You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | খাগড়াছড়ি অপারেশন (খাগড়াছড়ি সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

খাগড়াছড়ি অপারেশন (খাগড়াছড়ি সদর)

খাগড়াছড়ি অপারেশন (খাগড়াছড়ি সদর) পরিচালিত হয় ১৪ই ডিসেম্বর। ক্যাপ্টেন অশোক দাশগুপ্ত ওরফে বাবুল চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন। একাধিক মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ এতে অংশ নেয়। মিত্রবাহিনী-র সাপোর্টে এখানকার যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্য, তাদের সহযোগী মিজো, রাজাকার ও হিলরাজ বাহিনীর ৩০-৪০ জনের মতো হতাহত হয়। শত্রুপক্ষ রাঙ্গামাটির দিকে পালিয়ে যায়। ১৪ই ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা খাগড়াছড়ি দখলে নেন।
এপ্রিলের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী খাগড়াছড়ি দখলে নেয়। মূলত ২৭শে এপ্রিল মহালছড়ি যুদ্ধে বিশাল পাকিস্তানি ও মিজোবাহিনীর আক্রমণের এক পর্যায়ে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফুরিয়ে আসে, তখন মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে ভারতের দিকে চলে যান। এরপর শত্রুবাহিনী মহালছড়ি ও পরে ক্রমান্বয়ে খাগড়াছড়ি দখলে নেয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় রাজাকার, শান্তি কমিটি ও হিল রাজের সদস্যরা।
খাগড়াছড়ি অপারেশন হচ্ছে এ এ অঞ্চলের সর্বশেষ অপারেশন। দীঘিনালা থেকে এক কোম্পানি মিত্রবাহিনী এখানে আসে। রামগড় থেকে মিত্রবাহিনীর আরেক কোম্পানি আসে, সঙ্গে দেড়শর মতো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ক্যাপ্টেন অশোক দাশগুপ্ত একাধিক গ্রুপ নিয়ে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এখানকার অপারেশনে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীর হাবিলদার মোস্তাফিজুর রহমান, ইপিআর নায়েক সুবেদার খায়রুজ্জামান, পুলিশ বাহিনীর মো. মোস্তফা, ২০৯নং প্লাটুন কমান্ডার কাবিল মিয়া এবং ৯৩নং প্লাটুন কমান্ডার (শার্লি কোম্পানি) আলী আশরাফ। তাঁদের প্রত্যেকের নেতৃত্বে গড়ে ২৫-৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এসব মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ইউনুস মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবদুল বারেক, আবদুল কাদের, হাবিল মিয়া, আবদুল মান্নান, রুস্তম আলী, আবু তাহের, মোবারক হোসেন, মো. আলী-১, মো. আলী-২, শরবত আলী, মোমিন, কালা মিয়া, শিশু মিয়া, সিরাজ, শেখ আহমদ, আবদুস সোবহান, ইদ্রিস মিয়া, নোয়াব আলী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। ১৪ই ডিসেম্বর তাঁরা খাগড়াছড়ি দখলের জন্য অগ্রসর হন।
খাগড়াছড়ির হসপিটাল টিলা, জেলখানা ও থানাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প ছিল। সেখানে বিভিন্ন স্থানে বাঙ্কার খুঁড়ে রেখেছিল শত্রুসৈন্যরা। পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মিজো, রাজাকার, শান্তি কমিটি ও হিল রাজ বাহিনীর সদস্যরাও ছিল।
এদিকে ভাইবোনছড়া ক্যাম্প দখলের পর ১৩ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল অবস্থান নেয়। একই তারিখ উক্ত দলের ওপর নির্দেশ আসে খাগড়াছড়ি ক্যাম্প আক্রমণের। সে-মতো তাঁরাও ১৪ তারিখ খাগড়াছড়ি আক্রমণের জন্য অগ্রসর হন।
রামগড়ের পশ্চিম দিক থেকে একটি গ্রুপ, পূর্ব দিক থেকে একটি গ্রুপ এবং উত্তর দিক থেকে অপর একটি গ্রুপ এসে খাগড়াছড়ি আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। রাত ৯-১০টার দিকে তিনদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণ করেন। শত্রুসৈন্যরাও পাল্টা আক্রমণ করে। শুরু হয় প্রচণ্ড গোলাগুলি। ঘণ্টা খানেক ধরে যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে টিকতে না পেরে মিজোরা জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররা কেউ গাড়িতে কেউ লঞ্চে চড়ে মহালছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটির দিকে চলে যায়। এ- যুদ্ধে শত্রুদের ৩০-৪০ জনের মতো হতাহত হয়। শত্রুরা পালিয়ে যাওয়ার সময় নিহতদের লাশ নিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা খাগড়াছড়ি দখলে নেন ১৪ই ডিসেম্বর রাতে। পরের দিন তাঁরা শত্রুদের ক্যাম্পে গিয়ে বেশকিছু হালকা অস্ত্রশস্ত্র ও কিছু গোলাবারুদ খুঁজে পান। খাগড়াছড়ি দখলে নেয়ার পর দেখা যায় খাগড়াছড়ির প্রায় সব জায়গাতেই বাঙ্কার খোঁড়া ছিল। [ইয়াছিন রানা সোহেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড