You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক খলিলুর রহমান খান - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক খলিলুর রহমান খান

খলিলুর রহমান খান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৯) হাবিলদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিলোনিয়া রণাঙ্গনের বীর সৈনিক। তিনি ১৯৪৯ সালের ১০ই জুন নেত্রকোনা জেলা শহরের উত্তর সাতপাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুস সোবহান খান এবং মাতার নাম সখিনা খানম। তিনি ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে চাকরিরত অবস্থায় প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে তিনি এসএসসি পাস করেন।
১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় খলিলুর রহমান খান ত্রাণ বিতরণের কাজে পটুয়াখালী জেলায় অবস্থান করছিলেন। এ-সময় পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁকে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল ট্রেনিং সেন্টারে ডেপুটেশনে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে। একই নীলনকশার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম সেনানিবাসসহ অন্যত্র ঘুমন্ত বাঙালি সৈনিকদের ওপর তারা আক্রমণ করলে অনেকেই শহীদ হন। এ-সময় খলিলুর রহমান খানসহ কিছু বাঙালি সৈনিক ইবিআরসি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পালিয়ে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
পরবর্তী সময়ে খলিলুর রহমান খান ১নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমানের অধীনে যুদ্ধ করেন। তিনি ফেনীর ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, গুতমা, বল্লভপুর, শুভপুর, পরশুরাম, চম্পকনগরসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা এবং সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন। ২রা নভেম্বর ফেনীর বিলোনিয়ায় হানাদার বাহিনীর ওপর ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধে বিলোনিয়া হানাদারমুক্ত হয়। এ-যুদ্ধে খলিলুর রহমান খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ৬ই নভেম্বর ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমানের কোম্পানিসহ আরো কয়েকটি কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা শলিয়াদিঘীতে ডিফেন্স নেন। ৭ই নভেম্বর খুব সকালে হানাদার বাহিনী অতর্কিতে তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। আক্রমণে অগ্রবর্তী ডিফেন্সে থাকা ইপিআর দলটির প্রতিরোধ ব্যবস্থা শুরুতেই ভেঙ্গে পড়ে। হানাদাররা ইপিআর দলের কমান্ডার শহীদসহ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। এদিকে খলিলুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। দুপুর ৩টার দিকে ২টি পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর বোমা হামলা চালায়। এতেও খলিলুর রহমান পিছপা হননি। এক পর্যায়ে তাঁরা হানাদার সৈন্যদের সঙ্গে হাতাহাতি যুদ্ধে লিপ্ত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে হানাদার বাহিনী তাদের ৩০ জনের মৃতদেহ নিয়ে কোনোভাবে পালিয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ও সাহসী ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার খলিলুর রহমানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর খলিলুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন। ১৯৮২ সালে হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের সময় তিনি চাকরিচ্যুত হন। পারিবারিক জীবনে তিনি একজন বীরাঙ্গনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীর নাম রেহেনা খানম রুবি। এ দম্পতি নিঃসন্তান। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড