You dont have javascript enabled! Please enable it!

কোরপাই গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

কোরপাই গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা) ৯ই সেপ্টেম্বর থেকে কয়েকবার সংঘটিত হয়। এ গণহত্যায় ২০ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের একটি গ্রাম কোরপাই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কোরপাই গ্রামের বুক চিড়ে চলে গেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে এ গ্রামে কয়েকবার গণহত্যা ঘটে।
৯ই সেপ্টেম্বর (ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার) ভোররাত ৪টায় পাকিস্তানি বাহিনী চান্দিনা থেকে এসে কোরপাই গ্রাম আক্রমণ করে। তারা গ্রামের বাড়ি-বাড়ি হানা দেয়। গ্রামের আবদুল জব্বারকে আশরা এলাকায় গুলি করে হত্যা করে। তার লাশ ধানক্ষেতে পাওয়া যায়।
কোরপাই গ্রামের মিয়াজান মিয়ার ৫ ছেলের মধ্যে ২ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাজাকার- আবদুল মান্নান ও আনসার আলীর মাধ্যমে এ খবর পেয়ে পাকিস্তানি বাহিনী মিয়াজান মিয়ার বাড়ি আক্রমণ করে। তার দুই ছেলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ (৪২) ও খলিলুর রহমানকে (৩৮) রশি দিয়ে বেঁধে গ্রামের নির্জন চিতাখলা বা মরাজাঙ্গালে নিয়ে হত্যা করে। এ সময় ৭ দিনের প্রসূতি খলিলুর রহমানের স্ত্রী স্বামীকে বাঁচানোর আকুতি করলে পাকিস্তানি সৈন্যদের আঘাতে তিনি আহত হন।
একই সময় এ গ্রামে বেড়াতে আসা আবুল কাশেম (২৯) (কুরুইন, দেবীদ্বার, কুমিল্লা) পালাতে গেলে হত্যার শিকার হন। তাকে নিজ গ্রামে সমাহিত করা হয়। পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামের হরি ভূঁইয়ার বাড়ি আক্রমণ করে। তারা সেখান থেকে আলী আহাম্মদকে (৬০) ধরে নিয়ে চান্দিনা কাঠের পুলের কাছে গুলি করে হত্যা করে। তার সহোদর মোহাম্মদ আলী বাড়ির পেছনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পুকুরের পাড়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলিতে আহত হয়। ৩ মাস অসুস্থ থাকার পর সে মারা যায়। ৯ই সেপ্টেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এ গ্রামের প্রায় ২০ জন নিরীহ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়। এসব হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করে পার্শ্ববর্তী কাকিয়াচর গ্রামের রাজাকার আবদুল মান্নান এবং মাধবপুর গ্রামের বিডি মেম্বার আনসার আলী।
৩রা ডিসেম্বর এ গ্রামের রিকশাচালক মন্দির মিয়া (৫০) চান্দিনা উপজেলার কেরনখাল ব্রিজের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে মারা যায়। এসব শহীদের স্মরণে কোনো স্মৃতিসৌধ নেই, কবরগুলোও সংরক্ষণ করা হয়নি। [মামুন সিদ্দিকী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!