You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম খবিরুজ্জামান

খবিরুজ্জামান, বীর বিক্রম (১৯৫১-১৯৭১) নেভাল কমান্ডোর জুনিয়র ইন্সপেক্টর ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। রাজবাড়ি জেলাধীন পাংশা উপজেলার অন্তর্গত বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে ১৯৫১ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল জব্বার মৃধা এবং মাতার নাম সুফিয়া খাতুন। ছাত্রাবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে মে মাসে চাচা মোসলেম উদ্দিন মৃধার সঙ্গে ভারতে যান। সেখানে নৌ-কমান্ডোর ফ্রগম্যান হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নৌ-কমান্ডো হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
খবিরুজ্জামান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, চালনা বন্দর, কুমার নদীর ফেরিঘাট প্রভৃতি স্থানের বহু অপারেশনে সাহসিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে দুটি অভিযান উল্লেখযোগ্য। তাঁর প্রথম অভিযান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে নোঙ্গর করা এম ভি হরমুজ নামের একটি তেলবাহী জাহাজ ধ্বংস করা। এতে পাকহানাদার বাহিনীর একদল সদস্যের অবস্থান ছিল। ১৫ই আগস্ট গভীর রাতে জাহাজটি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে অপারেশন জ্যাকপট- টিমের সদস্য হিসেবে একটি শক্তিশালী মাইন নিয়ে তিনি সাগরে নেমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাহাজের তলদেশে মাইন বেঁধে চলে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইন বিস্ফোরিত হয়। দেখতে-দেখতে হানাদার বাহিনীসহ জাহাজটি সাগরে তলিয়ে যায়। অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সম্পন্ন এ প্রথম অপারেশনে দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য খবিরুজ্জামান সকলের উচ্চ প্রশংসা অর্জন করেন। এরপর সহকারীদের নিয়ে তিনি চালনা বন্দরে যান। সেখানে পাকবাহিনীর কয়েকটি গানবোট ও বিদেশী জাহাজ ডুবিয়ে দেন। উত্তরোত্তর সফলতার জন্য তিনি সেপ্টেম্বর মাসে জুনিয়র ইনসপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি পান। ১২ই অক্টোবর মাদারীপুরে কুমার নদীতে টেকেরহাট ফেরিঘাট এলাকায় দুজন নৌ-কমান্ডো নিয়ে খবিরুজ্জামান একটি অপারেশন পরিচালনা করেন। তাঁরা ৩ জনই মাইন সঙ্গে নিয়ে নদীতে ডুব দেন নিজ-নিজ লক্ষবস্তুর উদ্দেশ্যে। সঙ্গী দুজন নৌ-কমান্ডো তাঁদের সঠিক লক্ষ্যে মাইন বাঁধতে সক্ষম হন। খবিরুজ্জামানের নির্দিষ্ট বোটটি স্থান পরিবর্তনের কারণে নদীর তলদেশ থেকে তিনি সেটির অবস্থান নির্ণয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন। বোটটির সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের লক্ষ্যে ক্ষণিকের জন্য তিনি পানি থেকে মাথা তুলতেই হানাদার বাহিনীর নজরে পড়েন এবং সঙ্গে-সঙ্গে তারা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। এ- সময় অন্য দুজন নৌ-কমান্ডো তাঁদের বাঁধা মাইনের বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হলে ঘাটের পন্টুন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান ও আত্মোৎসর্গের জন্য শহীদ খবিরুজ্জামানকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!