খাজাঞ্চিবাড়ি গণহত্যা (সিলেট সদর)
খাজাঞ্চিবাড়ি গণহত্যা (সিলেট সদর) সংঘটিত হয় ২৯শে মে। পাকিস্তানি হানাদাররা এদিন একই পরিবারের ৫ জন ও অন্য কয়েকজনকে এক সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে।
পাকসেনারা খাজাঞ্চিবাড়ির মালিক চা ব্যবসায়ী নির্মল চৌধুরীকে এপ্রিল মাসে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আটক করে রাখে এবং পরে হত্যা করে। তখন থেকে তারা নির্মল চৌধুরীর বাড়িতে আক্রমণের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। পাকবাহিনীর লে. কর্নেল মাকসুদ, ফ্লাইট লে. আনসারি ও সুপারিনটেনডেন্ট জালালের নীলনকশা অনুযায়ী এ বাড়িতে আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ২৯শে মে দুপুরে পাকিস্তানি সৈন্যরা খাজাঞ্চিবাড়িতে এসে নির্মল চৌধুরীর পরিবারের সবাইকে জড়ো করে। তারপর তাদের দিয়ে বাড়িতে গর্ত খোঁড়ায়। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে বাড়ির বাসিন্দারা ঘরে ফিরে যান। রাতে সবাই একসঙ্গে খেতে বসলে পাকসেনারা আবার বাড়িতে হানা দেয়। সবাইকে গর্তের পাশে এনে বেঁধে ফেলে। তারপর গুলিবর্ষণ করে। এতে তৎক্ষণাৎ প্রভাবতী দেবী, দেবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, বিমল নাথ চক্রবর্তী, ব্রজেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, বিশ্বেশ্বর নাথ চক্রবর্তী ও অন্য কয়েকজন প্রাণ হারান। হানাদারদের গুলিতে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মারাত্মক আহত হন। হত্যাকাণ্ডের পর দেশীয় সহযোগীদের সাহায্যে নির্মল চৌধুরীর বাড়ির কয়েক লক্ষ টাকার সম্পদ লুণ্ঠন করে। হায়েনারা চলে গেলে আনা
মিয়া নামক এক প্রতিবেশী লাশগুলি মাটিচাপা দিয়ে রাখেন। স্বাধীনতার পর এসব লাশ উঠিয়ে শাস্ত্রসম্মতভাবে দাহ করা হয়। এদিকে নির্মল চৌধুরীর স্ত্রী শুক্লা চৌধুরী খাজাঞ্চিবাড়িতে একাকী দুর্বিষহ জীবন কাটিয়ে এক সময় মৃত্যুবরণ করেন। [মো. মুহিবুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড