You dont have javascript enabled! Please enable it!

খলশি হত্যাকাণ্ড (ডুমুরিয়া, খুলনা)

খলশি হত্যাকাণ্ড (ডুমুরিয়া, খুলনা) সংঘটিত হয় মে থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে। খুলনা জেলার ডুমুরিরা উপজেলার খলশি গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের দ্বারা সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে ৩০ জন মানুষ প্রাণ হারায়। হত্যাকাণ্ডের পর হানাদার সৈন্যরা গ্রামে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
খলশি গ্রামটি ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। ডুমুরিয়া সদর থেকে এক কিলোমিটার উত্তরদিকে গ্রামটির অবস্থান। ডুমুরিয়ার প্রখ্যাত কৃষক নেতা শেখ আবদুল মজিদ (১৯৩১- ১৯৮৯)-এর বাড়ি এ গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর নেতৃত্বে ডুমুরিয়ায় একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছিল। এ বাহিনী ডুমুরিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকার রাজাকারদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে এ বাহিনীর গাবতলা (ডুমুরিয়ার শোভনা ইউনিয়ন) ও ধামালিয়ায় দুটি যুদ্ধ হয়। ফলে পাকবাহিনী ও -রাজাকার-রা সব সময় শেখ আবদুল মজিদ ও তাঁর বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করে। এ প্রেক্ষাপটে খলশি গ্রামে কয়েকবার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
পাকিস্তানি সেনারা ২রা মে সকালে একটি লঞ্চে করে ডুমুরিয়া থানায় আসে। এরপর থানার উত্তর পাশের ব্রিজ পার হয়ে তারা পালপাড়া এবং দাসপাড়ায় হত্যাকাণ্ড চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা খলশি গ্রামে আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ২ জনের প্রাণহানি ঘটে। পাকিস্তানি সেনারা এরপর শেখ আবদুল মজিদের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
পাকিস্তানি সেনাদের এ আক্রমণের পর ডুমুরিয়ার রাজাকাররা মাঝে-মাঝে খলশি গ্রামে হানা দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালাত। উত্তর ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ও ধামালিয়া এবং গুটুদিয়া ইউনিয়নের রাজাকাররা বিশেষ করে কোমলপুরের রাজাকার ছাত্তার মোল্লা ও আখেরাত মোল্লা এক্ষেত্রে খুব তৎপর ছিল। জুলাই মাস থেকে কয়েকবার রাজাকাররা খলশি গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে অনেককে হত্যা করে। গ্রামে যারা রাজাকার বাহিনীর হাতে নিহত হয়, তাদের একটি অংশ ছিল মজিদ বাহিনীর সক্রিয় সমর্থক। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও এ গ্রামের কয়েকজনকে রাজাকাররা হত্যা করে। মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে হত্যাকাণ্ড চলে।
খলশি গণহত্যায় নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। তবে কমপক্ষে ৩০ জন এখানে নিহত হন। তারা সবাই খলশি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে, তারা হলেন- নূর মোহাম্মদ শেখ ওরফে নূর খাঁ, আবুল হোসেন শেখ (পিতা শেখ মোদাচ্ছের), আবদুল গনি শেখ, ছেকমত শেখ, আবদুল মান্নান শেখ, ইসহাক আলী শেখ, মতিয়ার রহমান গাজী, বিলায়েত গাজী, রওশন আলী গাজী, চটা গাজী, আকবর গাজী ওরফে সাজেদ, ছলেমান খান, মোদাচ্ছের শেখ, আবদুস সামাদ শেখ (পিতা হাতেম আলী শেখ), আবদুস সবুর বিশ্বাস, মোকছেদ আলী, হেকমত জোয়ারদার, সুশীল বিশ্বাস, হালিম খাঁ, আবদুস সবুর বিশ্বাস ও সাত্তার মোড়ল। [দিব্যদ্যুতি সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!