৮)। এএসপি হিসেবে তিনি ১৯৪২ সালে ইন্ডিয়ান পুলিশ মেডেল লাভ করেন। ভারতের স্বাধীনতার পর তাঁকে এসপি হিসেবে রায়গড় ও সীমান্ত জেলা আকোলায় বদলি করা হয়। ১৯৪৯ সালে তাঁকে আওরঙ্গবাদে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর প্রধান সিকিউিরিটি অফিসারের দায়িত্ব পান (আগস্ট ১৯৫২ সাল) এবং মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে মনোনীত করা হয় (১৯৬৫)। দেশ সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত হন (১৯৭২)।
অবসর গ্রহণের পর খসরু এফ রুস্তমজী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ পদে থাকাকালীন সময়ে ভারতীয় কোস্ট গার্ড গঠনের বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রধান হিসেবে তিনি কার্য সম্পাদন করেন। অবসর জীবনে তিনি সমসাময়িক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন, যেগুলো পাঠকসমাজে সমাদৃত হয় এবং দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। বহুবিধ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পদ্মবিভূষণ পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত হন। তিনিই একমাত্র ভারতীয় পুলিশ অফিসার, যিনি এ খেতাব লাভ করেন। জনস্বার্থমূলক একটি মামলায় তিনি সাহায্য করার ফলে বিনা বিচারে সাজাপ্রাপ্ত সমগ্র ভারতের ৪০,০০০ কয়েদি মুক্তিলাভ করে। ২০০৩ সালের ২রা মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকেই খসরু এফ রুস্তমজী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। অপারেশন পরিচালনার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে তিনি ছিলেন আন্তরিক। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক খসরু এফ রুস্তমজীকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয় (১৫ই ডিসেম্বর ২০১২)। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড