You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.20 | খড়মখালী-হোগলাবন গণহত্যা (চিতলমারী, বাগেরহাট) - সংগ্রামের নোটবুক

খড়মখালী-হোগলাবন গণহত্যা (চিতলমারী, বাগেরহাট)

খড়মখালী-হোগলাবন গণহত্যা (চিতলমারী, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ২০শে জুন। পাকবাহিনী, রাজাকার এবং স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা দালালরা এ গণহত্যায় অংশ নেয়। বাগেরহাট মহকুমা (বর্তমান জেলা)র চিতলমারী থানার হিন্দু অধ্যুষিত দশ মহল এলাকার খড়মখালী গ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী হোগলাবনে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। এতে ২ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারাবাগান অঞ্চলের শতশত মানুষ ভারতে যাবার জন্য দশ মহলের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। তাদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছিল খড়মখালী গ্রামে। পাকবাহিনী, রাজাকার ও দালালদের আক্রমণে ভয় পেয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকে গরীবপুর-খড়মখালী খালের উত্তর পাশে, খড়মখালী গ্রামের পূর্ব পাশে এবং বর্তমান শেরে বাংলা কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত বিস্তীর্ণ হোগলাবনে লুকিয়ে ছিল। বাবুগঞ্জ বাজার থেকে পশ্চিম দিকে, কালিগঞ্জ বাজার থেকে উত্তর দিকে, মুন্তিগঞ্জ-কান্দাপাড়া-দেপাড়া থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে এবং বড়গুণি-নালুয়া থেকে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে পাকবাহিনী সমগ্র দশ মহল ঘিরে ফেলে। তারা হোগলাবনে আশ্রিত মানুষের অবস্থান আঁচ করতে পেরে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। এদিন হোগলাবনে ২ শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়। বহিরাগত হওয়ার কারণে তাদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। নিহতদের মরদেহ কেউ উদ্ধার করে সৎকারের ব্যবস্থাও করেনি। সেদিন পাকবাহিনীর হাতে গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার (বরিশাল ও খুলনা অঞ্চল) এ বি এম রেজাউল করিম (সাবেক অধ্যক্ষ, মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ) ধরা পড়েন। তবে তিনি ছদ্মনাম ও পরিচয় দিয়ে রেহাই পান। এ-সময় খড়মখালী ও অন্যান্য গ্রামে অনেক নিরীহ মানুষ পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। খড়মখালী গ্রাম ও হোগলাবনের কাছে স্থানীয়দের মধ্যে যারা প্রাণ হারান, তাদের অনেকের পরিচয় জানা যায়নি। যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- অমর গুহ (পিতা নেপাল গুহ, পিপরাডাঙ্গা), ছবি রাণী গুহ (পিতা অমর গুহ, পিপরাডাঙ্গা), দেবেন্দ্র মল্লিক (পিতা গণেশ চন্দ্র মল্লিক, পিপরাডাঙ্গা), রাধাকান্ত গাইন (পিতা পূর্ণ চন্দ্র গাইন, পিপরাডাঙ্গা), নারায়ণ চন্দ্র মল্লিক (পিতা গণেশ চন্দ্র মল্লিক, পিপরাডাঙ্গা), সখিচরণ পরামানিক (পিতা নসিরাম পরামানিক, পিপরাডাঙ্গা), যোগেন্দ্রনাথ গুহ (পিপরাডাঙ্গা), ইন্দুভূষণ মল্লিক (পিতা বিষ্ণুচরণ মল্লিক, বাঁশবাড়িয়া), উপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (পিতা প্রিয়রঞ্জন চক্রবর্তী, চরবানিয়ারী), জনার্ধন পোদ্দার (পিতা নগর পোদ্দার, খড়মখালী), বাসুদেব হীরা (পিতা ভদ্রকান্তি হীরা, খড়মখালী), মহেন্দ্রনাথ মণ্ডল (পিতা রতিকান্ত মণ্ডল, খড়মখালী), যোগেন্দ্রনাথ মজুমদার (পিতা যাদব চন্দ্র মজুমদার, খড়মখালী), আনন্দ মাঝি (পিতা ধৈনুরাম মাঝি, খড়মখালী), আদিত্য মজুমদার (পিতা গণেশ মজুমদার, খড়মখালী), বিমল হীরা (পিতা মহাজন হীরা, খড়মখালী), নীলকমল মণ্ডল (পিতা কলিচরণ মণ্ডল, খড়মখালী) ও আফজাল হোসেন মোল্লা (পিতা জব্বার মোল্লা, খড়মখালী)। [মনীন্দ্র নাথ বোস]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড