কোলা গণহত্যা (মুজিবনগর, মেহেরপুর)
কোলা গণহত্যা (মুজিবনগর, মেহেরপুর) সংঘটিত হয় আগস্ট মাসের শেষদিকে। এতে ৫ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারায়। পাকবাহিনীর সদস্যরা তাদের মেহেরপুর কলেজ ক্যাম্প থেকে প্রায়ই নাটুদা ক্যাম্পে সড়কপথে জিপ, ট্রাক বা গরুর গাড়িতে যাতায়াত করত। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের যাতায়াত কখন কিভাবে হয়, তা খেয়াল করতেন। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইউসুফ আলী (পিতা ইদু সেপাই)-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা বদরুল (পিতা সামসুল), গোলাম নবী (পিতা ভিকু) ও আরো ৪-৫ জন আনারুল (পিতা মেহের আলী), শাহাদত হোসেন (পিতা লালচাঁদ মণ্ডল)-এর সহযোগিতায় কোলা গ্রামের কদবেলতলার রাস্তায় মাইন পুঁতে রাখেন। গ্রামের লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়া ও গোপন জায়গায় লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে। ঘটনার দিন দুপুর বেলা ২৫-৩০ জন পাকসেনা নাটুদা ক্যাম্প থেকে ট্রাকে করে কদবেলতলা দিয়ে মেহেরপুর ক্যাম্পে ফেরার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ব থেকে পুঁতে রাখা মাইনের বিস্ফোরণ ঘটে এবং সকলে হতাহত হয়। এ সংবাদ পেয়ে মেহেরপুর ক্যাম্পের পাকসেনারা কোলা গ্রামের ওপর আক্রমণ এবং গণহত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন কুখ্যাত -রাজাকার- মহাতাব খাঁ, আওলাদ হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, মহাজনপুরের আবু বক্কর ও তার দুই ছেলে রাফি ও কাফি প্রমুখের সহযোগিতায় ভোর না হতেই হানাদার বাহিনী চারদিক থেকে গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা গ্রামের কয়েকজনকে সিপাই পাড়ায় চোখ বেঁধে একত্রে জড়ো করে লাইনে দাঁড় করায়। তাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর জানতে চায়। কোনো তথ্য না পেয়ে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে তাদের হত্যা করে। এতে ৫ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারান। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনীর নির্দেশে গ্রামের লোকজন নিহতদের ৪ জনকে সিপাই পাড়ার মাঠে এক গর্তে এবং মো. ইমারদ্দিন (৬০)-কে গ্রামের গোরস্থানে সমাহিত করে। এ গণহত্যার কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। কোলা গণহত্যায় শহীদ ৫ জন হলেন- মো. হজরত আলী (পিতা সফেতুল্লাহ, মহাজনপুর), মো. তাহের আলী (পিতা নজর আলী, মহাজনপুর), মাবুদ শেখ (পিতা ইসাহক শেখ, মহাজনপুর), মো. হাফিজদ্দিন (পিতা দিদার সিপাই, কোলা) এবং মো. ইমারুদ্দিন (কোলা)। [মো. জামালউদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড