কেশবপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (কেশবপুর, যশোর)
কেশবপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (কেশবপুর, যশোর) পরিচালিত হয় ৬ই ডিসেম্বর। এতে রাজাকার বাহিনী ও পাকহানাদার বাহিনী কেশবপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
২৫শে মার্চের পর যশোর জেলা পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার পর কেশবপুর উপজেলা সদরের পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ক্যাম্পের কমান্ডার ছিল কেশবপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিন উদ্দিন মাস্টার ও ডেপুটি কমান্ডার ছিল মুন্সি দীন মোহাম্মদ। আমিন উদ্দিন মাস্টারের নেতৃত্বে এখানে এক শক্তিশালী রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। ক্যাম্পে অন্য রাজাকারদের মধ্যে ছিল পোস্টমাস্টার মো. ইজাহার আলী, মুজিবুর রহমান (চিংড়া), পরশ উল্লাহ (চিংড়া), কাওছার আলী (দোরমুটিয়া), আবুল হোসেন (বারদার) প্রমুখ। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী ক্যাম্পের ভেতরে দুটি শ্রেণিকক্ষে নির্যাতনকেন্দ্র গড়ে তোলে। এখানে তারা ৪৫ জন লোককে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করে। রাজাকার কাওসার আলী (দোরমুটিয়া) ও আবুল হোসেন (কন্দর্পপুর) নির্যাতনকেন্দ্রে জল্লাদের দায়িত্ব পালন করে। রাজাকাররা বহু সাধারণ মানুষকে ধরে এ ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করে এবং মঙ্গলকোট বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে। এ ক্যাম্পে রাজাকারদের অত্যাচার শুরু হলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। অনেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যায়।
এ-সময় কেশবপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসেন। পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের অত্যাচার-নির্যাতনের খবর জানতে পেরে তাঁরা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। কেশবপুর থানার যুদ্ধকালীন কমান্ডার আনিছুর রহমান খাঁনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে মনিরামপুর থানার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে ১৬টি রাইফেল ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে ৬ই ডিসেম্বর তারা চারদিক থেকে কেশবপুর বালিকা বিদ্যালয় আক্রমণ করলে রাজাকার বাহিনী ও পাকহানাদার বাহিনী কেশবপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ অপারেশনে যে-সকল মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন, তাঁরা হলেন- মো. আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, কালিপদ মণ্ডল, মো. আব্দুল মতলেব, মো. লিয়াকত আলী শেখ, আদিত্য কুমার দত্ত, কাজী রফিকুল ইসলাম, মো. আব্দুল খালেক, শ্রীমল কুমার বিশ্বাস, মো. কায়েম উদ্দিন, আবু হোসেন সরকার, মো. আব্দুস সাত্তার, এস এম যাজর আলী শেখ, কৃষ্ণপদ দাস, মো. ইমান আলী প্রমুখ। [ঈশিতা আক্তার মুক্তি]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড